নিষেধাজ্ঞা শেষ, পুনরায় মাছ ধরা শুরু

এফএনএস (মিজানুর রহমান; চাঁদপুর) : | প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর, ২০২৫, ০৮:৩৪ পিএম
নিষেধাজ্ঞা শেষ, পুনরায় মাছ ধরা শুরু

ইলিশের প্রজনন রক্ষায় সরকার ঘোষিত ২২ দিনের মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুর জেলার মেঘনা পদ্মা নদীতে পুনরায় মাছ ধরা শুরু হয়েছে। শনিবার (২৫ অক্টোবর, ২০২৫) দিনগত মধ্যরাতের অপেক্ষা করতে হয়নি,কয়েক ঘণ্টার আগেভাগেই ইলিশ সহ অন্যান্য মাছ ধরতে নেমে পড়েন চাঁদপুরের জেলেরা।

গত ২২ দিনে অবসরের অন্ত ছিল না অনেক জেলের। সেই সুযোগে তারা জাল, নৌকা মেরামতের কাজ শেষ করেছেন। কার আগে কে নদীতে যাবে  এমন প্রতিযোগিতায় মাছ শিকারে নদীতে ব্যস্ত স্থানীয় জেলেরা। প্রচুর ইলিশ ধরা পড়বে জালে, এমনটা আশা করছেন তারা।

জেলেদের কয়েকজন জানান, এই নিষেধাজ্ঞার সময়ে ইলিশের বড় নৌকার জেলেরা সরকারের আইন মেনে নদীতে যাইনি। কিন্তু কারেন্ট ও সুতার জালের ছোট নৌকার জেলেরা নদীর সবদিক থেকেই কমবেশি নেমেছে। এখন নিষেধাজ্ঞার সময় পার হলেও নদীতে তেমন মাছ নেই। তবুও  নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার প্রথম দিন কিছু মাছ পাবার আশায় নদীতে আছেন।কয়েকদিন পর আবার জাল নৌকা উপরে তুলতে হবে,কারণ সীজন শেষ। 

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ জানান, তিন অক্টোবর রাত্র বারোটা এক মিনিট থেকে মা ইলিশ  সংরক্ষণ -২০২৫ এর যে  কার্যক্রম  শুরু হয়েছিল গতকাল ২৫ অক্টোবর রাত্র বারোটায় তা শেষ হয়। দীর্ঘ ২২ দিনের এ কার্যক্রটি  চাঁদপুর জেলায় খুব সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়েছে। জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটির  সদস্যগণসহ জেলা প্রশাসক  বিভিন্ন জেলেপাড়ায় গিয়ে অনেকগুলে মত বিনিময় সভা, জনসচেতনতা সভা  করেছেন। জেলেদেরকে বোঝানো হয়েছে যে ইলিশ নামক এই সম্পদটি  তাদের এবং  সম্পদটি রক্ষা করতে পারলে তাদেরই লাভ হবে। জেলেরাও সেটা  বুঝতে পেরেছে তারাও  স্বপ্রণোদিতভাবে নদীতে নামে নাই । তারপরও আইন ভঙ্গ করে যে সকল জেলে নদীতে নেমেছে তারা শাস্তির আওতায় এসেছে । চাঁদপুর জেলায় ৬৭ টি মোবাইল কোর্ট  করা হয়েছে এবং  ৪৬৭ টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৩ টি মামলা করা হয়েছে ১২৫ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

তিনি বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে সরকারের অনেকগুলো সংস্থা যেমন জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলেই এ সুফল পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, ইলিশের প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষায় প্রতি বছর একটা নির্ধারিত সময় মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করেন সরকার। এর ধারাবাহিকতায় এ বছরও ৪-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। 

জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত প্রায় ৭০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মা ইলিশ ডিম ছাড়ার জন্য অভয়াশ্রম এলাকা ঘোষণা করা হয়। এসব এলাকায় নিবন্ধিত জেলে পরিবার হচ্ছে প্রায় ৪৫ হাজার ৬শ’ ১৫। এসব জেলেদের ২২ দিনের জন্য ২৫ কেজি করে খাদ্য সহায়তা হিসেবে চাল দিয়েছে সরকার।

উল্লেখ্য, এবার ইলিশ ধরার ওপর গত ৪-২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আশ্বিনী পূর্ণিমার আগের চার দিন এবং অমাবস্যার পরের তিন দিনকে অন্তর্ভুক্ত করে মোট ২২ দিন মা ইলিশ রক্ষায় বিশেষ অভিযান চলে।

বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা, বিশেষ করে মৎস্যজীবীদের মতামত অনুযায়ী এই সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়।

প্রজনন মৌসুমের পূর্ণিমা ও অমাবস্যা দুই সময়ই মা ইলিশের ডিম পাড়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এই দুটি পর্যায় অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ প্রজনন নিশ্চিত করা হয়। সময়টুকুতে মা ইলিশ একটু নিরিবিলি, নিরাপত্তা পায়।তবে জেলেরা নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেও মাছ ধরেছেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে