দেশব্যাপী ইয়াবার আগ্রাসন

প্রয়োজন জাতীয় প্রতিরোধ

এফএনএস | প্রকাশ: ২৪ অক্টোবর, ২০২৫, ০৫:৩০ পিএম
প্রয়োজন জাতীয় প্রতিরোধ

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তবর্তী অঞ্চল, বিশেষ করে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া, এখন ইয়াবা চোরাচালানের ভয়াবহ কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে প্রতিনিয়ত বিপুল পরিমাণ ইয়াবা প্রবেশ করছে, যার বড় অংশ মজুদ হচ্ছে রোহিঙ্গা শিবিরে। এখান থেকেই ছড়িয়ে পড়ছে দেশের নানা প্রান্তে, তরুণ সমাজকে ঠেলে দিচ্ছে ধ্বংসের দিকে। খবরে প্রকাশ, উখিয়া-টেকনাফে ইয়াবা পাচারের অন্তত ৬০টি সক্রিয় হটস্পট রয়েছে। কমপক্ষে ১০টি সংঘবদ্ধ চক্র এই পাচারে জড়িত, যাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের নৌপথে নিরীহ জেলেরা পাচারের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছেন, যা শুধু মানবিক নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক শৃঙ্খলার জন্যও হুমকিস্বরূপ। মাদক উৎপত্তিস্থল রাখাইন রাজ্যে এখনো সক্রিয় রয়েছে ইয়াবা কারখানা। একসময় মায়ানমার জান্তার ছত্রছায়ায় চলা এই কারবার এখন আরাকান আর্মি, আরএসও ও আরসার মতো সশস্ত্র গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে। অভিযোগ রয়েছে, আরসার সংগঠক নবী হোসাইনের নেতৃত্বে বাংলাদেশে ইয়াবার বড় চালান ঢুকছে। বিজিবি ও কোস্ট গার্ড বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করলেও মূল কারবারিরা অধরা থেকে যাচ্ছে। শুধু চলতি বছরেই বিজিবি ৪৭ লাখ এবং কোস্ট গার্ড ৩০ লাখ পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে- যা চোরাচালানের ভয়াবহতা স্পষ্ট করে। এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রয়োজন একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল। বিজিবি, কোস্ট গার্ড, পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্থানীয় প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে দ্রুত ও কার্যকর তথ্য বিনিময় নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি মায়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থান নিতে হবে, যাতে উৎপত্তিস্থলেই মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। তবে শুধু প্রশাসনিক পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। সমাজকেও সচেতন হতে হবে। পরিবার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোকে মাদকবিরোধী প্রচারণায় যুক্ত করতে হবে। তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান, পুনর্বাসন ও মানসিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। ইয়াবার ভয়াল থাবা রুখতে এখনই প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় দৃঢ়তা ও সামাজিক ঐক্য। অন্যথায়, এই মরণনেশা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নিঃশেষে গ্রাস করবে।