বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে মেহেরপুরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৪১ পিএম
বিএনপির মনোনয়ন ঘিরে মেহেরপুরে সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ

মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে বিএনপির মনোনয়নকে কেন্দ্র করে বিক্ষোভ, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক সংসদ সদস্য আমজাদ হোসেনকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর বঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টনের সমর্থকরা মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) সকাল থেকে গাংনী শহরে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ শুরু করে। পরে সংঘর্ষে রূপ নিলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সোমবার (৩ নভেম্বর) বিকেলে ঢাকায় দলের ২৩৮ আসনের প্রার্থীর তালিকা ঘোষণা করেন। এর মধ্যে মেহেরপুর-২ আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন পান সাবেক এমপি আমজাদ হোসেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, কিন্তু তিনি বঞ্চিত হন। মনোনয়ন ঘোষণার কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সমর্থকেরা গাংনীতে বিক্ষোভ শুরু করে এবং রাতেই আমজাদ হোসেনকে এলাকায় ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে টায়ার জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে।

পরদিন মঙ্গলবার সকাল থেকে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। সকাল ১১টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, হামলা ও ভাঙচুর চলে। এতে অন্তত ১০ জন আহত হন। সংঘর্ষকারীরা গাংনী বাজারের একাধিক হোটেল, দোকান ও বিএনপির প্রার্থীর কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শহর কার্যত রণক্ষেত্রে পরিণত হয় এবং শতাধিক দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

ঘটনার সময় বিএনপি প্রার্থী আমজাদ হোসেন বলেন, “মনোনয়ন ঘোষণার পর থেকে বঞ্চিত প্রার্থীর সমর্থকেরা এলাকায় উচ্ছৃঙ্খলতা সৃষ্টি করে। মঙ্গলবার সকালে আমি এলাকায় গেলে তারা ইটপাটকেল ছোড়ে, অফিস ও দোকানপাট ভাঙচুর করে।” তিনি জানান, তিনি তার কর্মীদের সংযমের আহ্বান জানান যাতে পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে না যায়।

অন্যদিকে মনোনয়ন বঞ্চিত জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন অভিযোগ করেন, “দলীয় মনোনয়নের নামে অবৈধ প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। এ মনোনয়ন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।”

গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “বিএনপির দুটি গ্রুপের সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ঘটে। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী মোতায়েন করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”

গাংনী থানার ওসি বানী ইসরাইল জানান, সংঘর্ষে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লেও বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। তিনি বলেন, “দোকানপাট খুলতে শুরু করেছে। তবে নতুন করে কোনো অঘটন এড়াতে পুলিশ শহরে টহল দিচ্ছে।”

সংঘর্ষের পর বুধবার (৫ নভেম্বর) বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে চার নেতাকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়। বহিষ্কৃতরা হলেন জেলা বিএনপির সভাপতি জাভেদ মাসুদ মিল্টন, গাংনী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আফাজ উদ্দিন কালু, জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক কাউসার আলী ও গাংনী পৌর বিএনপির সভাপতি মকবুল হোসেন মেঘলা। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “গাংনীতে সহিংসতা, হানাহানি ও পার্টি অফিস ভাঙচুরসহ জনস্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার কারণে তাদের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।”

স্থানীয় পর্যবেক্ষকরা বলছেন, মনোনয়ন বঞ্চিত নেতাদের ক্ষোভ শুধু মেহেরপুরেই নয়, বিএনপির অভ্যন্তরীণ সংকটের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা দিচ্ছে। তারা মনে করেন, মনোনয়ন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও ঐক্যের অভাব থাকলে নির্বাচনী প্রস্তুতিতে দল ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে