চট্টগ্রামের চান্দগাঁও ও পাঁচলাইশ অঞ্চলের জনজীবন দীর্ঘদিন ধরেই অস্ত্রশস্ত্র, চাঁদাবাজি ও প্রকাশ্য গোলাগুলির ছায়ায় ঝিমিয়ে আছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যে জানা গেছে, স্থানীয়রা ভুক্তভোগীদের রাতে ঘুম মানায় না, দিনের বাজারে কাজ করতেও অব্যাহত আতঙ্ক কাজ করে। পুলিশি অভিযানে কিছু অস্ত্র ও সদস্য গ্রেপ্তার হয়েছে, আবার দলনেতারা জামিনে বেরিয়ে পুনরায় অপরাধে লিপ্ত হচ্ছেন - এ চক্র যেন ভয়ানক এক সাইকেলে আটকে আছে যা থেকে বেরোতে জনমানুষ ও প্রশাসন দু’পক্ষকেই এখন দ্রুত ও যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শহিদুল ইসলাম বুইস্যা ও ইসমাইল হোসেন টেম্পু-দুই গোষ্ঠীর সংঘাত, আধিপত্য বিস্তার ও প্রতিহিংসার লড়াইয়ের মধ্যেই সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নস্যাৎ হচ্ছে। টেম্পু কারাগারে থাকায় কিছুদিন দলটি দুর্বল হয়েও বঁরংস্যা বাহিনী সুযোগ নিয়ে দাপট দেখাচ্ছে; কিশোরদের র্যাঙ্ক বাড়ানো, নির্যাতন ও চাঁদা আদায়-এসব কর্মকাণ্ডের বীজ কেবল অদূর ভবিষ্যতে বেশি ভয়াবহ ফল দেবে। যে এলাকায় গ্যারেজের সামনে প্রকাশ্যে গুলি ছোড়া হয়, সেখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা ও সামাজিক জীবন বিকশিত হওয়া কল্পনাও অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। মামলা-অভিযান হচ্ছে, গ্রেপ্তার হচ্ছে, কিন্তু সমস্যা কোথায়? সেটি স্পষ্ট-অস্ত্র ও অর্থায়নের উৎস মেলে না, দ্রুত বিচার ব্যবস্থা দুর্বল, জামিন প্রথা অপরাধীদের বারবার সুযোগ করে দিচ্ছে, এবং সমাজের নীরবতা অপরাধীদের আক্রমণকে উৎসাহিত করছে। শুধু পুলিশের হাতে দায়িত্ব চাপিয়ে দিলে পরিস্থিতি বদলানো যাবে না; এ সমস্যা নৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক বহুচরিত্রের। ফলে প্রতিকারও হতে হবে বহুমুখী ও সমন্বিত। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কেবল গ্রেপ্তার হিসেবেই নয়, অপরাধী চক্রের আর্থিক ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ধ্বংসে কাজ করতে হবে। কৌশলগত তদারকি, সিসি ক্যামেরা, গোয়েন্দা তথ্য যাচাই ও দ্রুত অভিযান একযোগে নিতে হবে। এছাড়াও বিচার ব্যবস্থায় দ্রুততা ও স্থিতিশীলতা আনা জরুরি; অপরাধী সন্ত্রাসী চক্রগুলো বারবার জামিন পেয়ে আবার অপকর্মে জড়ালে নাগরিকদের আস্থা ফেরানো কঠিন হবে। পাশাপাশি কিশোর গ্যাং ঠেকাতে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটির সমন্বিত পুনর্বাসন প্রোগ্রাম জরুরি-শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পথ করে দিলে অপরাধে টানার সুযোগ কমে যাবে। চান্দগাঁওবাসীর জীবনের নিরাপত্তা আর বন্দুকের তর্কের বিষয় নয়; এটি রাষ্ট্র ও সমাজের মৌলিক নিশ্চিতি। স্থানীয় প্রশাসন, র্যাব ও সিটি পুলিশের মধ্যে সমন্বিত কৌশল গ্রহণ ও দ্রুত বাস্তবায়ন ছাড়া এই অঞ্চলের শান্তি ফেরানো অসম্ভব। সময় নষ্ট করলে অপরাধীরা আরও শক্তিশালী হবে, আর শহরটি হারাবে তার স্বাভাবিক দিনযাপন-একটি সাধারণ নাগরিকের ক্ষতি হবে বহু গুণে। এখনই দরকার রাজনৈতিক ইচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা ও সামাজিক সতর্কতার সমন্বয়; নইলে চান্দগাঁওয়ের মানুষকে নিরাপদ করে তোলা আমাদের সবার জন্য অসম্পূর্ণ আশা হয়ে থাকবে।