ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন বা তার আগে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে সুপারিশমালা হস্তান্তরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ।
তিনি বলেন, “গণভোটের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং এখনো আছে। আমরা সরকারকে লিখিতভাবে জানিয়েছি, সংসদের সাধারণ নির্বাচনের দিন বা তার আগে যেকোনো দিন গণভোট আয়োজন করা যেতে পারে।”
আলী রীয়াজ জানান, কমিশন সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে যাতে তারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত গণভোটের তফসিল ঘোষণা করে। তার ভাষায়, “আমরা বলেছি, সরকার যেন অবিলম্বে এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে একটি তফসিল তৈরি করে ফেলে।”
ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, জুলাই জাতীয় সনদের সাংবিধানিক বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য সরকার একটি সাংবিধানিক আদেশ জারি করবে। ওই আদেশের অধীনে গণভোট অনুষ্ঠিত হবে এবং গণভোটে একটি প্রশ্ন থাকবে—সংবিধান সংশোধনের ৪৮টি বিষয়ে জনগণের সম্মতি আছে কি না।
কমিশন আরও প্রস্তাব করেছে, নির্বাচিত সংসদ একইসঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবে কাজ করবে এবং ২৭০ দিনের মধ্যে জুলাই সনদে বর্ণিত সংস্কার বাস্তবায়নের প্রস্তাব তৈরি করবে। এই সময়ের মধ্যে পরিষদ তার দায়িত্ব শেষ করতে না পারলে গণভোটে অনুমোদিত বিষয়গুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংবিধানে প্রতিস্থাপিত হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আলী রীয়াজ বলেন, “সংবিধান সংস্কার পরিষদ জুলাই সনদের চেতনা অনুসারে প্রয়োজনীয় সংশোধন, সংযোজন ও পরিবর্তন করতে পারবে। আমাদের বিশ্বাস, পরিষদ তার দায়িত্ব পালনে সক্ষম হবে।”
তিনি আরও জানান, সাংবিধানিক বিষয় ছাড়া যেসব বিষয় সরকার অধ্যাদেশ বা অফিস আদেশের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারে, সেগুলো যেন অবিলম্বে কার্যকর করা হয়।
কমিশনের সহসভাপতি বলেন, “গণভোটে রাজনৈতিক দলগুলোর নোট অব ডিসেন্টের বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকবে না।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে সব রাজনৈতিক দলকে সুপারিশমালা পৌঁছে দেওয়া হয়েছে এবং যারা এখনো সনদে স্বাক্ষর করেনি, তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
জুলাই জাতীয় সনদ গত ১৭ অক্টোবর স্বাক্ষরিত হয়। রাষ্ট্র সংস্কার ও রাজনৈতিক পুনর্গঠনের অঙ্গীকারনামা হিসেবে পরিচিত এই সনদে উচ্চকক্ষ প্রতিষ্ঠা, নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কার ও প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসহ ৪৮টি সাংবিধানিক প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।