উচ্চমানের প্রোটিন কি অধরাই থেকে যাবে?

এফএনএস | প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৪:৩২ এএম
উচ্চমানের প্রোটিন কি অধরাই থেকে যাবে?

শরীরে আমিষের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। দেহের টিস্যু ও অঙ্গের গঠন কার্যকারিতা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য আমিষ খুবই প্রয়োজন। প্রকৃতিতে ২০টি অ্যামিনো অ্যাসিড রয়েছে, যা আমাদের দেহে বিভিন্ন ধরনের আমিষ গ্রহণে সাহায্য করে। আমিষ আমাদের দেহে পেশি গঠনের পাশাপাশি এনজাইম, নিউরোট্রান্সমিটার ও হরমোন তৈরি করতে অ্যামাইনো অ্যাসিড ব্যবহার করে। প্রাণিজ আমিষ মানবদেহে সহজে শোষিত হয়, তাই এটি সম্পূর্ণ আমিষ। অন্যদিকে উদ্ভিজ্জ আমিষকে অসম্পূর্ণ আমিষ হিসেবে ধরা হয়। যেসব খাবারে পর্যাপ্ত আমিষ নেই, সেসব খাওয়ার পর আমাদের দ্রুত খিদে পায় ও ক্লান্তি লাগে। এ ছাড়া দেহে পর্যাপ্ত আমিষের চাহিদা পূরণ না হলে ঠিকমতো বেড়ে ওঠা কঠিন হয়ে পড়ে। চুলপড়ার সমস্যা, গায়ের রং ফ্যাকাশে, মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, পায়ের গোড়ালিতে পানি জমে ফুলতে থাকার মতো নানা অসুবিধা দেখা দেয়। কমে যায় রোগ প্রতিরোধক্ষমতা। আমিষযুক্ত খাবার রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা স্থির রাখতে, হরমোনের ভারসাম্য আর ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে থাকে। কিন্তু আমাদের দেশে প্রতি আটজনের মধ্যে একজনের, অর্থাৎ ২ কোটি ১০ লাখের বেশি মানুষের পুষ্টিকর খাবার কেনার সামর্থ্য নেই। আর সুষম খাবার কেনার সামর্থ্য নেই দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের। এ কারণে তারা ভাত, রুটি ও কম পুষ্টিকর খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। আর্থিকভাবে সামর্থ্য না থাকায় বিপুলসংখ্যক মানুষ প্রয়োজনীয় অনুপুষ্টিকণার ঘাটতির মধ্যে রয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালীন ছেলে, মেয়ে ও বৃদ্ধদের পুষ্টির চাহিদা মেটানোর বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব পাচ্ছে না। কম বয়সী মেয়েরা পুষ্টি সমস্যায় ভুগছে। এর সঙ্গে তারা বাল্যবিবাহ, গর্ভধারণের মতো স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা যতই প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার কথা বলুন না কেন, মরিচ ডলে বড় এক থালা ভাত খেতে পারলেই যেন তৃপ্তির সন্ধান পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক কারণেই মাছ-মাংসের দিকে হাত বাড়াতে পারে না দরিদ্র মানুষ। এ কারণেই বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ করা মাত্রার নিচে রয়েছে আমাদের প্রোটিন গ্রহণের পরিমাণ। জনকল্যাণমুখী রাজনীতি, গ্রামীণ জীবনের চাহিদা-জোগানে সামঞ্জস্য রাখা, উৎপাদিত খাদ্য বা পণ্যের ন্যায্য দাম নির্ধারণ করা, প্রয়োজনে দরিদ্র মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো—এ ধরনের পরিকল্পনা নেওয়া হলে দরিদ্র মানুষ বাঁচবে। তখন তাকে যদি বলা হয়, দিনে কতটা প্রোটিন খাওয়া উচিত, তবেই সে ব্যাপারটা বুঝতে পারবে। প্রোটিন কেনার মুরোদ যখন নেই, তখন শরীরে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তার পরামর্শ যদি কেউ দেয়, তাহলে তা হবে অরণ্যে রোদন। পাশাপাশি দেশের মানুষের পুষ্টি ও খাদ্য নিয়ে জ্ঞানের অভাব রয়েছে। অনেক সময় মানুষ বেশি দাম দিয়ে কম পুষ্টিকর খাবার কিনছে। পুষ্টিকর খাবার সম্পর্কে মানুষের ধারণা বাড়ানোর জন্য সরকারের আরও উদ্যোগ নেওয়া দরকার।