হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ বা সংস্কার করা হয় মহাসড়ক গুলো। অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহনের কারণে অল্পসময়েই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে সড়ক-মহাসড়ক। মহাসড়কগুলো টেকসই করতে ক্ষতি রোধ এবং অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রনে বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্নস্থানের মতো ময়মনসিংহের ত্রিশালেও ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। চলমান ওই কাজ আওয়ামী সরকারের পতনের পরপরই বন্ধ হয়ে যায়। এক বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও কাজ শুরু করছে না ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ফলে ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন কর্মযজ্ঞ আসছে না কোন কাজে। পরিকল্পনা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক।
সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৬ সালে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ-ঢাকা (জয়দেবপুর) ৮৭ কিলোমিটারের মহাসড়কটি চারলেনে উন্নীতকরণের কাজ শেষ হয়। বিভিন্নস্থানে সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় ২০২২ সালে ময়মনসিংহ বাইপাস মোড়ের দিঘারকান্দা হতে জৈনা বাজার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের প্রায় ৫০ কিলোমিটারে পূর্বপাশের লেনটি ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ডিবিএসটি’র সংস্কার কাজ হয়। (ডিবিএসটি’র কাজের ধরণ হলো, মিশ্রণ নয়, পিচঢালাইয়ের পর ওই অংশের ওপর আলাদা করে ফেলা হয় পাথর। এরপর হালকা যানে তা রোলিং করা হয়।) বছর না ঘুরতেই সড়কের পরিস্থিতি আরো বেহাল হয়ে পড়ে। ৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই সংস্কারকাজটি যেন বিফলে যায়। সম্প্রতি এ মহাসড়কের খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্থ বিভিন্নস্থানে চলছে আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ।
বাংলাদেশ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের কাছে দ্রুত সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার কারণ হিসেবে যে বিষয়টি চিহ্নিত হয়, তা হলো, যানে অতিরিক্ত পণ্য বা মালামাল বহন করা। অতিরিক্ত পন্যবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের ত্রিশাল বাসষ্ট্যান্ড এলাকা সংলগ্ন সড়ক ও জনপথ বিভাগের স্টক ইয়ার্ডের বিশাল জায়গাজুড়ে ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় তারা। কাজটি পায় এনজিই নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ২০২১ সালের আগস্টে শুরু হওয়া ওই স্টেশন নির্মাণকাজে ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৮ কোটি টাকা। যথাসময়ে কাজ শুরু হলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট সরকারের পতনের পরপরই বন্ধ হয়ে যায় নির্মাণকাজ। এরইমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে এক বছরেরও অধিক সময়। তবু কাজ শুরু করছে না ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
সরেজমিনে দেখা যায়, যানবাহনের প্রবেশপথ থেকে বহির্গমনের শেষপ্রান্তসহ অপেক্ষমাণ স্থানেও ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়াও অবকাঠামোগত নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। অফিস ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হলেও দরজা-জানালা স্থাপন করা হয়নি। বাকি রয়েছে রংয়ের কাজও। দীর্ঘদিন কাজ বন্ধ থাকায় শেওলা পড়ে গেছে অফিস ভবনটিতে। ওই ভবনের চারপাশে জন্মানো গাছ-ঘাসে জঙ্গলে পরিনত হয়েছে। কাজ বন্ধ কেন, কবেই বা আবার শুরু হবে জানতে চাইলে, দেখভালের দায়িত্বে থাকা আনসার বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্যারেরা বলতে পারবে।
স্থানীয় মতিউর রহমান বলেন, মহাসড়ক রক্ষায় ‘এক্সেল লোড কন্ট্রোল স্টেশন’ নির্মাণ একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। যা বাস্তবায়নের জন্য দ্রুত কাজ শেষ করে এটি চালু করা খুবই প্রয়োজন বলে তিনি জানান।
কাজ প্রায় শেষ, এখন শুধু বাকি আছে দরজা, জানালার থাইগ্লাস লাগানো এবং রং করা। এক্সেল লোড মেশিন স্থাপন আলাদা প্যাকেজ করে স্থাপন করা হবে বলে জানান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোজাহিদুল ইসলাম।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ ময়মনসিংহের নির্বাহী প্রকৌশলী সাদ্দাম হোসেন জানান, সড়কের ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ভারবাহী যানবাহন নিয়ন্ত্রন করা যাবে। এতে সড়কের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি পাবে। অতিরিক্ত পণ্য বা মালামাল বহনকারী চালককে জরিমানা করা হবে কিনা জানেন তিনি।
এক বছরের বেশি সময় ধরে কাজ বন্ধ কেন ? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা অতি দ্রুতই কাজ সম্পন্ন করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন।