বাংলাদেশ প্রবেশ করেছে একাধিক জটিল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি- যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও অর্থনৈতিক স্থবিরতা। বিশ্বব্যাংক ও সিপিডির সামপ্রতিক বিশ্লেষণ অনুযায়ী, দেশের প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশে নেমে এসেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান ও ভোক্তা আস্থার ওপর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে স্পষ্টভাবে। এই পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা এখন আর কেবল রাজনৈতিক দাবি নয়- এটি অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পূর্বশর্ত। গত বছর দেশের বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগে অনাগ্রহী, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষমাণ, আর সাধারণ মানুষ মূল্যস্ফীতি ও আয়-ব্যয়ের বৈষম্যে দিশেহারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে, যা অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা শুধু বিনিয়োগে নয়, প্রশাসনিক কার্যকারিতা, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা রপ্তানি ও বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, যেখানে ক্রেতারা স্থিতিশীল সরবরাহ চেইন চায়, সেখানে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে প্রয়োজন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক পরিবেশ, যেখানে সব পক্ষের অংশগ্রহণ নিশ্চিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কার্যকর থাকবে। নির্বাচন-পরবর্তী রাজনৈতিক সংলাপ, বিরোধী দলের সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিতকরণ এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা- এসবই আস্থার পরিবেশ গঠনে সহায়ক হতে পারে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে হলে রাজনৈতিক সমঝোতার পাশাপাশি প্রশাসনিক স্বচ্ছতা, দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম এবং বিনিয়োগবান্ধব নীতিমালার বাস্তবায়ন জরুরি। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া কোনো উন্নয়ন টেকসই হয় না- এটি ইতিহাসের শিক্ষা। বাংলাদেশের সামনে এখন যে চ্যালেঞ্জ, তা কেবল অর্থনৈতিক নয়- এটি নেতৃত্বের প্রজ্ঞা ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলতার পরীক্ষাও। এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হলে প্রয়োজন হবে সাহসী, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ও সমন্বিত পদক্ষেপ। তাহলেই সম্ভব হবে আস্থা ফিরিয়ে আনা, অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করা এবং জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করা।