গত ১ বছরে স্বর্ণের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। দাম আকাশ চুম্বী হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে স্বর্ণ ব্যবসায়ীসহ সাধারণ ক্রেতারা। পাশাপাশি বেকার হয়ে পড়েছে অনেক স্বর্ণ ব্যবসায়ী ও কারিগর। অনেকে এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে অন্য পেশায়। গতকাল স্বর্ণ ব্যবসার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কথা হয় জেলা স্বর্ণ ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ লিটন এর সাথে। তিনি হতাশাগ্রস্থ হয়ে বলেন ব্যবসার দুর্দশার কথা। গত ২০১১ সালে দফায় দফায় স্বর্ণের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা শূণ্য হয়ে পড়েছে বাজার। পাশাপাশি কারিগররা ন্যায্য মজুরী না পেয়ে এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে অনেক মালিক। এক দিকে দাম বৃদ্ধি অপরপাশে ক্রেতার অভাব। দোকান ভাড়া এবং জামানত সব মিলিয়ে আজ দিশেহারা স্বর্ণ ব্যবসায়ীরা। এদিকে আবার সরকারী চাপ, পৌর লাইসেন্স,ইনকাম ট্যাক্স,ভ্যাট এবং এসিড ব্যবহারের লাইসেন্স বিষিয়ে তুলেছে ব্যবসায়ীদের।
তিনি আরো বলেন,এখন আর সোনায় কোন ভেজাল নেই। সোনা পরীক্ষা করার জন্য সৈয়দপুরে তিনটি মেশিন রয়েছে। ক্রেতাদের প্রতারণার কোন সুযোগ নেই। যারা বড় ব্যবসায়ি তারা বাজারে ঠিকই টিকে আছে। আর যারা মধ্যম তারা সব সময় অস্থিরতার মধ্যে ব্যবসা করছে। কারণ আজকে একটা রেটে অর্ডার নেয়া হল দেখা যায় কালকে হঠাৎ দাম বেড়ে গেল। ক্রেতারা কিন্তু কোন কথা শুনবে না। তারা জিনিস চায় তবে বেশি দাম দেবে না। এ ক্ষেত্রে আমরা অনেক সময় অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে থাকি। অনেকে পুঁজি হারিয়ে পথে বসেছে। প্রতিদিন সোনার দাম পরিবর্তনের কারণে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা নিঃস্ব হচ্ছে।
দামের ব্যাপারে চয়ন জুয়েলার্সের মালিক মাহবুবুল ইসলাম বলেন,১৮ ক্যারেট প্রতি ভরি ১ লাখ ৬৫ হাজার ৮০ টাকা,২১ ক্যারেট প্রতি ভরি ১ লাখ ৯৩ হাজার ৫৯৬ টাকা এবং ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি ২ লাখ ১ হাজার ৭৭৬ টাকা। সনাতন প্রতি ভরি ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৮০ টাকা এবং রূপা ২২ ক্যারেট প্রতি ভরি ৪২ হাজার টাকা। এভাবে দাম বাড়ার কারণে তারা আগের মতো ক্রেতা পাচ্ছেন না। যার কারণে অনেক স্বর্ণ মালিক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। এ ব্যবসা ছেড়েছে,হক জুয়েলার্স,সাগর জুয়েলার্স, সখিনা জুয়েলার্স,ইসলাম জুয়েলার্স, সোহাগ জুয়েলার্স,বিসমিল্লাহ জুয়েলার্স, লেলিন জুয়েলার্স, আমেনা জুয়েলার্স, মৌসুমী জুয়েলার্স,কলিমুল্লাহ জুয়েলার্স,নুর হাসান জুয়েলার্স,লাবনী জুয়েলার্স, গোলজার জুয়েলার্স, সেলিম জুয়েলার্সসহ আরো অনেকে। পাশাপাশি এ পেশা ছেড়ে গেছে স্বর্ণ কারিগর আমিনুল,জহুরুল,ওবায়দুল,রহিম, আরমান,আনিছুলসহ অনেকে। স্বর্ণ কারিগর সমিতির সভাপতি নূরুজ্জামান রাজু ও সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম জানায়,বর্তমানে এ শহরে স্বর্ণ ব্যবসায়ী রয়েছে প্রায় ২১২ জন। কারিগর রয়েছে প্রায় ৪১০ জন।
তারা বলেন স্বর্ণের দাম স্বাভাবিক না হলে এ পেশা ছেড়ে আমরাও অন্য পেশার হাল ধরবো। তাই এ ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে হলে স্বর্ণের দাম সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। সরকারীভাবে ব্যবসায়ীদের মধ্যে আরও একটি চাপ পড়েছে। তা হলো এসিড লাইসেন্স। সোনার উজ্জ্বলতা বাড়াতে এবং পাকাকরণে এসিড ব্যবহার করা হয়ে থাকে। তবে সকল ব্যবসায়ী এসিড ব্যবহার করে না। সৈয়দপুরে নির্দিষ্ট ৭ থেকে ৮টি দোকান এটি ব্যবহার করেছিল বর্তমানে তা কমে এখন মাত্র ৪টি দোকানে এ কাজ হয়ে থাকে। সেগুলো হল
বদরুল আলম,জয়া জুয়েলার্স,পাপ্পু,স্বপন স্মৃতি জুয়েলাস ও আবুল হোসেন দোকানে সোনা ধৌত করণ করা হয়ে থাকে। রং পলিশের দোকানদাররাও এসিড ব্যবহার করে থাকে।
চয়ন জুয়েলার্সের মালিক মাহবুবুল ইসলাম ও হেমা জুয়েলার্সের মালিক মোঃ সামচু জানান,আমরা যখন কাজ শিখি তখন দুই ভরি সোনার দাম অগ্রিম দোকান মালিককে দিয়ে কাজ শিখতে হতো আর এখন দোকান মালিকরা আগাম টাকা দিয়ে কাজ শিখার লোককে আনতে হচ্ছে। তারপরও লোক পাওয়া যাচ্ছে না। কারণ এখন একজন লোক অটো চালিয়ে দিনে ১ হাজার থেকে দেড় হাজার টাকা ইনকাম করতে পারে। কেন তারা দোকানে অল্প বেতনে কাজ করবে।