সুন্দরবনে দস্যুরা মাথাচাড়া দিচ্ছে; দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

এফএনএস | প্রকাশ: ৩১ অক্টোবর, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
সুন্দরবনে দস্যুরা মাথাচাড়া দিচ্ছে; দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে

সুন্দরবন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন। জীববৈচিত্র্যের ভাণ্ডার। এ বন শুধু প্রকৃতির জন্য নয়, হাজারো জেলের জীবিকার ভরসাস্থল। কিন্তু আজ সেই সুন্দরবনই জলদস্যু ও বনদস্যুেদর তৎপরতা বাড়ায় জেলেদের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে সুন্দরবনে জেলে অপহরণ, ডাকাতি, চাঁদা আদায়সহ বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা বাড়ছে। গত এক বছরে ৪৪ জন বনদস্যুেক আটক করেছে কোস্ট গার্ড। উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাত দলের হাতে জিম্মি ৪৪ জেলেকে। সৌন্দর্যের অপরূপ লীলাভূমি সুন্দরবন। সেই বনে আবারও আতঙ্কের কারণ হয়ে ফিরছে বনদস্যু দল। অপহরণ, ডাকাতিসহ নানা অপরাধের অভয়ারণ্য হয়ে উঠছে সুন্দরবন। বনের উপর নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালিরা যেন আবার ফিরে যাচ্ছেন সেই আতঙ্কের দিনে। বনদস্যুেদর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করা হয়। তবে, গত ৫ আগস্টের পর, থানা-পুলিশের শিথিলতার সুযোগে আবারও মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে বনদুস্যরা। বিভিন্ন সূত্র বলছে, সংগঠিত হয়েছে অন্তত ৬টি দস্যু বাহিনী। শরীফ বাহিনী, মামা-ভাগ্নে বাহিনী, আছাবুর বাহিনী, মজনু বাহিনী, আনারুল বাহিনী ও রাঙ্গা বাহিনীর নাম উঠে আসছে। তাদের বিরুদ্ধে অপহরণ, জিম্মি করে নির্যাতন ও মুক্তিপণ আদায়- এমন বেশ কয়েকটি অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী জেলেরা। ৫ আগস্টের পর থেকে গত এক বছরে কোস্ট গার্ডের অভিযানে ৩৭টি আগ্নেয়াস্ত্র, ৪৩টি দেশীয় অস্ত্র, বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদ ও ককটেল উদ্ধার হয়েছে। মুক্ত করা হয়েছে জিম্মি থাকা ৪৪ জন জেলেকে। আটক করা হয়েছে ৪৪ জন ডাকাত ও তাদের সহযোগীদের। আত্মসমর্পণ করা দস্যুেদর কেউ কেউ আবার জড়িয়ে পড়ছে আগের অপরাধে। জেলেদের কাছে এখন নদীর জোয়ার-ভাটা, ঘূর্ণিঝড় কিংবা বাঘের ভয় নয়- এখন সবচেয়ে বড়ো আতঙ্ক হলো জলদস্যু ও বনদস্যুরা। সাতক্ষীরার শ্যামনগর, আশাশুনি ও কয়রার জেলেরা প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সুন্দরবনে যাচ্ছেন মাছ, কাঁকড়া ও চিংড়ি ধরতে। তারা ফিরে না আসা পর্যন্ত তাদের পরিবার থাকে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। জানা গেছে, চাঁদা না দিলে দস্যুরা নৌকা আটক করে জেলেদের গাছে বেঁধে মারধর করে। অনেক সময় দিনের পর দিন আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হয়। কারো কারো পরিবার ঘরবাড়ি বিক্রি করে টাকা জোগাড় করতে বাধ্য হয়। দস্যুতার বিরুদ্ধে অভিযোগ করলেও প্রশাসন কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ। সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় এবং বনের ওপর নির্ভরশীল লোকদের জীবন ও জীবিকা সুরক্ষিত করতে বনদস্যু মুক্ত করার বিকল্প নেই। আমাদের প্রত্যাশা, খুব দ্রুতই অভিযান পরিচালনা করে ডাকাত ও বনদস্যুেদর আটকের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।