যৌতুক প্রথা বন্ধে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি

এফএনএস | প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর, ২০২৫, ০৭:২৭ পিএম
যৌতুক প্রথা বন্ধে মানসিকতার পরিবর্তন জরুরি

আমরা তথ্য প্রযুক্তির যুগে বসবাস করেছি। আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে সবখানে। কিন্তু আমাদের সামাজিক কাঠামো, মূলনীতি ও বন্ধনের উন্নয়ন ও প্রগতশীল পরিবর্তন খুব একটা হয়নি। তাই যৌতুকের কুপ্রথা এখনো আমাদের মধ্যে বিদ্যমান। যৌতুকপ্রথা নিষিদ্ধ করে দেশে ১৯৮০ সালে আইন তৈরি হলেও সমাজে নেই এর সঠিক প্রয়োগ। যৌতুক যেন অদৃশ্য আগুন, যা ধীরে ধীরে পরিবারের সুখ-শান্তি পোড়ায়, মেয়েদের স্বপ্ন ভস্ম করে দেয় আর সমাজকে অন্ধকার গহ্বরে ঠেলে দেয়। মেয়ের বিয়ের সময় যে হাসির উৎসব হওয়ার কথা, সেখানে যৌতুকের দাবি এক ভয়ংকর আতঙ্কে পরিণত হয়। এ শিকল মেয়েদের স্বপ্নকে আটকে দেয়, পিতামাতার কপালে আনে দুশ্চিন্তার ভাঁজ আর সমাজকে ঠেলে দেয় অমানবিকতার অন্ধকারে। বাংলাদেশের সমাজে যৌতুকপ্রথার শিকড় অনেক গভীরে। বিয়ে যেখানে আনন্দময় উৎসব হওয়ার কথা, সেখানে যৌতুকের কারণে তা হয়ে ওঠে বোঝা। গ্রামের গরিব কৃষক হোক বা শহরের মধ্যবিত্ত পরিবার সবাই মেয়ের বিয়ের সময় যৌতুকের চাপের মুখে পড়ে। আইন করে এ প্রথাকে নিষিদ্ধ করা হলেও বাস্তব চিত্র ভিন্ন। অনেক পরিবার মেয়ের বিয়ে দিতে গিয়ে ঋণগ্রস্ত হয়, জমিজমা বিক্রি করে দেয় বা গোপনে ধার করে অর্থ জোগায়। অন্যদিকে যারা দিতে পারে না, তাদের মেয়েরা স্বামীর পরিবারে অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়। এর ফলে অনেক সময় ভেঙে যায় সংসার অথবা ঘটছে আত্মহত্যা কিংবা খুনের মতো মর্মান্তিক ঘটনা। দেশে যৌতুক-সংক্রান্ত নির্যাতনের অভিযোগ এসে থাকে প্রায় সময়ে। যৌতুক-সংক্রান্ত সহিংসতার প্রায় ৭০ শতাংশ ঘটনা গ্রামীণ অঞ্চলে ঘটে, যেখানে সচেতনতা ও শিক্ষার ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। সমাজের মানুষের মানসিকতার সমস্যা বেশি। যৌতুকপ্রথা যেমন মৃত্যুর মতো ভয়াবহ পরিণতি ডেকে আনে, তেমনি ব্যক্তিগত অবস্থান নিলে পরিবর্তনের সূচনা ঘটানোও সম্ভব। এই যৌতুকপ্রথা আমাদের সমাজে বর্তমানে নীরব এক ঘাতকে পরিণত হয়েছে। যেন খুব নীরবে বসে সমাজ-সভ্যতা ধ্বংস করছে কিন্তু আমরা কিছু টের পাচ্ছি না। কতভাবে এই প্রথার প্রভাব আমাদের সমাজে পড়েছে তা আমরা একবারও চিন্তা করছি না। সোশ্যাল মিডিয়া, পত্রপত্রিকা সবখানে আমরা হরহামেশাই দেখতে পাই কোনো গৃহবধূ খুন হয়েছে যৌতুক দিতে না পারার কারণে। কত মেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে শ্বশুরবাড়ির সমালোচনা সইতে না পেরে। কত পরিবারের অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড ভেঙে গেছে এই প্রথার কারণে। কিন্তু আমরা সবাই কী আসলেই এই জঘন্য প্রথা নিয়ে ভাবছি? আইন প্রয়োগ করে কখনো এই প্রথা বন্ধ করা সম্ভব নয়। কারণ আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যেন আইন ভঙ্গ করার এক অসীম সাহস। এর জন্য প্রয়োজন আমাদের মানসিকতার একটুখানি পরিবর্তন, যৌতুকের যত কারণ আমাদের চোখে পড়ে, সবগুলোতে মানসিকতাকেই প্রধানত দায়ী করা যায়। আমাদের যদি ইচ্ছা থেকেই যায় যে আমরা এই প্রথাকে সমাজে টিকিয়ে রাখবই, সেক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর কোনো কিছু করার ক্ষমতা থাকবে না। এক্ষেত্রে যে ব্যাপার সব থেকে উপযোগী তা হলো, আমাদের মানসিকতার পরিবর্তন, নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। দরকার নিজের আত্মমর্যাদা বৃদ্ধি করা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে