বাংলাদেশি পাসপোর্ট

মানোন্নয়নে পদক্ষেপ জরুরি

এফএনএস | প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৩১ এএম
মানোন্নয়নে পদক্ষেপ জরুরি

আন্তর্জাতিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশি পাসপোর্ট অত্যন্ত দুর্বল অবস্থানে রয়েছে। যুক্তরাজ্যভিত্তিক হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের গ্লোবাল সূচকে ১০৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০০তম, যা এটিকে বিশ্বের সপ্তম দুর্বলতম পাসপোর্ট হিসেবে চিহ্নিত করেছে। ২০১৮ সালে যেখানে ৪৩টি দেশে ভিসা অন অ্যারাইভাল সুবিধা ছিল, তা এখন কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৮টিতে। এই পতন শুধু পরিসংখ্যান নয়, বরং নাগরিকদের বাস্তব ভোগান্তির প্রতিফলন। একসময় সহজলভ্য গন্তব্য যেমন থাইল্যান্ড, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর—এখন বাংলাদেশিদের জন্য কঠিন হয়ে উঠেছে। ভিসা প্রক্রিয়া জটিল, সময়সাপেক্ষ এবং প্রত্যাখ্যাত হওয়ার হারও বেড়েছে। থাইল্যান্ডের ভিসা যেখানে আগে ৭-১০ দিনে মিলত, এখন তা ৪৫-৫০ দিন পর্যন্ত গড়াচ্ছে। এতে ব্যক্তিগত ভ্রমণ, ব্যবসা ও শিক্ষাগত উদ্দেশ্যে বিদেশ যাত্রা মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর মতে, পর্যটননির্ভর দেশগুলোও বাংলাদেশি দর্শনার্থীদের ব্যাপারে এখন অনেক বেশি কঠোর। অনেক সময় ভিসা আবেদনকারীদের অতিরিক্ত কাগজপত্র জমা দিতে বলা হয়, যা প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তোলে। এমনকি যেসব আবেদনকারী আগে একাধিকবার ভ্রমণ করেছেন, তারাও এখন প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন। এতে করে আন্তর্জাতিক যোগাযোগ, ব্যবসায়িক সম্পর্ক এবং শিক্ষাবিনিময় কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই সংকটের পেছনে রয়েছে কিছু বাংলাদেশির বিদেশে গিয়ে আইন লঙ্ঘন, ভিসার মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে অবস্থান এবং অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়া। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা আন্তর্জাতিক মহলে আস্থার সংকট তৈরি করেছে। অনেক দেশ বাংলাদেশি নাগরিকদের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করছে, যা পুরো জাতির ভাবমূর্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। পাসপোর্টের মান শুধু ভ্রমণের সুবিধা নয়, এটি দেশের ভাবমূর্তি ও বিশ্বস্ততার প্রতীক। এর অবনতি মানে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাওয়া। তাই এই সংকট মোকাবেলায় প্রয়োজন অভ্যন্তরীণ সংস্কার ও নাগরিকদের আচরণে পরিবর্তন। সরকারকে কূটনৈতিকভাবে সক্রিয় হয়ে গন্তব্য দেশগুলোর আস্থা পুনরুদ্ধারে কাজ করতে হবে। দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোকে আরও কার্যকরভাবে ভিসা প্রক্রিয়া সহজ করতে উদ্যোগ নিতে হবে। একই সঙ্গে নাগরিকদের বিদেশে আইন মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে এবং অবৈধ অভিবাসন ও জাল কাগজপত্রের ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। এছাড়া পাসপোর্ট ও ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, তথ্য যাচাইয়ের স্বচ্ছতা এবং আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগের মাধ্যমে সেবার মান বাড়ানো জরুরি। ভিসা প্রত্যাখ্যানের কারণগুলো বিশ্লেষণ করে তা সমাধানে বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করা যেতে পারে। বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশিদের আচরণ ও আইন মানার বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রচারণা চালানো দরকার।