সরকারি হাসপাতালে স্থাপিত বিপুলসংখ্যক অক্সিজেন প্লান্টগুলো তদারকির কোনো জনবল নেই। ফলে ওসব অক্সিজেন প্লান্টের অনেকগুলো অকেজো হয়ে পড়েছে। আর অচল হওয়ার পথে অনেক প্লান্ট। তাছাড়া কিছু কিছু প্লান্ট চালুই করা হয়নি। আর যেসব প্লান্ট চালু রয়েছে সেগুলো কে তাদরকি করবে তা কেউ জানে না। কারণ এ ব্যাপারে সরকার থেকে কোনো জনবল নিয়োগ করা হয়নি। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা মহামারির সময় ৯৯টি অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট স্থাপন করা। ১০টির মতো পান্ট কখনো চালু করা হয়নি। মূলত করোনা মহামারির সময় দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের সংকট দেখা দিলে কভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আওতায় সরকার ওসব অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট স্থাপন করে। গত বছর ডিসেম্বরে শেষ হয়েছে ওই প্রকল্পের মেয়াদ। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, করোনা মহামারীকালে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ৯৯টি অক্সিজেন প্লান্টের মধ্যে সরকার নিজস্ব অর্থায়নে ৪০টি স্থাপন করে। তাতে ৯২ কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয় হয়। আর এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মাধ্যমে কভিড-১৯ সংক্রান্ত সহায়তা তহবিল থেকে ৫১ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৯টি এবং জাতিসংঘের অর্থায়নে ৯৭ কোটি পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে ৩০টি অক্সিজেন প্লান্ট স্থাপন করা হয়। হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট থাকলে তা থেকে সরাসরি অক্সিজেন উৎপন্ন হয়। সেক্ষেত্রে সিলিন্ডার বা তরল অক্সিজেন সরবরাহের প্রয়োজন হয় না। অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট দুই পদ্ধতিতে কাজ করে। প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে বাতাস থেকে অক্সিজেন আলাদা করা যায়। আবার বাতাসকে প্রসারিত করে অক্সিজেন আলাদা করা যায়। একটি পিএসএ, অন্যটি ভিএসএ। পরিকল্পনা ছিলো একটি অক্সিজেন প্লান্ট থেকে প্রতি মিনিটে ৫০০ লিটার পর্যন্ত অক্সিজেন উৎপাদন করা। পরে ওই অক্সিজেন দিয়ে কমপক্ষে ৫০ রোগীকে মিনিটে ১০ লিটার নিরবচ্ছিন্ন অক্সিজেন সরবরাহ করা।
সূত্র জানায়, হাসপাতালগুলো থেকে চাহিদা না নিয়েই মন্ত্রণালয় থেকে চাহিদা তৈরি করে অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট বসানো হয়। মন্ত্রণালয় কোনো রকমে প্রকল্প পাস করিয়ে নিজেদের মতো করে তা দেয়। তাতে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় সীমিত টাকার অপচয় হয়েছে। বাংলাদেশে মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে স্থাপন করা অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্টটি এক দিনও চালু করা হয়নি। আর ঢাকা মেডিকেলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় রোগীর চাহিদা অনুযায়ী অক্সিজেন সরবরাহ করা হয়। তাই ওই প্লান্ট তেমন কোনো কাজে আসেনি। আর ঢাকার বাইরে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স ও ডুমুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও প্রায় একই অবস্থা। মূলত ইআরপিপি প্রকল্পপত্র তৈরির সময় লোকবলের বিষয় উল্লেখ থাকার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। থাকলে এতো দিনে পদ সৃষ্টি ও লোকবল নিয়োগ করা সম্ভব হতো। কিন্তু প্রকল্পপত্র ত্রুটিপূর্ণ থাকায় তা সম্ভব হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, বর্তমানে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে ২৫০ শয্যা লালমনিরহাট হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা মেহেরপুর হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা ঠাকুরগাঁও হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা ফেনী হাসপাতাল, বগুড়া সদর হাসপাতাল, সুনামগঞ্জ জেলা হাসপাতাল, লক্ষ্ণীপুর সদর হাসপাতাল, ৩০০ শয্যা নারায়ণগঞ্জ হাসপাতাল, ২৫০ শয্যা ব্রাহ্মণবাড়িয়া হাসপাতাল, খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্স, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ওসব হাসপাতালে অক্সিজেন জেনারেটর প্লান্ট ২৪ ঘণ্টা চালানোর জন্য এবং রক্ষণাবেক্ষণের জন্য লোক দরকার। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে ওসবের কোনোটাই করা হয়নি।
এদিকে হাসপাতালে অত্যাবশ্যকীয় ওষুধের মতো অক্সিজেনের প্রয়োজন। অপরিণত নবজাতকের অক্সিজেন লাগতে পারে। ফুসফুসের সমস্যা, বড় ধরনরে অস্ত্রোপচার ও প্রসবের সময় অক্সিজেন লাগতে পারে। সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ টন অক্সিজেন লাগে বলে জানা যায়। সরকার অক্সিজেন খাতে বিনিয়োগ করলেও বায়ো-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে তেমন বিনিয়োগ নেই। অথচ ওসব যন্ত্রপাতি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণে বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার ও কারিগরিভাবে দক্ষ কর্মী লাগে। বাংলাদেশে এর ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে। অক্সিজেন প্লান্টে বিদ্যুৎ কোথা থেকে আসবে তার কোনো পরিকল্পনা নেই। অথচ অনেক ক্ষেত্রেই অক্সিজেন প্লান্টগুলো বিপজ্জনক। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে সেখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া এর বড় খরচ রয়েছে। ফলে অনেকেই তা ব্যবহার করে না। তাতে অনেক হাসপাতালে স্থাপিত প্লান্টগুলো পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. আবু হোসেন মো. মঈনুল আহসান জানান, এ বিষয়গুলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের জানা নেই। ইআরপিপি প্রকল্প পরিচালক এ বিষয়ে বলতে পারবেন। প্লান্টগুলোর সেন্টার লাইনের সঙ্গে সংযোগ নিয়ে কিছু সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া সেগুলোর মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে।