ইলিশ আহরনে ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবার পর প্রথম দিন রোববার চাঁদপুরের নদ-নদীতে ইলিশসহ অন্যসব মাছের সাথে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে। নিম্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোও অন্যসব সময়ের তুলনায় কিছুটা কম দামে ইলিশ ও পাঙ্গাস কিনতে পেরে অনেকটা স্বস্তিতে। তবে ইলিশ ও পাঙ্গাসের এই চাকচিক্য হয়তোবা আর দু'একদিন থাকতে পারে, কারণ ইলিশের এবারের মৌসুম প্রায় শেষ পর্যায়।এমনটাই বলছে স্থানীয় পর্যবেক্ষক মহল। তবে জেলেরা জানান ,নিষেধাজ্ঞা শেষে চাঁদপুরের মেঘনা ও মুন্সীগঞ্জ-শরীয়তপুরের পদ্মা নদীতে জাল ফেলেও আশানুরূপ ইলিশ মিলছে না। তার পরিবর্তে জেলের জালে উঠে আসছে পাঙ্গাস। দাম ভালো পাওয়ায় ইলিশ না পাওয়ার আক্ষেপ কমছে। খুশি জেলেরা।
চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজী শবেবরাত সরকার জানান, ইলিশ প্রজনন মৌসুমের বাইশ দিনের অভিযান শেষ ২৬ অক্টোবর প্রথম দিন অবতরণ কেন্দ্রে ৬ থেকে ৭০০ মন ইলিশের আমদানি হয়েছে।এর সাথে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ মন নদীর পাঙ্গাসও এসেছে। চাঁদপুর মাছঘাটে আসা সিংহভাগ ইলিশই ছোট সাইজের। অন্যান্য বছরে চেয়ে এবার মোটামুটি মা ইলিশ রক্ষা অভিযান কড়াকড়ির মধ্যে গেছে।তবুও অনেক জায়গায় লুকোচুরি করে মাছ ধরা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শ্রীবাস চন্দ্র চন্দ বলেন, ২৬.১০.২০২৫ খ্রি. তারিখে চাঁদপুর মাছঘাটে প্রচুর মাছের সমাগম হয়েছে দেখতে পাওয়া যায়। ইলিশের পাশাপাশি প্রচুর পাংগাস উঠতে দেখা যায়। বিগত মার্চ এপ্রিল মাসে জাটকা সংরক্ষণ কার্যক্রমের সময় পাংগাসের পোনাগুলো সুরক্ষিত থাকায় এ সুফল পাওয়া যাচ্ছে। তাছাড়া মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযানে ২২ দিন মাছ ধরা বন্ধ থাকার ফলে জেলেরা একসাথে যখন নদীতে নেমেছে এবং একইসাথে তাদের মাছ ঘাটে এনেছে এজন্য বাজারে প্রচুর নদীর পাংগাস একসাথে পাওয়া গেছে।
তিনি জানান,তিন অক্টোবর রাত্র বারোটা এক মিনিট থেকে মা ইলিশ সংরক্ষণ -২০২৫ এর যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল গতকাল ২৫ অক্টোবর রাত্র বারোটায় তা শেষ হয়। ২৬ অক্টোবর থেকে নদ নদীতে পুনরায় মাছ ধরা শুরু হয়েছে। দীর্ঘ ২২ দিনের এ কার্যক্রটি চাঁদপুর জেলায় খুব সুন্দর এবং সুশৃঙ্খলভাবে শেষ হয়েছে। জেলা টাস্ক ফোর্স কমিটির সদস্যগণসহ জেলা প্রশাসক বিভিন্ন জেলেপাড়ায় গিয়ে অনেকগুলে মত বিনিময় সভা, জনসচেতনতা সভা করেছেন। জেলেদেরকে বোঝানো হয়েছে যে ইলিশ নামক এই সম্পদটি তাদের এবং সম্পদটি রক্ষা করতে পারলে তাদেরই লাভ হবে। জেলেরাও সেটা বুঝতে পেরেছে তারাও স্বপ্রণোদিতভাবে নদীতে নামে নাই । তারপরও আইন ভঙ্গ করে যে সকল জেলে নদীতে নেমেছে তারা শাস্তির আওতায় এসেছে । চাঁদপুর জেলায় ৬৭ টি মোবাইল কোর্ট করা হয়েছে এবং ৪৬৭ টি অভিযান পরিচালনা করে ৮৩ টি মামলা করা হয়েছে ১২৫ জনকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, মৎস্য অধিদপ্তরের সাথে সরকারের অনেকগুলো সংস্থা যেমন জেলা প্রশাসন, বাংলাদেশ নৌবাহিনী, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড, নৌ পুলিশ, জেলা পুলিশ সমন্বিতভাবে কাজ করার ফলেই এ সুফল পাওয়া গেছে।
এদিকে,চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছ ঘাটের আড়তদার ফারুক চোকদার জানান,ইলিশের ন্যায় পাঙ্গাস মাছের পোনা সময় মতন সংরক্ষণ করা গেলে বড় বড় পাঙ্গাস মাছের উৎপাদন আরো বাড়বে। এ ব্যাপারে মৎস্য দপ্তরের নজরদারি জোরদার করতে হবে।
মৎস্যজীবী নেতা তছলিম বেপারি বলেন,ইলিশের জালে এখন ঝাঁকে ঝাঁকে বড় বড় পাঙ্গাস মাছও স্থানীয় নদ- নদীতে ধরা পড়ছে। রোববার চাঁদপুর ঘাটে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ১ থেকে ১৫০ পাঙ্গাস মাছের দেখা মিলেছে। একেকটা পাঙ্গাস মাছের সাইজ হবে ৭-৮ কেজি থেকে ১০ - ১২ কেজি। ইলিশের আমদানি ও বেশি দেখা গেছে। তবে ছোট ইলিশের সংখ্যাই বেশি।
কার্তিক মাসের শেষ দিকে অন্য বছরগুলোর মত এবার শীত শুরু না হলেও দড়জায় কড়া নাড়ছে। এসময়টা স্বাভাবিকভাবেই চাঁদপুরের নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আনাগোনা শুরু হবার কথা। এবারও তার ব্যতিক্রম না হলেও সংখ্যায় অনেক বেশী। ২২ দিনের আহরন ও বিপনন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরে চাঁদপুর শরীয়তপুর মুন্সিগঞ্জ বেষ্টিত পদ্মা মেঘনা নদ-নদীতে ইলিশের সাথে পাঙ্গাস মাছ ধরা পড়ায় জেলেদের সাথে মৎস্যজীবীগনও অনেকটাই স্বস্তিতে এবার।
এবার নদ-নদীতে পাঙ্গাসের আধিক্যের কারণে বড় সাইজের মাছ ৭শ থেকে সাড়ে ৭শ টাকা এবং মাঝারী থেকে ছোট আকারের প্রতি কেজি ৬শ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।
তবে আগে পরে এসব পাঙ্গাস প্রতি কেজি এক হাজার থেকে দেড় হাজার টাকায়ও বিক্রী হয়েছে বলে আড়ৎদার ও মৎস্যজীবীগন জানিয়েছেন।
মৎস্য গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীদের মতে, ২০১৯ সালে মূল প্রজনকালীন সময়ে দেশের প্রধান ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্র সমুহে পরিক্ষামূলক নমুনায়নে ৮৩% ইলিশের রেনু পোনার সাথে একই এলাকায় ১৭-২০% পযন্ত অন্যান্য মাছের রেনুও পোনা পাওয়া গছে। ফলে ইলিশ আহরন নিষদ্ধকালীন ২২ দিনে উপলক্ষে অন্যান্য মাছের নিরাপদ প্রজননও সাফল্যজনক ভাবে সম্পন্ন হচ্ছ। যা দেশে অন্যান্য প্রজাতির মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতেও যথেষ্ঠ সহায়ক ভূমিকা পালন করছে বলে জানিয়েছে মৎস্য গবষেনা ইনস্টটিউিট।