বর্ধিত গেট পাস ফি স্থগিত করার সিদ্ধান্তে চট্টগ্রাম বন্দরে ফের স্বাভাবিক গতি ফিরেছে। যানবাহন মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের পৃথক কর্মসূচি প্রত্যাহারের পর সোমবার (২০ অক্টোবর) সকাল থেকেই বন্দরের কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়েছে। আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে দেখা দিয়েছে স্বস্তির নিঃশ্বাস।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, যানবাহনের গেট পাস ফি ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা এবং সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের জন্য ১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১৫ টাকা নির্ধারণ করায় গত সপ্তাহজুড়ে চলছিল কর্মবিরতি। এতে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়। তবে রোববার (১৯ অক্টোবর) দুপুরে যানবাহন মালিকদের সঙ্গে বৈঠকে বর্ধিত ফি স্থগিত করা হয়। সন্ধ্যায় একই সিদ্ধান্ত আসে সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও।
বন্দর সচিব মো. ওমর ফারুক সাংবাদিকদের বলেন, “আমাদের হাতে গেজেট থাকায় তাৎক্ষণিকভাবে পরিবর্তন সম্ভব নয়। তবে পরিবহন শ্রমিকদের গুরুত্ব বিবেচনায় আমরা গেট পাস ফি স্থগিত করেছি। ফলস্বরূপ রোববার সন্ধ্যা থেকেই বন্দরের কার্যক্রম ধীরে ধীরে সচল হতে শুরু করে।”
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ১৪ সেপ্টেম্বর হঠাৎ করে প্রকাশিত গেজেটে বন্দরের সেবা মাশুল গড়ে ৪১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়, যা কার্যকর হয় ১৫ অক্টোবর থেকে। বিদেশি অপারেটরদের সুবিধা দিতে এই মাশুল বাড়ানো হয়েছে বলেও অনেকে অভিযোগ করছেন। এর প্রতিবাদে গাড়ি মালিক ও সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারী সংগঠনগুলো আন্দোলনে নামে।
আন্দোলনের প্রভাবে বন্দর কার্যক্রমে ধস নামে। গড়ে যেখানে প্রতিদিন ৩ হাজার কনটেইনার খালাস হয়, সেখানে রোববার সকাল ৮টা পর্যন্ত খালাস হয়েছে মাত্র ২৯৫ কনটেইনার। একই সময়ে রপ্তানি কনটেইনার ডিপো থেকে এসেছে মাত্র ৭৮১ একক, যেখানে স্বাভাবিক সময়ে এটি দাঁড়ায় প্রায় ২ হাজার।
বেসরকারি ডিপো মালিক সমিতির মহাসচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, “গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় শনিবার ও রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত ডিপো থেকে পণ্য পাঠানো সম্ভব হয়নি। তবে কর্মসূচি প্রত্যাহার হওয়ায় আমরা আশা করছি রপ্তানি কার্যক্রম দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”
চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী সংগঠনগুলোর মতে, দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯৯ শতাংশ এই বন্দরকেন্দ্রিক। ফলে এখানে সামান্য অচলাবস্থাও দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। তাই বন্দর কার্যক্রম সচল হওয়াকে বড় স্বস্তি হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা।
সিঅ্যান্ডএফ কর্মচারীদের সংগঠনও জানায়, তারা রোববার রাতেই কর্মসূচি প্রত্যাহার করেছেন। সংগঠনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক মোবারক আলী বলেন, “বর্ধিত ফি স্থগিত করায় আমাদের দাবির প্রতিফলন ঘটেছে। আমরা বন্দর সচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসে সিদ্ধান্ত জানার পরপরই কর্মসূচি তুলে নিই।”
যদিও স্থগিত হওয়া এই সিদ্ধান্তগুলো চূড়ান্ত নয়, তবে আপাতত দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দরে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে আসায় স্বস্তি ফিরেছে ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্ট সকল মহলে।