খুলনায় গৃহবধূকে বেঁধে লুটপাট : দু’ নারীসহ আটক ৩

এফএনএস (এম এ আজিম; খুলনা) : | প্রকাশ: ১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪৮ পিএম
খুলনায় গৃহবধূকে বেঁধে লুটপাট : দু’ নারীসহ আটক ৩

ভাড়াটিয়ার পরিচয়ে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার জন্য একজন পুরুষ ও দু’জন নারী নগরীর একটি বাড়িতে যান। সেখানে ঘর দেখার এক পর্যায়ে গৃহবধূর কাছে পানি পান করতে চান তারা। কথা-বার্তার মাধ্যমে জানতে পারেন ওই সময় বাড়িতে গৃহবধূ ছাড়া আর কেউই নেই। আর এ সুযোগকেই বেছে নেয় ভাড়াটিয়া নামধারী দুর্বৃত্তরা। তারা পিস্তল ঠেকিয়ে ওই গৃহবধূর মুখে টেপ ও ওড়না দিয়ে বেঁধে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালংকারসহ লুটে নেয় ১ লাখ ৮২ হাজার টাকার মালামাল। এমনকি গৃহবধূকে মারধরও করা হয়। পরে নির্বিঘ্নে তারা ওই বাড়ি ত্যাগ করে। এ ঘটনা ৩০ অক্টোবর নগরীর সদর থানাধীন ৯নং গলির বিকে মেইন রোডস্থ পূর্ব বানিয়াখামার মিস্ত্রিপাড়া বাজার এলাকার। 

এদিকে, এ ঘটনায় গতকাল ৩১ অক্টোবর গৃহকর্তা চয়ন কুমার মন্ডল বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ সিসিটিভি’র ফুটেজ দেখে তাৎক্ষনিক অভিযান শুরু করে। সে মোতাবেক শনিবার ভোর রাতে নগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ গ্লাক্সোর মোড় মসজিদ গলিতে অভিযান চালিয়ে দু’ নারীসহ ৩জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় লুটকৃত কিছু নগদ টাকা এবং মোবাইলসহ অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়। 

শনিবার (১ নভেম্বর) দুপুরে খুলনা সদর থানায় অনুষ্ঠিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায়। উপস্থিত ছিলেন সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) শিহাব করিম ও খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম। 

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে-বাগেরহাট সদর উপজেলার কৃষ্ণনগর গ্রামের আমির আলীর পুত্র আরিফ হাসান রাসেল (২৯), মোরেলগঞ্জ উপজেলার বিশারীঘাটা গ্রামের শাহাদাৎ হোসেনের কন্যা মারিয়া আক্তার মুন্নি (১৯) ও খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার জলমা ইউনিয়নের মুক্তিবানী সংস্থা ও গিলবোর্ড সংলগ্ন দাউনিয়াফাদ গ্রামের সনজিত রায়ের স্ত্রী কলি পান্ডে (৪৫)।ি এরা সবাই নগরীর খানজাহান আলী রোডস্থ গ্লাক্সোর মোড় মসজিদ গলি এলাকায় বসবাস করেন। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নগরীর সদর থানাধীন ৯নং গলির বিকে মেইন রোডস্থ পূর্ব বানিয়াখামার মিস্ত্রিপাড়া বাজার এলাকার বাসিন্দা চয়ন কুমার মন্ডলের ভাড়া দেওয়ার জন্য ফেসবুকে ‘খুলনার বাসাবাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়’ শিরোনামে বিভিন্ন গ্রুপে বাসা ভাড়া দেওয়া হবে মর্মে বিজ্ঞাপন দেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত ৩০ অক্টোবর ‘উম্মে মুনা’ শিরোনামের ফেসবুক প্রফাইল থেকে বাসা দেখতে যাওয়ার জন্য ম্যাসেজ দেওয়া হয়। কিন্তু গৃহকর্তা চয়ন কুমার মন্ডল অফিসে থাকায় তার স্ত্রী প্রতিমা মন্ডলের মোবাইল নম্বর দিয়ে তার সাথে কথা বলে বাসা দেখতে যেতে বলেন। তিনি তার স্ত্রীকে ফোন করে বাসা দেখানোর জন্য বলে দেন। সে মোতাবেক তার স্ত্রী নিচ তলার বাসা দেখানোর উদ্দেশ্যে নিচে এসে দেখতে পান ৩ জন ব্যক্তি (যার মধ্যে ১ জন পুরুষ এবং ২ জন নারী) অপেক্ষা করছেন। তখন তিনি বাসার গেট খুলে তাদেরকে বাসা দেখান। এরপর তারা পানি পান চাইলে তিনি তাদেরকে বাড়ির তৃতীয় তলার রুমে নিয়ে যান। এ সময় ওই ঘরে কেউ না থানার সুযোগে তারা ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে গৃহবধূর পিঠ ও গলায় পিস্তল ঠেকিয়ে তার মুখে টেপ ও ওড়না দিয়ে বেঁধে এলোপাতাড়িভাবে মারপিটে করে। বিশেষ করে হাতে ও মাথায় আঘাত করে বাসার ড্রয়ারে থাকা নগদ ৬২ হাজার টাকা ও এক জোড়া স্বর্ণের কানের দুল, দুই টি স্বর্ণের আংটিসহ ১ লাখ ৮২ হাজার টাকা মূল্যের মালামাল নিয়ে নিরাপদে বেরিয়ে যায়। 

প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, এ ঘটনায় তিনি অজ্ঞাত পরিচয়ের ব্যক্তিদের আসামি করে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে ওই বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ এবং তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় অভিযান

চালিয়ে উল্লিখিত আসামিদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ টি আসল পিস্তল সদৃশ কালো রংয়ের লাইটার পিস্তল, ৩ টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ১টি ক্যাপ, আসামীদের ব্যবহৃত ২ জোড়া স্যান্ডেল ও একসেট রোরকা এবং নগদ ২ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে কেএমপি’র উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) সুদর্শন কুমার রায় বলেন, দুর্বৃত্তরা বাড়ি ভাড়া নেওয়ার নাম করে অপরাধ কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এ কারণে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়ি মালিকদের আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে