স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার, এখন মানসিক ভারসাম্যহীন

এফএনএস (মোঃ মোতালেব হোসেন; সাটুরিয়া, মানিকগঞ্জ) : | প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৩:৫৮ পিএম
স্বপ্ন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার, এখন মানসিক ভারসাম্যহীন

মানিকগেঞ্জর আলমগীর হোসেন ২০২০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় পাশ করেন। বিশ্ব বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে তার বন্ধু বান্ধবরা বিভিন্ন কোচিং এ ভর্তি হচ্ছেন। এমন সময় আলমগীরের জীবনে নেমে আসে চরম অন্ধকার। হয়ে পড়ে মানসিক ভারসাম্যহীন। পরিবারে দারিদ্র্যের মুখোমুখি হয়ে অর্থাভাব আর সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ায় এখন শিকল বন্দি জীবন কাটছে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার সাটুরিয়া ইউনিয়নের শেখরীনগর দারিদ্র পরিবারের এক চরম বাস্তবতার এক করুণ প্রতিচ্ছবি আলমগীর হোসেন। বয়স মাত্র ২৬ কি ২৭ হবে। তার যৌবন আজ বন্দি মরিচা পড়া লোহার শিকলে। গত পাঁচটি বছর যাবৎ ভাঙ্গাচুরা টিনের ঘড়ের ছোট্ট একটি কুঠরিতে কাটছে তার শিকল বন্দি জীবন। 

রুবিয়া-আওলাদ দম্পতির এক মেয়ে ও তিন ছেলে সন্তানের মধ্যে আলমগীর মেঝো। ছোট থেকে পড়া লেখায় ছিলো অন্যদের তুলনায় ভালো এবং সে কৃতিত্বের সঙ্গে ২০১৭ সালে বানিজ্য বিভাগ থেকে ধূল্যা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ২০২০ সালে মানবিক বিভাগ থেকে সাটুরিয়া সৈয়দ কালুশাহ ডিগ্রী কলেজ থেকে এইচএসসি পাশও করেন।

এর পর হঠাৎ করেই আলমগীরের পরিবর্তন শুরু হয় এবং একটি পর্যায়ে সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। পরিস্থিতি এমন স্থানে দাঁড় করিয়েছে তাকে (আলমগীর)  শিকল বন্দী করতে বাধ্য হয়েছে পরিবার। দিনমজুরি করে কোনো মতে চলে তাদের মা-ছেলেদের জীবন। আর এই চরম দারিদ্র্যতাই কেড়ে নিয়েছে আলমগীরের স্বাভাবিক জীবনের অধিকার। 

আলমগীরের বাবা নেই, মা রুবিয়া খাতুন সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সামান্য ভাতায় চলে তাদের জীবন। যেখানে তিন বেলা পেট ভরে খাবার জোগাড় করা অসম্ভব, সেখানে ছেলের উন্নত চিকিৎসা এ যেন এক সোনার হরিণ। এই বন্দি জীবন সমাজের বিবেককে প্রশ্ন করে আর কত দিন শিকলে বাঁধা থাকবে আলমগীর? দরিদ্র্য ও অসহায় আলমগীরকে শিকল থেকে মুক্ত করে সুস্থ জীবনে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজন সকলের সম্মিলিত সহযোগিতা। 

প্রতিবেশী মো. জিয়াউর রহমান বলেন, আলমগীরের পরিবারটি খুবই অসহায় ও অসচ্ছলতার মধ্য দিয়ে দিন পার করছে। কোন রকম ছেলেকে এইচএসসি পাশ করল। তার মার খুব আশা ছিল। ছেলে বড় হয়ে সংসারের হাল ধরবে। কিন্তু ঘটল অন্য ঘটনা আলমগীর পড়াশুনা করতে পারল না। হয়ে গেল ভারসাম্যহীন। চিকিৎসার অভাবে ছেলেটা শিকলে বন্দি হয়ে পড়েছেন। আলমগীরের পরিবারের পক্ষ থেকে ওর চিকিৎসা করার সামর্থ নাই। 

সাটুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য আব্দুল লতিফ বলেন, আলমগীর হোসেন ইন্টার পাশ করে কিছু করবে কি? উল্টো মানসিক রোগী হয়ে পড়ে। তার পরিবারকে পরিষদ থেকে নিয়মিত সাহায্য করা হচ্ছে। কিন্তু তা চিকিৎসা করার মত না। তার সাহায্যের জন্য সমাজের বিত্তবানদের সহযোগীতা কামনা করছি।

আলমগীর হোসেনের মা রুবিয়া খাতুন বলেন, আমার পোলা পাগলামিসহ মানুষের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে। পরে বাধ্য হয়ে শিকলে বন্দি করি এবং কিছু জমি বিক্রি করে ওর বাবা চিকিৎসাও করায়। একটু সুস্থ হয়ে বাড়ি আসলেও আবার কয় দিন পর সেই আগের মতোই পাগলামি শুরু  করলো, হঠাৎ করেই ওর বাবা মারা যায়। এখন যে অবস্থা ভাত দিব না চিকিৎসা দিব কুল পাচ্ছি না। 

সাটুরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃ পঃ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ মামুন উর রশিদ বলেন,  আলমগীর হোসেনে, দ্রুত সঠিক চিকিৎসা পেলে মানসিক ভারসাম্যহীন রোগীরাও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব। 

এ ব্যাপারে সাটুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছুই জানি না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। আমার নিকট আলমগীর হোসেনের পরিবার পক্ষ থেকে লিখিত আবেদন করলে, মানবিক দৃষ্টি কোণ থেকে বিধি মোতাবেক সাহায্য করা হবে ।  

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে