মইরা গেলে যাতে লাশটা বাহির করতে পারে এতটুকু রাস্তা কইরা দেন

প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই মইরা গেলে যাতে লাশটা বাহির করতে পারে এতটুকু রাস্তা কইরা দেন। নিহার বেগম (৬৭) নামের এক বৃদ্ধা আর্তনাদ করে এসব কথা বলতে থাকেন উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে।

মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে টিনের বেড়া দিয়ে বাড়ির যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় ১০ পরিবারের লোকজন অবরুদ্ধ হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

এই ঘটনা ঘটছে উপজেলার উত্তর হলদিয়া গ্রামে।

সোমবার এই বিষয়ে ভুক্তভোগী পরিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ পত্র দিয়েছে।  জমেলা বেগমসহ গণস্বাক্ষরিত অভিযোগ পত্রে স্বাক্ষরকারীরা উল্লেখ করেন- তারা সবাই উত্তর হলদিয়া গ্রাম বায়তুল নূর জামে মসজিদ সংলগ্ন গ্রামের বাসিন্দা। বিগত ৫০ বৎসর যাবৎ অত্র গ্রামের বাসিন্দারা মূল রাস্তায় চলাচলের জন্য পার্শ্ববর্তী অন্যান্য মালিকগণদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির পায়ে হাটা পথ হিসাবে ব্যবহার করিয়া আসিতেছে। কিছুদিন পূর্বে উক্ত সম্পত্তির মালিকগণ তাহাদের মালিকানা শর্তে জনগণের চলাচলের রাস্তাটি বন্ধ করিয়া দেয়। এতে করে অত্র এলাকার জনগণ দূর্ভোগের সামিল হয়। একাধীক বার মালিক পক্ষগণদেরকে অনুরোধ করিলেও তারা তাহাদের সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থান করেন। 

সরেজমিনে উপজেলার  উত্তর হলদিয়া ২নং ওয়ার্ড বাশার কান্দী এলাকায় ভুক্তভোগী মিজান শেখ, রাসেল শেখ, রাব্বী শেখ, নুর মোহাম্মদ শেখ, নিহার বেগম, আনছার আলী, খোকন শেখের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তাদের বাড়ির চলাচলের রাস্তা টিন কাঠের বেড়া দিয়ে চলাচলের পথ অবরুদ্ধ করে দিয়েছে প্রতিবেশীরা। 

ভুক্তভোগী মৃত নুরইসলাম শেখের ছেলে মো. মিজান শেখ বলেন, অনেক বছর ধরে আমরা রাস্তাটি ব্যবহার করে আসছি। প্রতিবেশি মুজাম্মেল গং, বেড়াবদিয়ে আমাদের চলাচলের বন্ধ করে দিয়েছেন। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। পাশের একটি সরু পথে বাড়ির ভিতর দিয়ে যেতে হয়। যা খুবই কষ্টসাধ্য তাতেও আবার উপরে চলাচলে নিষেধ করেছে। আমরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছি।

নিহার বেগম (৬৭) জানান, প্রতিবেশী আমাদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তাদের জিজ্ঞেস করায় বলে আমাদের জমি আমরা বেড়া দিয়েছি আপনারা কিভাবে বাহির হবেন আপনাদের বিষয়। 

আমরা এখন অসহায় মতো জীবন যাপন করছি। প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই মাইরা গেলে যাতে লাশটা বাহির করতে পারে এতটুকু রাস্তা কইরা দেন।

ভুক্তভোগী দিনমজুর রাসেল শেখ, রাব্বী শেখ, নুর মোহাম্মদ শেখ, আনছার আলী ও খোকন শেখ বলেন, এই পথ ছাড়া আমাদের বাড়ি থেকে বাহির হবার অন্য কোন রাস্তা নেই। আমরা মধ্যবিত্ত ও গরীব মানুষ আমাদের অন্য কোথাও জমিও নেই যে অন্য কোথাও গিয়ে বাড়ি করে বসবাস করবো। প্রশাসনের কাছে আমাদের ১০ পরিবারের একটাই দাবি বাড়ি থেকে বাহির হওয়া জন্য একটু রাস্তার ব্যবস্থা করে দিতে সদয় হন।

রাস্তার ব্যাপারে প্রতিবেশী অভিযুক্ত মুজাম্মেল বেপারী ও মো. কামাল বলেন, কাগজপত্রে কোথাও কোন রাস্তা নেই। আগে খোলামেলা ছিলো যে যার মত রাস্তা ব্যবহার করেছে। এই দুই ব্যক্তি আরও বলেন যদি পাশের জমির মালিকরা রাস্তা দেয় তাহলে আমরাও দিবো । তবে রাস্তার পরিবর্তে তাদের জমি কশর দিতে হবে। 

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নেছার উদ্দিন বলেন, সোমবার এই বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি দেখতে হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তার নিকট পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে এই বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।