জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হোসাইন হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তারা দোষ স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করায় মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তাদের জবানবন্দি রেকর্ডের আবেদন করেছেন।
আদালতে হাজির করা তিনজন হলেন নিহত জুবায়েদের ছাত্রী বার্জিস শাবনাম বর্ষা (১৮), তার প্রেমিক মাহির রহমান (১৯) এবং মাহিরের বন্ধু ফারদীন আহম্মেদ আয়লান (২০)। বেলা ৩টা ৫০ মিনিটের দিকে তাদের ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়।
এর আগে সকাল ১১টার দিকে নিহতের ভাই এনায়েত হোসেন সৈকত বাদী হয়ে বংশাল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় এ তিনজন ছাড়াও অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
পুলিশ জানায়, রোববার (১৯ অক্টোবর) বিকেল ৪টা ৪৫ মিনিটের দিকে পুরান ঢাকার আরমানিটোলার নূরবক্স লেনের ‘রৌশান ভিলা’ নামের বাসায় বর্ষাকে প্রাইভেট পড়াতে যান জুবায়েদ। কিছু সময় পরই তাকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। ভবনের তৃতীয় তলার সিঁড়িতে রক্তাক্ত অবস্থায় পাওয়া যায় তার মরদেহ।
ঘটনার পর ওই ছাত্রী বর্ষাই প্রথমে খবরটি দেন। সন্ধ্যা ৫টা ৪৮ মিনিটের দিকে তিনি জুবায়েদের এক বিশ্ববিদ্যালয় সহপাঠীকে মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে জানান, “জুবায়েদ স্যার খুন হয়ে গেছেন, কে বা কারা খুন করেছে জানি না।” পরে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভে নামে।
পুলিশ তদন্তে জানতে পারে, পড়ানোর সূত্রে জুবায়েদের সঙ্গে বর্ষার ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয়। তবে বর্ষার সঙ্গে আগে থেকেই মাহির রহমানের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। এই সম্পর্ক নিয়ে বিরোধ থেকেই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার এস এন মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “এটি মূলত ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতা থেকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডে রূপ নেয়।”
পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, মাহিরকে বর্ষা বলেন, জুবায়েদকে সরিয়ে না দিলে তিনি তার হতে পারবেন না। এরপর মাহির তার বন্ধু আয়লানকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার দিন বিকেলে বর্ষার বার্তা পেয়ে মাহির ও আয়লান বাসার নিচে অবস্থান নেয়। জুবায়েদ পৌঁছানোর পর তাদের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে মাহির ধারালো চাকু দিয়ে জুবায়েদের গলায় আঘাত করে।
আঘাত পাওয়ার পর রক্তাক্ত অবস্থায় জুবায়েদ সিঁড়ি বেয়ে ওপরে ওঠেন এবং কয়েকটি দরজায় সাহায্য চান। কিন্তু কেউ দরজা খোলেনি। তৃতীয় তলায় বর্ষার দরজায় কড়া নাড়লেও সে সাহায্য করেনি বলে জানায় পুলিশ। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে ঘটনাস্থলেই মারা যান জুবায়েদ।
মাহিরের মা নিজে থানায় গিয়ে ছেলেকে হস্তান্তর করেছেন এমন তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠলে পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “এটি পুলিশের কৌশল ছিল। পরিবারের ওপর চাপ প্রয়োগ করে আসামিকে আত্মসমর্পণে বাধ্য করা হয়েছে।”
এই হত্যাকাণ্ডে গোটা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শোক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা দ্রুত বিচার দাবি করেছেন।