সুন্দরগঞ্জে অচেনা পাখি ঠিকানা গেড়েছে

এফএনএস (মোঃ ইমদাদুল হক; সুন্দরগঞ্জ, গাইবান্ধা) : | প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:০৮ পিএম
সুন্দরগঞ্জে অচেনা পাখি ঠিকানা গেড়েছে

     শীতের শিশির কণার আগাম বার্তা প্রতিদিন সকালে উঁকি দিচ্ছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার গ্রাম-গঞ্জের কোলাহলমুক্ত সবুজে ঘেরা প্রকৃতির কাছে। এরই মধ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সদরে বাজারের মাঝখানে বিশাল আকৃতির রেইনট্রি গাছে অচেনা পাখি ঠিকানা করে নিয়েছে আপন মহিমায়। বাজারে ঢুকলে কানে ভেসে আসছে সেই অচেনা পাখির কিচিরমিচির শব্দ। আর তখনেই সকলের নজর কাড়ছে গাছের আগালে। তিনটি গাছের মগডালে হাজারও অচেনা পাখি বাসা বেঁধেছে নিজের মত করে। গলায় কালো ডোরা সাদা রঙের এসব পাখি গাছের এপাশ ওপাশ উড়ছে অবিরামভাবে। এযেন নৈসর্গিক দৃশ্যে পরিনত হয়েছে। যারাই বাজার করতে আসছেন তারাই তাকাচ্ছেন অচেনা পাখিগুলোর দিকে। সেই সাথে উৎসুক মানুষের ভির যেন চোখে পড়ারমত। 

          বাজারের ওই গাছের নিচে কাঁচামাল ব্যবসায়ী মো. হামিদুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে প্রায় দেড় মাস আগে একঝাক অচেনা পাখি এসে আশ্রয় নেয় গাছটিতে। এরপর আস্তে আস্তে আশপাশের আরও তিনটি গাছে হাজার পাখি আশ্রয় নিয়ে বাসা বেধেঁছে। প্রতিটি বাসায় অসংখ্য পাখির ছানা রয়েছে। পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনতে ব্যবসায়ীরা এখন প্রায় অভ্যস্ত হয়ে পরেছেন। বাজার করতে আসা মানুষজন পাখির কিচিরমিচির শব্দ শুনে এক নজর  তাকাচ্ছেন গাছের সেই মগডালে। সারাদিন এদিক ওদিক ছুঁেট গিয়ে খাবার সংগ্রহ করে আবার ফিরে আসছে গাছের ডালে বাধা খড়কুঁটার বাসায়। বাজারের সাথে খালের মধ্যে এবং একটু দুর তিস্তা নদীতে গিয়ে খাদ্য সংগ্রহ করছে ওরা। এখন পর্যন্ত পাখি প্রেমী এবং শিকারীরা হানা দিতে পারেনি। বাজারের ব্যবসায়ীরা এনিয়ে অত্যন্ত সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। 

        পাখি দেখতে প্রতিদিন হাজারও মানুষ ভির করছেন। কেউ ছবি তুলেন, আবার কেউ কেউ পাখির কিচিরমিচির শব্দ রেকর্ড করেছে। অচেনা এই পাখির আগমন সুন্দরগঞ্জের আকাশে রুপবৈচিত্র যোগ করেছে। ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলে পাখির কলকাকলি। এ যেন হারিয়ে যাওয়া প্রকৃতির সেই অচেনা রুপ। পাখিগুলো যখন দলবেঁধে ডানা মেলে আকাশে উড়ে, তখন মনে হয় এযেন শিল্পির আঁকা ছবি এবং ক্যালেন্ডারের পাতা। 

         পাখি দেখতে আসা গোলজার রহমান বলেন, আগে গ্রাম-গঞ্জের মাঠঘাটে বিশাল আকৃতির গাছ-গাছপালা ছিল। দেশি বিদেশি বিভিন্ন রকমের পাখির বাসা ছিল ওই সমস্ত গাছে। কালের বিবর্তনে ওইসব গাছ এখন আর নেই। আজ থেকে ৩০-৪০ বছর আগে শীত মৌসুমে অতিথি পাখির আনাগোনা ছিল চোখে পড়ার মত। এখন আর তা দেখা যায় না। অনেক দিন পর বাজারের এই গাছে অতিথি পাখি দেখে খুব ভাল লাগল। 

         পাখি দেখতে আসা আরেক দর্শনার্থী বেলাল হোসেন বলেন, পাখির কিচিরমিচির শব্দ তাকে অনেকটা মোহিত করে তুলেছে। এরা অতিথি পাখি, এদের দেখভাল করে রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব। প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় এসব পাখির আগমন আমাদের এলাকার জন্য আর্শিবাদ। আমরা যেন ভুলে না যায়, ওরা অতিথি পাখি। একটু সময়ের জন্য হলেও পাখির কোলাহল আমাকে অনেকটা আনন্দ দিয়েছে। 

          কবি, সাহিত্যিক ও অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ প্রধান শিক্ষক মো. আব্দুস সামাদ মিঞা বলেন, আমার ঘরের ওপরে এই অচেনা পাখির ঠিকানা। প্রায় মাস খানেক থেকে অতিথি এই পাখিগুলোর প্রতিদিনের কোলাহল আমাকে তাদের ভালবাসায় মায়াজালে আবদ্ধ করেছে। প্রতিদিন সকালে  নিজ বাসার বারান্দা থেকে পাখিগুলোকে একনজর দেখেন তিনি। প্রতি মুহুর্তে কিচিরমিচির শব্দ এবং ডানামেলে উড়ে বেড়ার দৃশ্য তাঁর কাছে শিল্পির স্বপ্ন তুলির ছোঁয়ার মত মনে হচ্ছে। এ দৃশ্য এলাকার জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এর আগেও শীতের আগাম বার্তার সাথে সাথে ওরা এসেছিল। তবে সংখ্যয় অনেক কম ছিল। এবারে যেন অনেক বেশি। এলাকাবাসি পাখিগুলোর নিরাপত্তা রক্ষায় যথেষ্ট আন্তরিক।

           শোভাগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান বলেন, শীত মৌসুমের শুরতেই বা তার আগে সুদুর সাইব্রেরিয়া অথবা শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে এসব পাখি বাংলাদেশে আসে। খাবার সংকট, প্রজনন, ও পরিবেশগত কারনে তারা এদেশে আসে। বংশবৃদ্ধি হয়ে গেলে বা উপযুক্ত পরিবেশ ফিরে পেলে তারা আবার তাদের দেশে চলে যায়। তিনি বলেন, এসব পাখির মধ্যে বালিহাস, হারগিলা, সাইব্রেরিয়ান বকসহ নানা প্রজাতির পাখি রয়েছে। এরা বিলে, খালে বা নদীতে শামুক, ছোট মাছ, পোঁকামাকড়, খেয়ে জীবন ধারন করে।

        উপজেলা বনবিভাগের কর্মকর্তা মো. মেহেদী হাসান বলেন, উপজেলায় কোথাও বিশাল আকৃতির গাছ-গাছলা নেই বললে চলে। কিছু এলাকায় হাতেগোনা কয়েকটি বিশাল আকৃতির গাছ রয়েছে। সাধারনত শীত মৌসুমে এসব পাখি এসে কিছুদিন বসবাস করে চলে যায়। তবে বনবিভাগ অতিথি পাখি শিকারের ব্যাপারে অত্যন্ত সর্তক রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে