জকিগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশের পর পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র দুঃখ প্রকাশ

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম, সিলেট) :
| আপডেট: ৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৩৫ পিএম | প্রকাশ: ৩ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৩০ পিএম
জকিগঞ্জ সীমান্তে অনুপ্রবেশের পর পতাকা বৈঠকে বিএসএফ’র দুঃখ প্রকাশ

সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদের অনুপ্রবেশ ও স্থানীয় কৃষকদের ফসল নষ্টের ঘটনায় দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে এধরনের অপেশাদারী আচারণের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ। সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে বিএসএফ তাদের সদস্যদের বেআইনি প্রবেশ ও ফসল নষ্টের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে।

জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার বলেন, পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কর্মকর্তাদের কাছে সীমান্তের মানচিত্রসহ বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। এতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে। বিএসএফ প্রতিনিধিদল তাদের টহল দলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি পরবর্তীতে জানানো হবে।

এর আগে রোববার (২ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ভারতের চরবাগান সীমান্ত চৌকি থেকে বিএসএফের চার সদস্য স্পিডবোটে করে সুরমা নদী পার হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য স্থাপন করা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলেন।

স্থানীয়রা জানায়, বিএসএফ সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ড দেখে কয়েকজন যুবক প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের থামানোর চেষ্টা করেন এবং পুরো ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ভিডিওতে দেখা যায়, বিএসএফ সদস্যরা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলছেন এবং স্থানীয়রা প্রশ্ন করছেন, “এটি বাংলাদেশের মাটি, আপনারা কেন সীমান্ত অতিক্রম করেছেন?”স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ সদস্যরা পরে স্পিডবোটে চড়ে ভারতের দিকে ফিরে যান।

ঘটনাটি নিয়ে মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আব্দুশ শহীদ বলেন, “ভিডিওটি দেখেছি। ঘটনাস্থল সুরমা নদীর এপারের এলাকা, যা বাংলাদেশের ভেতরেই। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ সদস্যদের ফিরে যেতে দেখা গেছে।”

বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করে বিএসএফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়। পতাকা বৈঠকে বিজিবি সীমান্ত মানচিত্র দেখিয়ে প্রমাণ করে যে ঘটনাস্থল বাংলাদেশের ভেতরে এবং বিএসএফের টহল দলের এমন অনুপ্রবেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের শামিল।

বিজিবি ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা পুনরাবৃত্তি রোধে কড়া প্রতিবাদ জানায়। এ সময় বিএসএফ প্রতিনিধি দল নিজেদের ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা প্রকাশ করে এবং টহল কার্যক্রমে আরও সতর্কতা অবলম্বনের আশ্বাস দেয়।

এদিকে, সীমান্তে এমন অনুপ্রবেশে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তারা দাবি করেছেন, ফসল ও বাঁধের যে ক্ষতি হয়েছে তার যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সীমান্ত এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রায় প্রতি বর্ষা মৌসুমেই সুরমা নদীর তীরবর্তী এসব এলাকায় বিএসএফ সদস্যরা টহলের অজুহাতে সীমান্ত অতিক্রম করেন। এতে কৃষক ও নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে