একনেকে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:০১ পিএম
একনেকে ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩ প্রকল্প অনুমোদন

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক) ১ হাজার ৯৮৮ কোটি টাকার ১৩টি উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে। মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান উপদেষ্টা ও একনেক চেয়ারপারসন ড. মুহাম্মদ ইউনূস সভাপতিত্ব করেন। অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মধ্যে নতুন তিনটি, সংশোধিত সাতটি এবং ব্যয় না বাড়িয়ে মেয়াদ বৃদ্ধির তিনটি প্রকল্প রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, অনুমোদিত প্রকল্পগুলোর মোট ব্যয় ১ হাজার ৯৮৮ কোটি ৭ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ১ হাজার ৮৮৫ কোটি ৭ লাখ টাকা, ঋণ ৫৩ কোটি ২ লাখ টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন ৫০ কোটি টাকা। বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রকল্প ছাড়াও একটি প্রস্তাবিত প্রকল্প ফেরত পাঠানো হয় পুনর্গঠনের জন্য।

সভায় আলোচিত “জলবায়ু সহনশীল জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্প (সিআরএলইপি)” অনুমোদন পায়নি। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান জানান, প্রকল্পটিতে টেকসই জীবিকা উন্নয়নের চেয়ে অবকাঠামো নির্মাণে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল। তার আপত্তির পর সিদ্ধান্ত হয়, হাওর অঞ্চলের বাস্তব চাহিদা অনুযায়ী প্রকল্পটি পুনর্গঠন করে পুনরায় উপস্থাপন করা হবে। তিনি বলেন, “হাওরে অতিরিক্ত রাস্তা ও ভবন নির্মাণ বন্যার পানি প্রবাহে বাধা দিতে পারে, এতে কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হয়।”

পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়নেও দেখা যায়, প্রকল্পের দুই-তৃতীয়াংশ অর্থ ব্যয় নির্ধারিত ছিল সড়ক, বাজার, ঘাট ও আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণে। কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী জীবিকা ও প্রশিক্ষণ উপাদান বাড়ানোর প্রস্তাবটি চূড়ান্ত প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়নি। প্রকল্পটির প্রস্তাবিত ব্যয় ছিল ১ হাজার ২৬৮ কোটি ৮০ লাখ টাকা, যেখানে সরকার ৩০৫ কোটি, ইফাদ ঋণ হিসেবে ৮৫৪ কোটি এবং ডেনমার্কের ডানিডা সংস্থা ১০৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা অনুদান দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

একনেক সভায় অনুমোদিত ১৩টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে—কক্সবাজারে কৃষি-খাদ্য ব্যবস্থা রূপান্তরের মাধ্যমে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি, গ্রামীণ কাঁচা রাস্তা টেকসইকরণ, খুলনা বিভাগের পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন, গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অভ্যন্তরীণ রাস্তা ও ফুটপাত উন্নয়ন, উত্তরা লেক উন্নয়ন প্রকল্প, ক্যানবেরায় বাংলাদেশ দূতাবাস ভবন নির্মাণ, কিশোরগঞ্জ থেকে পাকুন্দিয়া-মির্জাপুর টোক সড়ক উন্নয়ন, বিএসটিআই পরীক্ষাগার আধুনিকায়ন, ঘোড়াশাল তৃতীয় ইউনিট পুনঃশক্তিকরণ, পাবনার মানসিক হাসপাতালকে আন্তর্জাতিক মানের ইনস্টিটিউটে রূপান্তর এবং রেলওয়ের পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলের লেভেল ক্রসিং গেট পুনর্বাসন প্রকল্প।

সভায় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল, স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বিদ্যুৎ ও সেতু উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া, স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম (বীর প্রতীক) এবং পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।

একনেক সূত্র জানায়, হাওর অঞ্চলের সিআরএলইপি প্রকল্পটি বাতিল নয়, বরং টেকসই জীবিকা ও প্রশিক্ষণ অংশ জোরদার করে পুনর্গঠন শেষে পুনরায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের মতে, “টেকসই উন্নয়নের পথে যেতে হলে প্রকৃতি ধ্বংস নয়, বরং প্রকৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জীবনধারা গড়ে তুলতে হবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে