সন্ধ্যা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) : | প্রকাশ: ৩০ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৪২ পিএম
সন্ধ্যা নদীতে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত

বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দের সাথে নৌকা বাইচ এক ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ উৎসবের চিত্র তুলে ধরে। যেখানে নদীর দুই পাশে হাজারো দর্শক উল্লাস করে এবং মাঝিরা বৈঠা হাতে পাল্লা দিয়ে নৌকা চালায়। একইসাথে কাঁসির আওয়াজ, বিভিন্ন রঙিন পোশাক পরা মাঝিরা নৌকায় উঠে গান-বাজনা ও জয়ধ্বনির মাধ্যমে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি করেছিলো। এসময় নদীর দুই পাড়ে হাজার-হাজার মানুষকে মুখরিত করে তুলেছিলো। 

দীর্ঘদিন পর বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিকেলে গ্রাম বাঙলা থেকে হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হয়েছে বরিশালের উজিরপুর উপজেলার শিকারপুর এলাকার সন্ধ্যা নদীতে। উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে রোমাঞ্চকর নৌকা বাইচ উপভোগ করতে সন্ধা নদীর দুইপাড়ে জড়ো হয়েছিলো সকল বয়সের কয়েক হাজার নারী-পুরুষ। বিকেল চারটায় সন্ধ্যা নদীর শিকারপুর বন্দর এলাকা থেকে নৌকা বাইচের উদ্বোধণ করেন বরিশালের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন।

নৌকা বাইচে বিভিন্ন নামের সু-বিশাল ছয়টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। উদ্বোধনের পর প্রতিটি নৌকার মাঝিদের একটানা বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ শব্দে ও মাঝিদের জয়ধ্বনি এবং কাঁসির আওয়াজ মিলে উৎসবের আমেজ তৈরি করে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বের মেজর এমএ জলিল সেতু (ইচলাদী ব্রীজ) পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়।

এসময় নারী-পুরুষ, শিশু-বৃদ্ধ নির্বিশেষে হাজার হাজার দর্শক সন্ধ্যা নদীর দুই তীরে ভিড় জমায়। অনেকে অসংখ্য ছোট নৌকা ও ট্রলার ভাড়া করে নদীতে অবস্থান করে নৌকা বাইচ উপভোগ করেন।

নদীর দুই পাড়ে হাজারো মানুষ যখন অপেক্ষমান ততোক্ষনে বিচিত্র সাজে সজ্জিত বাইচের নৌকাগুলোতে অংশগ্রহণ করা নানা বর্ণের পোশাক পরা মাঝিরা নৌকায় কাঁশি বাজিয়ে, মাঝিদের একত্র জয়ধ্বনিতে এবং গানের তালে তালে বৈঠার টানে অন্য সব নৌকাকে পেছনে ফেলে নিজেদের নৌকাকে সবার আগে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে পুরো উজিরপুর উপজেলাজুড়ে এক উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পরেছিলো। দীর্ঘ বছর পর নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে এক ধরনের উৎসব ছড়িয়ে পরেছিলো।

গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাওয়া একসময়ের চিরচেনা নৌকা বাইচের আয়োজক ও পুরো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনাকারী উজিরপুর উপজেলার চৌকস নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা জানিয়েছেন-এই উৎসব শুধু একটি প্রতিযোগিতা নয়; বরং এটি গ্রামীণ সংস্কৃতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ যা ভবিষ্যত প্রজন্মের মাঝে নতুন প্রাণ সঞ্চায় করেছে। পাশাপাশি নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে স্থানীয়দের মাঝে প্রাণ ফিরে এসেছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আলী সুজা বলেন-সমাজ থেকে মাদক নির্মূল করে যুব সমাজকে মোবাইল আসক্ত থেকে দূরে রাখতে সুস্থধারার এমন বিভিন্ন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। আমরা প্রতিবছর এমন আয়োজন করার উদ্যোগ নিবো। আশা করছি অন্য এলাকার মানুষরাও এটা দেখে অনুপ্রাণিত হবেন।

উজিরপুরের পাশ্ববর্তী গৌরনদী উপজেলা থেকে নৌকা বাইচ দেখতে আসা হাসান মাহমুদ বলেন, দীর্ঘদিন পর এমন আয়োজনকে ঘিরে বন্ধুরা মিলে সন্ধ্যা নদীতে আয়োজন করা নৌকা বাইচ দেখতে এসে দারুন উপভোগ করেছি। প্রতিবছর যেন এমন আয়োজন করা হয় সেই প্রত্যাশা করছি।

বাবুগঞ্জ থেকে আসা দর্শনার্থী মৌরিন আহম্মেদ আশা বলেন-পরিবারের সদস্যদের নিয়ে এসেছি। অনেকদিন পর নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখলাম। অনেক ভালো লাগলো। আয়োজকদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় প্রথমস্থান অর্জন করেছে, মাদারীপুরের রাজিহার উপজেলার বাসিন্দা লাজারুস খলিফার পরিচালনাধীন শের-ই বাংলা একে ফজলুল হক নামের নৌকা। প্রতিযোগিতা শেষে অতিথিরা বিজয়ী দলসহ অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে