পর্যটন কেবল একটি অর্থনৈতিক ক্ষেত্রই নয়, বরং সামাজিক অগ্রগতির জন্য একটি অনুঘটক, শিক্ষা, কর্মসংস্থান এবং সকলের জন্য নতুন সুযোগ তৈরির মাধ্যম। পর্যটনকেন্দ্রিক গন্তব্য বিভিন্ন মানুষ ও সংস্কৃতির মধ্যে বন্ধনকে শক্তিশালী করে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাদের পর্যটন খাত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে দ্বীপ রাষ্ট্র হিসেবে খ্যাত মৌরিশাস, বাহামা, ফিজি, মালদ্বীপ, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, সিসিলি, ক্যারাবীয় অঞ্চলে পর্যটনশিল্প ব্যাপক বিকাশ লাভ করেছে। পর্যটনের মাধ্যমে ব্যাপক পরিমাণের অর্থ মালামাল পরিবহন এবং সেবা খাতে ব্যয়িত হয়, যা বিশ্বের মোট জাতীয় উৎপাদনের প্রায় ৫ শতাংশ। অর্থনীতির সহায়ক সেবা খাত হিসেবে পর্যটনের সাথে জড়িত রয়েছে বিপুলসংখ্যক লোক। এর ফলে উল্লেখযোগ্য জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সেবাখাত বা শিল্পের মধ্যে রয়েছে পরিবহন ব্যবস্থা যাতে বিমান, হোটেল, রিসোর্ট এবং আমোদ-বিনোদনের মধ্যে চিত্তবিনোদন পার্ক, শপিংমল, সংগীত মঞ্চ, থিয়েটার ইত্যাদি। বিশ্ব পর্যটন সংস্থার তথ্যমতে, স্বল্প সময়ের মধ্যে এ শিল্পে ২৯ কোটি ৭০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে, যা বিশ্ব অর্থনীতিতে অবদান রাখবে ১০.৫ ভাগ। বাংলাদেশি এ বিশাল বাজার ধরতে পারলে পর্যটনের হাত ধরেই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশের অর্থনীতি। সাম্প্রতিক সময়ে দেশের পর্যটন খাতে বিদেশি পর্যটকদের আগমন আশঙ্কাজনকভাবে কমে গেছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২৪ সালে বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের খরচ ১ কোটি ৩০ লাখ মার্কিন ডলার কমেছে, যা দেশি মুদ্রায় প্রায় ১৫৯ কোটি টাকা। ফলে দেশের পর্যটন এখন শুধুমাত্র দেশি পর্যটক নির্ভর হয়ে পড়েছে। ঈদসহ ছুটির দিনগুলোতে অভ্যন্তরীণ পর্যটনকেন্দ্রগুলোতে ভিড় থাকলেও আন্তর্জাতিক পর্যটনের চিত্র ভিন্ন। এক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় এখনো আমরা পিছিয়ে। অথচ বিষয়টি ছিল সম্ভাবনাময় রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অপার সম্ভাবনার দুয়ার। অনেক আগে থেকেই জিডিপিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার যোগ্যতা ছিল এই শিল্পের। কিন্তু অবহেলা এবং উন্নাসিকতার কারণে পর্যটনশিল্প দিন দিন গুরুত্ব হারাচ্ছে এবং শিক্ষিত প্রজন্ম পর্যটন পেশায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও এই শিল্প সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। অনেকেই এই পর্যটনকে ক্ষণিকের পেশা হিসেবে নেন। অথচ পর্যটন শুধু দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় এটি কৃষি, হস্তশিল্প, পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং অসংখ্য ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যাবসার সঙ্গে সরাসরি এবং পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত। বিশ্বের কয়েকটি দেশ একমাত্র পর্যটনকে অবলম্বন করেই সমৃদ্ধির শিখরে আরোহণ করছে। আমাদের দেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশ ঠিকমতো ও পরিকল্পিতভাবে করতে পারলে সুইজারল্যান্ড, পাতায়া, ব্যাংককের মতো ট্যুরিজম এখানেও গড়ে উঠতে পারে।