বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো টেকসই নয়: আমীর খসরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:০৬ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া অর্থনৈতিক কাঠামো টেকসই নয়: আমীর খসরু

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ছাড়া টেকসই অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করতে না পারলে দেশের আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা আসবে না।”  

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) রাজধানীর গুলশানে হোটেল আমারিতে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) আয়োজিত ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার জন্য আবশ্যক’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ মন্তব্য করেন তিনি। অনুষ্ঠানে পিআরআই’র ভাইস চেয়ারম্যান ড. সাদিক আহমেদ সভাপতিত্ব করেন এবং মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থার প্রিন্সিপাল ইকোনমিস্ট ড. আশিকুর রহমান।  

আমীর খসরু বলেন, “বিএনপি সরকারে থাকতে কখনোই রাজনৈতিক বিবেচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকে নিয়োগ দেয়নি। আমরা ব্যাংকিং ডিভিশন (আর্থিক বিভাগ) বন্ধ করে দিয়েছিলাম, কারণ এর কোনো প্রয়োজন ছিল না। পরবর্তীতে সেটি ফেরত এনে নানা জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “অর্থনৈতিক কাঠামো শক্ত করতে হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে আইনি, প্রাতিষ্ঠানিক ও প্রশাসনিক দিক থেকে স্বাধীন করতে হবে। একইসঙ্গে গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগের ক্ষেত্রেও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে।”  

তিনি মনে করেন, শুধুমাত্র সংস্কার দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে কার্যকর করা যাবে না। “সংস্কারের নামে অনেক আলোচনা হয়, কিন্তু স্বাধীনতা না দিলে এর সুফল আসবে না,” বলেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী। তার মতে, দেশের অর্থনৈতিক দুরবস্থার অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাংক খাতের দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা এবং পুঁজিবাজারের দুর্বলতা।  

বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, “বাংলাদেশে পুঁজিবাজার বলতে এখন কিছুই নেই। ব্যাংকগুলো স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দিচ্ছে। এতে ব্যাংক খাত ঝুঁকিতে পড়ছে। ব্যাংকগুলো এখনো টিকে আছে, এটা বিস্ময়কর বিষয়।” তিনি আরও বলেন, “ক্যাপিটাল মার্কেট উন্নত না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যতই সংস্কার করুক, কোনো ফল আসবে না।”  

অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়াতে অটোমেশন বা স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থার ওপর জোর দেন তিনি। “ভবিষ্যতের অর্থনীতি ক্যাশলেস সোসাইটি। দুর্নীতি কমাতে যত কম সরাসরি উপস্থিতি থাকবে, স্বচ্ছতা তত বাড়বে,” মন্তব্য করেন আমীর খসরু।  

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিএনপি সরকারে এলে আমরা ১৮ মাসে এক কোটি চাকরি সৃষ্টি করব। এটা উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য হলেও বাস্তবায়নযোগ্য। আইটি, দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ এবং বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির মাধ্যমে এই কর্মসংস্থান তৈরি করা হবে।”  

আলোচনায় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই সরকার, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ আখতার হোসেন, ব্যবসায়ী নেতা সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর ও অর্থনীতিবিদ ড. এম. মাসরুর রিয়াজসহ অন্যরা অংশ নেন। সবাই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা নিশ্চিতের পক্ষে বিভিন্ন পরামর্শ দেন।  

পিআরআই চেয়ারম্যান ড. জাইদী সাত্তার অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে বলেন, “অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নীতিনির্ধারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতা অপরিহার্য। সরকারের উচিত বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা।” 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে