জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে কিছু রাজনৈতিক দল বাধা দিচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে এমন এক সংসদ গঠনের, যেখানে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
শনিবার (২৫ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচার বিএমএ ভবনে সুফিবাদী সংগঠন ‘মাকাম’ আয়োজিত “মাজার সংস্কৃতি: সহিংসতা, সংকট ও ভবিষ্যৎ ভাবনা” শীর্ষক জাতীয় সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দেওয়ার দাবি নিয়ে এনসিপির প্রতিনিধি দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশনে গেছে। আমাদের দাবি—সনদকে আইনি স্বীকৃতি দিতে হবে এবং অধ্যাদেশ জারি করতে হবে।” তিনি আহ্বান জানান, “জুলাই সনদে যেন শেখ হাসিনার দোসর বা সহযোগীরা স্বাক্ষর না করে, সেই বিষয়ে জনমত গঠন করতে হবে। এই সনদে অধ্যাপক ইউনূসের স্বাক্ষর থাকা জরুরি।”
এনসিপি মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, “জনতার রক্তের ওপর দিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে। তাই কিছুটা ঝুঁকি নিয়ে হলেও জুলাই সনদের অধ্যাদেশ ও আইনি ভিত্তি সুন্দরভাবে জনগণের সামনে উপস্থাপন করতে হবে।” রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত সমাধানে পৌঁছাতে হবে, যাতে সুষ্ঠু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রের উত্তরণ সম্ভব হয়। তাঁর মতে, সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিলে নির্বাচন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশ নতুন সংকটে পড়বে।
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান আলেম-ওলামা প্রজন্মের মধ্যে যারা রাজনীতি, অর্থনীতি ও ব্যবসায় যুক্ত, তারা এখন এক মিলনমেলার জায়গায় আসছেন। মাঠে আর মারামারি বা ভাঙচুরের মতো অসভ্য কাজ চলবে না।” তিনি প্রস্তাব দেন, মাজার ও খানকা বিষয়ক একটি কমিশন গঠন করে এসব সামাজিক সংকটের সমাধান করা যেতে পারে।
একই অনুষ্ঠানে দুপুরের পর বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী অভিযোগ করেন, “ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক না করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে করেছিল। আর পাকিস্তান এখন নতুন করে একটি দলের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করছে।” তিনি বলেন, “দুটি রাষ্ট্রের কাছেই অনুরোধ করব, দলের সঙ্গে নয়, রাষ্ট্রের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পর্ক রাখুন। আমরা একই নদীর পানি পান করি, তাই পারস্পরিক সম্মানই টেকসই সম্পর্কের ভিত্তি।”
এনসিপি নেতা আরও বলেন, “সংবিধান পরিবর্তনের আগ পর্যন্ত বিদ্যমান সংবিধানই আমাদের মেনে চলতে হবে। তাতে কিছু ত্রুটি থাকলেও সেটাই আইনের ভিত্তি।” তিনি সুফি অনুরাগীদের উদ্দেশে বলেন, “দেশে ৩০০ আসনে গডফাদার আছে, ভালো মানুষ সংসদে পৌঁছায় না। এদের কাছে সিজদা দেবেন না, কারণ একবার বিক্রি হয়ে গেলে সারাজীবন তারা মাজার রক্ষার নামে গোলাম বানিয়ে রাখবে।”
নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী বলেন, “বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের পর জনগণের রক্তের বিনিময়ে নতুন করে দাঁড়ানোর সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সময় এসেছে রাষ্ট্রের কাছ থেকে নিজের অধিকার নিজেকেই বুঝে নেওয়ার।” তিনি সতর্ক করেন, “জুলাই সনদ বাস্তবায়নে বাধা দিলে শুধু নির্বাচন নয়, পুরো রাষ্ট্রই সংকটে পড়বে।”