কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সদর ইউনিয়নের নাগদাহ গ্রামের ভিক্ষুক বছিরন বেওয়া জীর্নশীর্ন ঘরে দিনাতিপাত করতেন। যাতায়াতের সড়কের পাশে মরহুম স্বামীর রেখে যাওয়া সামান্য জমির উপর নির্মিত ভাঙ্গা ঘরেই বিধবা মেয়েকে নিয়ে বাস করতেন ভিক্ষুক বছিরন বেওয়া।
বৃষ্টি ও বাতাস হলে তার বসোবাসের ঘরটি পানিতে ভিজে যেত। বাতাসে দোল খেত ঘরের চালা। সারাদিন ভিক্ষা করে যা মিলতো বিধবা মেয়েকে নিয়ে এই জীর্নশীর্ন ঘরে অতি কষ্টের মাঝে থাকতে হতো বছিরন বেওয়াকে। তার এই ভগ্নদশার দিকে এলাকার কেউ নজর দিতোনা।
গত ১০ অক্টোবর বছিরন বেওয়ার পাশের এলাকা বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার যুবক মোহাম্মদ আলী সড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় বছিরন বেওয়ার জীর্নশীর্ন ঘরটি দেখতে পায়। স্বেচ্ছাসেবীমনা ওই যুবক ঘরটির ছবি তুলে আর্ন এন্ড লিভ নামের এক সংস্থার গ্রুপ পেজে পোস্ট করেন।
এতে সাড়া দেন আর্ন এন্ড লিভ নামের সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ফরিদা ইয়াছমিন জেসি। তার সার্বিক সহযোগিতায় বছিরন বেওয়াকে দেয়া হয় হয় উন্নত মানের সবুজ রঙের টিনশীটের নতুন ঘর। ১৯ অক্টোবর ঘরটির নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়। কাজ শেষ হয় ২৩ অক্টোর। ২০ হাত দৈঘ্যৈর নতুন ঘরে সংযুক্ত করা হয় রান্না ঘরও। এর সাথে দেয়া হয় একটি পাকা পাকা টয়লেট ঘরও।
ঘরের ভিতরে বছিরন বেওয়ার শোয়ার জন্য দেয়া হয় একটি কাঠের খাট, তোষক, বিছানার চাদর বালিশসহ আসবাব পত্রাদি। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজে ফিতা কেটে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘরটিতে প্রবেশ করেন ভিক্ষুক বছিরন বেওয়া।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন আর্ন এন্ড লিভ-এর বিভাগীয় সিক্রেটারী নাঈম হাসান, সাদ্দাম হোসাইন, মোতাছিম বিল্লাহ, তাহসিন, নূর আফরিন নিমা, স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক মোহাম্মদ আলী, আব্দুল আউয়াল,আতাউর রহমান, আরিফুল ইসলাম, আব্দুল আজিজ, তারেক খানসহ আরও অনেকে।
নতুন ঘর পেয়ে বছিরন বেওয়া আবেগাপ্লুত হয়ে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া গুজার করেন। তিনি বলেন, আগে আমি ভাঙ্গা ঘরে ঝড় বৃষ্টিতে কষ্টে ছিলাম। আমাকে নতুন ঘর নির্মাণ করে দেয়ায় আমি এখন আরামে ঘুমাতে পাবো। যারা আমাকে ঘর দিলো তাদের আল্লাহপাক ভালো করবে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিবন্ধী সমিতির সভাপতি তৈয়ব আলী জানান, বছিরন বেওয়া ভিক্ষাশিক্ষা করে জীবন চালাতো। তার হাতে পয়সা না থাকায় সে তার ভাঙ্গা ঘরটি সংস্কার করতে পারেনি। তাকে নতুন ঘরের ব্যবস্থা যারা করে দিলো তারা এই অসহায় মানুষটির জন্য ভালো কাজ করেছে।