নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজারে ডাকাতির অপতৎপরতা দীর্ঘদিন ধরেই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাঁতশিল্প, বাটিক ও কাতান শাড়ির জন্য পরিচিত এ এলাকা বহু বছর ধরে ডাকাতচক্রের কার্যক্রমে ক্ষতিগ্রস্ত। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বলছে, পুলিশের তথ্য ও স্থানীয়দের বর্ণনা অনুযায়ী, এখানে এখনো কমপক্ষে ৪০টি ডাকাতির হটস্পট ও ১১টি গোপন আস্তানা সক্রিয় রয়েছে। শুধু তাই নয়, আড়াইহাজারে সক্রিয় ১৭২টি চক্রে সদস্যের সংখ্যা প্রায় ১৬ হাজার বলে স্থানীয় সূত্রের দাবি। এটি কোনো সামান্য অপরাধচক্র নয়; বরং একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক, যা পার্শ্ববর্তী সোনারগাঁও, বন্দর এবং নরসিংদীর কিছু এলাকায়ও বিস্তৃত। গত ছয় দশকে ডাকাতির সময় গণপিটুনিতে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১১৯ ডাকাত। অথচ এতসব ঘটনা ঘটার পরও এলাকায় শান্তি ও নিরাপত্তা ফেরেনি। কারণ, ডাকাতির শেকড় কেবল অপরাধী গোষ্ঠীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি স্থানীয় রাজনীতি, ভৌগোলিক সুবিধা ও দুর্বল আইন প্রয়োগ ব্যবস্থার সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত। অভিযোগ আছে, ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে ডাকাত চক্রের পৃষ্ঠপোষকতাও বদলায়। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় ও মামলা পরিচালনায় দুর্বলতা অপরাধীদের বারবার সুযোগ করে দিচ্ছে। আড়াইহাজারের বিস্তীর্ণ নদীবেষ্টিত এলাকা ও পার্শ্ববর্তী জেলার সংযোগপথ ডাকাতদের দ্রুত চলাচল ও লুকিয়ে থাকার পথ তৈরি করে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসংখ্যা সীমিত হওয়ায় টহল ও অভিযান অনেক সময় কার্যকর হয় না। এদিকে সাধারণ মানুষ ভয়, ঝুঁকি ও ঝামেলার কারণে অনেক ডাকাতির ঘটনা থানায় অভিযোগ পর্যন্ত দেয় না। ফলে অপরাধীর সাহস আরও বাড়ে। ডাকাতির নতুন কৌশলের বিষয়টিও উদ্বেগজনক। ফেরিওয়ালা, ঝি বা রাখাল সেজে তথ্য সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে নারী সদস্য ব্যবহার পর্যন্ত-ডাকাতদল নিজেদের কৌশল আধুনিক করছে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় জনগণকেও সচেতন না হলে পুলিশের একার পক্ষে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। যে এলাকায় ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মামলা ডাকাতিসংক্রান্ত, সেখানে শুধু গ্রেপ্তার অভিযান যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন সমন্বিত পদক্ষেপ। প্রশাসন, স্থানীয় নেতৃত্ব, কমিউনিটি পুলিশিং ও সাধারণ মানুষের সক্রিয় ভূমিকা অপরিহার্য। প্রতিটি গ্রাম ও মহল্লায় পাহারা ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। সন্দেহজনক আগন্তুক, ভাড়াটিয়া বা শ্রমিক সম্পর্কে নিশ্চিত তথ্য সংগ্রহ নিশ্চিত করতে হবে। সিসিটিভি স্থাপন, রাত্রিকালীন টহল ও দ্রুত বিচার প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা প্রয়োজন। আড়াইহাজারের নিরাপত্তা ফিরিয়ে আনা শুধুমাত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায় নয়; এটি সমগ্র সমাজের দায়িত্ব। প্রশ্ন হচ্ছে-এক শিল্পসমৃদ্ধ সম্ভাবনাময় অঞ্চলকে কেন আমরা আতঙ্কের ভূখণ্ড হতে দেব? এখনই কঠোর ও কার্যকর উদ্যোগ না নিলে এই অপরাধচক্র আরও শক্তিশালী হবে। সময় এসেছে রাষ্ট্রের শক্ত হাতে এই অন্ধকার চক্রকে ভেঙে ফেলার। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই রাষ্ট্রের প্রথম দায়িত্ব-এ দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য বা বিলম্ব বরদাস্ত করা যায় না।