ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির ৩০ জনের ২০ জনই ছাত্রলীগ

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির ৩০ জনের ২০ জনই ছাত্রলীগ

রাজনীতিমুক্ত বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজে (শেবামেক) কমিটি ঘোষণা করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ৩০ জনের ঘোষিত কমিটির ২০ জনের বিরুদ্ধে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ছাত্রলীগের কর্মকান্ডের সাথে ছাত্রদলের ঘোষিত শেবামেকের ওই কমিটির ২০ নেতার জড়িত থাকার ছবি বুধবার (২২ অক্টোবর) দিবাগত রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। এরপূর্বে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে কেন্দ্রীয় সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব এবং কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির স্বাক্ষরিত শেবামেকের কমিটির তালিকা শেয়ার করা হয়। একইসাথে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ঘোষিত ওই কমিটির সূত্রধরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নবগঠিত কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্সকে। তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। বিভিন্ন সময়ে বরিশাল আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথেও তাকে দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পরা একটি ভিডিওতে আওয়ামী লীগ সরকারের পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও বরিশাল-৫ আসনের সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুকের একটি অনুষ্ঠানে তাকে (প্রিন্স) শ্লোগান দিতে দেখা গেছে।

অপরদিকে নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আগে ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। ২০২৩ সালের বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ খোকন সেরনিয়াবাতের পক্ষে দলবল নিয়ে প্রচারণা চালাতে দেখা যায় ফাহিদকে। ওই প্রচারণায় ছিলেন ছাত্রদলের শেবামেক শাখার নবগঠিত কমিটির সহ-সভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ, ফাইয়ান আলম ফাহিম, শোভন দেব দত্ত, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাকিম আদিল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাগীব মাহফুজ, শাওন আহমেদ, সহ-সাধারণ সম্পাদক হাসিবুল হক শান্ত, সিয়াম হোসেন, শেখ আসিফ হাসান, সাহিত্য ও প্রকাশনা সম্পাদক এনএম রোহান, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সম্পাদক তীর্থ মন্ডল, শিক্ষা ও পাঠচক্র সম্পাদক রাফিউল ইসলাম শোভন, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জিসান হোসেন আল দ্বীন।

এরমধ্যে সহ-সভাপতি জুবায়ের আল মাহমুদ ছাত্রলীগের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করে তিনি নিজেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি ও ভিডিও প্রচার করতেন। দপ্তর সম্পাদক নোমান ভুঁইয়া ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। একইসাথে র‌্যাগ রুমে জুনিয়রদের হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া সাংস্কৃতিক সম্পাদক চাঁন মিয়া এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সম্পাদক আরিফুল ইসলাম আনান ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন ও বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেছেন।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ প্রশাসন। ২০২৪ সালের ১১ আগস্ট কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। একইদিন একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল। একাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ক্যাম্পাস ও হোস্টেলে ছাত্র, শিক্ষক বা কর্মচারীদের দলীয় ব্যানারে প্রকাশ্যে বা গোপনে রাজনৈতিক কর্মকান্ড চালানো যাবে না। এছাড়া কোনো শিক্ষক ছাত্র-ছাত্রীদের দলীয় রাজনীতিতে উদ্ভুদ্ধ বা উৎসাহিত করতে পারবেন না বলেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

একই সাথে কলেজ ক্যাম্পাসে দলীয় রাজনৈতিক মিছিল করা যাবে না এবং ছাত্র-ছাত্রীদের মিছিলে ডাকা যাবে না বলে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক এসব সিদ্ধান্তের কোনো ব্যত্যয় হলে হোস্টেল সুপাররা কলেজ প্রশাসনকে অবহিত করবেন এবং এ ধরনের তৎপরতা চালানো ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনতিবিলম্বে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে জানতে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো. ফয়জুল বাশারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে উপাধ্যক্ষ ডা. মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, কমিটি দেয়ার ব্যাপারটা আমাদের হাতে নেই। এটা সংগঠনের ব্যাপার। তবে ক্যাম্পাসে তাদের কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এখন যদি তারা কমিটি দিয়ে দেয়, কমিটি থাকুক কিন্তু ইনেক্টিভ থাকতে পারবে।

সূত্রমতে, ক্যাম্পাসে দলীয় কর্মসূচি নিষিদ্ধ হলেও কমিটি ঘোষণার আগেরদিন মিছিল করেছে শাখা ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের ব্যানারে মিছিল ও শোডাউন করার ব্যাপারে জানতে চাইলে উপাধ্যক্ষ বলেন-বিষয়টি আমার জানা নেই। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের পরবর্তী সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব উদ্দীন রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছিরের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও তাদের পাওয়া যায়নি। শেবামেক শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির সভাপতি মো. আসাদুজ্জামান প্রিন্সের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ততা দেখিয়ে এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি না হয়ে বলেন, আপনি ক্যাম্পাসে আসেন, আপনাকে সব ঘটনা বুঝিয়ে বলছি।

সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল ফাহিদের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় কোনধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শেবামেক শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি ফাইয়ান আলম ফাহিমের কাছে মোবাইল ফোনে ছাত্রলীগ সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা শুনতে পাচ্ছেন না বলে জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তা বন্ধ করে রাখেন।

তবে মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের কমিটিতে ছাত্রলীগ পুর্নবাসিত হলে তার দায়ভার বরিশাল মহানগর ছাত্রদল নেবে না জানিয়ে মহানগর ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, এই কমিটি ঘোষণার আগ পর্যন্ত মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদল মহানগর ছাত্রদলের অধীনে ছিল। তখন যাচাই-বাছাই করে কমিটি দেয়ার সুযোগ ছিল। এবারই প্রথম কেন্দ্র থেকে মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কেন্দ্র থেকে এসে যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তারাই কমিটি দিয়েছে। যারা কমিটিতে এসেছে তাদের সাথে আমরা পরিচিত না।

সূত্রমতে, বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রদলের কমিটি পুনর্গঠন সংক্রান্ত কমিটির টিম প্রধান ছিলেন ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি দীপু পাটোয়ারী। তার নেতৃত্বেই ছাত্রদলের পদপ্রত্যাশীদের যাচাই-বাছাই হয়েছে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রদলের সহ-সভাপতি দীপু পাটোয়ারীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিটিংয়ে আছেন বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে