ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার ২০২৫-২৬ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট প্রণয়ন দ্রুত করার উদ্যোগ নিয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ যেভাবে কৃচ্ছ্রসাধনের নীতি অব্যাহত রেখেছে, তা দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলেই মনে হয়। তবে এর বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণের প্রশ্নে সতর্ক থাকা জরুরি। সরকারি ব্যয়ের নিয়ন্ত্রণে এবারও বিদেশ ভ্রমণ, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামে অংশগ্রহণ এবং নতুন যানবাহন ক্রয় বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু অত্যাবশ্যকীয় ক্ষেত্রে সীমিত বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি থাকবে। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে-অতিরিক্ত বরাদ্দ চাওয়া যাবে না, সংশোধিত বাজেটের প্রাক্কলন মূল বাজেটের সীমার মধ্যেই রাখতে হবে। অর্থাৎ ব্যয়ের যে অংশে নমনীয়তা থাকবে, তা মূলত অভ্যন্তরীণ খাতসমন্বয়ের মাধ্যমেই। এই সিদ্ধান্তের পেছনে দুটি বাস্তব কারণ বিদ্যমান। প্রথমত, চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার সংকট সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থায় চাপ সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনিক ব্যয় বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকায় অর্থ বিভাগ বাজেট নিয়ন্ত্রণে আগেভাগেই পদক্ষেপ নিচ্ছে। ঐতিহ্যগতভাবে বাজেট সংশোধন মার্চে করা হলেও এবার ডিসেম্বরেই তা সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যাতে নির্বাচনকালীন সময়েও রাজস্ব ও উন্নয়ন ব্যয় নিয়ন্ত্রণে থাকে। অবশ্য কৃচ্ছ্রসাধনের এই পদক্ষেপ জনসেবামুখী খাতগুলোকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সেটি নিশ্চিত করাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা ও কৃষি-এই খাতগুলোতে বরাদ্দ কমে গেলে তা সরাসরি নিম্ন ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠীর ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তাছাড়া উন্নয়ন প্রকল্পে অব্যয়িত অর্থ পরিচালন বাজেটে স্থানান্তর না করার নির্দেশ ভবিষ্যৎ বাস্তবায়ন সক্ষমতাকেও সীমিত করতে পারে। তবে ইতিবাচক দিক হলো-অর্থ বিভাগ বাজেট প্রণয়নে অগ্রাধিকার খাতগুলোতে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার কথা বলেছে। এর অর্থ, রাজস্ব ঘাটতি মোকাবিলা করতে গিয়ে উৎপাদনশীল খাতগুলো যেন পিছিয়ে না পড়ে, সে বিষয়েও সচেতনতা রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আর্থিক শৃঙ্খলা রক্ষা সরকারের জন্য যেমন রাজনৈতিকভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, তেমনি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যও অপরিহার্য। তাই এখন প্রয়োজন ব্যয় নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে কার্যকরতা বাড়ানো, অনুৎপাদনশীল খরচ কমানো এবং উন্নয়ন ব্যয়ের মানোন্নয়ন নিশ্চিত করা। কৃচ্ছ্রসাধন যদি শুধু ব্যয় রোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে তা হবে অস্থায়ী স্বস্তি। কিন্তু যদি এই উদ্যোগ প্রশাসনিক দক্ষতা, ব্যয় স্বচ্ছতা ও জনস্বার্থ নিশ্চিত করে-তাহলে এটি হতে পারে একটি নির্বাচনের আগে দায়িত্বশীল আর্থিক ব্যবস্থাপনার উদাহরণ।