রাজনৈতিক ঘোষণার জটিলতায় থেমে আছে সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন। বিগত ২০২৩ সালে পতিত আওয়ামী সরকারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণায় ৫০ শয্যা থেকে ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও আজও সেই ঘোষণা বাস্তবে রূপ পায়নি। অবকাঠামো, জনবল ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা যন্ত্রপাতি সংকটে হাসপাতালটি কার্যত আগের অবস্থাতেই রয়ে গেছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অবস্থিত সীতাকুণ্ড উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি ট্রমা সেন্টার না থাকায় প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসায় চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অর্থোপেডিক্স বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদ শূন্য থাকায় গুরুতর আহতদের দ্রুত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে আটকা পড়ে অনেক সময় এইসব রোগীদের প্রাণহানির ঝুঁকিতে পড়তে হয়।
বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ১১টায় উপজেলা হল রুমে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব সমস্যা গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হয়।
সভায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আলতাফ হোসেন হাসপাতালের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে বলেন, ১০০ শয্যার ঘোষণা কেবল রাজনৈতিক ঘোষণায় সীমাবদ্ধ। প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল না থাকায় আমরা এখনও ৫০ শয্যার সেবাই দিতে পারছি।
তিনি আরও জানান, অর্থোপেডিক্স চিকিৎসকের পদ পূরণ ও ট্রমা সেন্টার স্থাপনের জন্য শিগগিরই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।
সভায় সীতাকুণ্ড মডেল থানার ওসি মুজিবুর রহমান জানান, মহাসড়কে ডাকাতি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে এলেও যানজট এখনো বড় চ্যালেঞ্জ। যানজট নিরসনে উপজেলা প্রশাসন, থানা ও হাইওয়ে পুলিশকে সমন্বিতভাবে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে কন্টেইনার ডিপোর গাড়ির অবৈধ পার্কিংই যানজটের মূল কারণ। বিএম কন্টেইনার ডিপো কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও পোর্ট লিংক কন্টেইনার ডিপোর গাড়িগুলো এখনও মহাসড়কে যানজট সহ নানান ভোগান্তি সৃষ্টি করছে।
সভায় সীতাকুণ্ড প্রেস ক্লাবের আহ্বায়ক জহিরুল ইসলাম জঙ্গল সলিমপুরে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে ওই অঞ্চলে পালিয়ে থাকা আওয়ামী সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে এবং দুর্র্ধষ অপরাধীদের আস্তানা গড়ে উঠেছে। এসব অপরাধী এবং আওয়ামী সন্ত্রাসীদের সাথে সীতাকুণ্ড প্রেসক্লাবের আওয়ামী দোসর সাংবাদিকদের যোগাযোগ রয়েছে। শিল্পাঞ্চল সীতাকুণ্ডে এসব অপরাধীরা যে কোন সময় নাশকতা সহ বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে পার বলে সচেতন মহলের ধারণা। এই প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফখরুল ইসলাম বলেন, জঙ্গল সলিমপুর এলাকায় সন্ত্রাসী দমনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করা হবে। পাশাপাশি মহাসড়কে যানজট ও মাদক নিয়ন্ত্রণেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সভায় তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় চলাকালীন শিক্ষকদের অনুপস্থিতি সহ্য করা হবে না। ভবিষ্যতে এমন ঘটনার প্রমাণ মিললে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া সীতাকুণ্ড পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা ব্যবস্থাপনা উন্নত করতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।
সভায় উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক ও শিক্ষক প্রতিনিধি সহ নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। অংশগ্রহণকারীরা আইনশৃঙ্খলা উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন।