নীলফামারীর সৈয়দপুর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের অনিয়ম ও দূর্নীতির সাথে জড়িত লায়ন্স ক্লাব সভাপতি জাকির হোসেন মেননের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন স্কুল শিক্ষকরা। ২১ অক্টোবর লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজ হল রুমে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন ছিল। এতে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সিনিয়র শিক্ষক কাজী আসাদুজ্জামান স্বাধীন। তিনি বলেন,লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ,সৈয়দপুরের চলমান অনিয়ম ও দূর্নীতির প্রতিবাদে লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুর (৩১৫৩২) বাংলাদেশ এর প্রেসিডেন্ট ও যুবদল নেতা মোঃ জাকির হোসেন মেননের স্বেচ্ছাচারিতার প্রতিবাদে এ সংবাদ সম্মেলন।
গত ৫ আগষ্ট ফ্যাসিষ্ট সরকার পতনের পর,গত ৮ আগষ্ট লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুরের পাসওয়ার্ড হ্যাক করার মাধ্যমে জাকির হোসেন মেনন নিজেকে লায়ন্স ক্লাল অব সৈয়দপুরের ক্লাব প্রেসিডেন্ট দাবি করেন। তিনি ৪২ জন ক্লাব সদস্যকে ড্রপ আউটের মাধ্যমে পরিবার তান্ত্রিক ক্লাব তৈরি করেন। এছাড়াও লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের কর্তৃত্ব হাতে নিয়ে নানা রকম দুর্নীতি করে আসছেন।
গত ২৪ সেপ্টেম্বর লায়ন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ, সৈয়দপুরের পরিচালনা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি মোঃ শফিয়ার রহমান সরকার ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মোঃ মসিউর রহমান এর অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এক উদ্ভুত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। ওই উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন, সৈয়দপুর থানার ওসি, সুশীল সমাজ,বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ, অভিভাবক ও ছাত্র-শিক্ষকগণের সমন্বয়ে লায়ন্স অডিটরিয়ামে দীর্ঘ আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমে লায়ন্স ক্লাব অব সৈয়দপুর ৩১৫৩২ এর প্রেসিডেন্ট ও যুবদল নেতা মোঃ জাকির হোসেন মেনন দুর্নীতিপরায়ন প্রাক্তন পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি মোঃ শফিয়ার রহমান সরকার ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। ক্লাব প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারি ও ট্রেজারারসহ অন্যান্য কর্মকর্তা, সদস্যগণের উপস্থিতি ও সকলের সম্মতিক্রমে উপজেলা নিবাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) এবং মজিবর রহমান চৌধুরীকে অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ঘোষণা করা হয়। যা বিভিন্ন প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক এবং সোসাল মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়। সভাস্থলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ঘোষণা দেন যে, ঘোষিত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বৈধতার জন্য গত ২৯ সেপ্টেম্বর সময় নির্ধারণ করেন। ওই দিন সভাস্থলে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন,থানার ওসি,সুশীল সমাজ, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতৃত্ববৃন্দ,অভিভাবক ও ছাত্র-শিক্ষকগণ উপস্থিত হলেও ক্লাব কর্তৃপক্ষ সকলকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সভায় অনুপস্থিত থাকেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ক্লাব প্রেসিডেন্ট এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে, তিনি বলেন তার বাবা অসুস্থ থাকার কারণে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তাই সভায় উপস্থিত হতে পারছেন না। তিনি রেজুলেশন করতে এবং সুধী সমাজের স্বাক্ষর গ্রহণ করতে বলেন। এছাড়াও তিনি আরো বলেন, ৫ অক্টোবর স্বাক্ষর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু আজ অবধী স্বাক্ষর না করে,কালক্ষেপন করছেন। গত ১২ অক্টোবর সুধী সমাজ,রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষিকা ও কর্মচারীগণকে বলেন যে,উপজেলা নিবাহী অফিসার নূর-ই-আলম সিদ্দিকী (ভারপ্রাপ্ত) সভাপতি এবং মজিবর রহমান চৌধুরীকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ করতে হবে মর্মে তারা আশ্বস্থ করেন।
২০ অক্টোবর পর্যন্ত তারা সময় নেন। কিন্তু ক্লাব প্রেসিডেন্ট সুধী সমাজ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দগণকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সময় অতিবাহিত করেন।
গত ১৯ অক্টোবর অনিয়ম ও দূর্নীতির বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি এডিসি (শিক্ষা), এএসপি (সৈয়দপুর সার্কেল) নীলফামারী, উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার, অত্র প্রতিষ্ঠানে তদন্তের জন্য আসেন। তদন্ত কমিটি প্রতিষ্ঠানে আসার পূর্বেই প্রাক্তন সভাপতি শফিয়ার রহমান সরকারকে ওই দিন অত্র প্রতিষ্ঠানে হাজির হতে বলেন, কিন্তু তিনি অসুস্থ্যর অজুহাতে অত্র প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত হননি। তদন্ত কমিটি তাৎক্ষণিকভাবে অত্র প্রতিষ্ঠানে হিসাব রক্ষক জিল্লুর রহমানের কাছে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি চাইলে তিনি তথ্য প্রদান করতে অস্বীকার করেন এবং তিনি বলেন, ক্লাব প্রেসিডেন্ট তথ্য প্রদান করতে নিষেধ করেছেন। এমতাবস্থায় আজ পর্যন্ত সিগনেটরী অথরিটির অভাবে অত্র প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। ১৭০ জন শিক্ষক-কর্মচারীর বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে। বেতন ভাতার অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করেও তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। এমতাবস্থায় আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে সুষ্ঠ সমাধানের জন্য প্রশাসন, সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও অভিভাবকগণসহ সৈয়দপুরবাসীর কাছে আমরা সহযোগিতা কামনা করছি।