পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক: উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে ভোগান্তির বাস্তবতা

এফএনএস | প্রকাশ: ৪ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:১৮ পিএম
পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক: উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে ভোগান্তির বাস্তবতা

কাগজে-কলমে ছয় লেনের আধুনিক সড়ক হিসেবে পরিকল্পিত হলেও বাস্তবে নারায়ণগঞ্জের পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়ক আজ এক অন্তহীন দুর্ভোগের নাম। পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা গেছে, প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কটি বর্তমানে যেন এক খণ্ড ধ্বংসস্তূপ-খানাখন্দ, কাদা ও পুকুরে ভরা এক মরণফাঁদ। শিল্পনগরী নারায়ণগঞ্জের প্রাণ এই সড়কটি এখন শ্রমিক, ব্যবসায়ী, যাত্রী-সব শ্রেণির মানুষের জন্য ভোগান্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। এই সড়ক দিয়েই প্রতিদিন চলাচল করে প্রায় ছয় লাখ শ্রমিক, যারা বিসিক এলাকা থেকে মুক্তারপুর ব্রিজ পর্যন্ত বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত। প্রতিদিন কাদায় হেঁটে কিংবা ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থেকে তাদের কর্মস্থলে পৌঁছাতে হয়। এতে কর্মঘণ্টা যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি উৎপাদন ব্যয়ও বাড়ছে। পণ্যবাহী ট্রাক বা রিকশা উল্টে যাওয়া, মালপত্র নষ্ট হওয়া, এমনকি আহত হওয়ার ঘটনাও নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকল্পটি শুরু হয়েছিল উন্নত সড়ক যোগাযোগের প্রত্যাশায়। প্রথম ধাপে প্রায় ২,৬৫৯ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজ শুরু হয় এবং ২০২৫ সালের জুনে শেষ করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু ধীরগতির কারণে সময় বাড়িয়ে ব্যয়ও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩,৩০০ কোটি টাকায়। বর্তমানে কাজের অগ্রগতি ৬০ শতাংশে পৌঁছালেও নিচের সড়কে চলাচলের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা না থাকায় মানুষের ভোগান্তি কিছুতেই কমছে না। একদিকে উন্নয়নকাজের ধীরগতি, অন্যদিকে খোলা গর্ত, ফেলে রাখা নির্মাণসামগ্রী ও বৃষ্টিতে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা-সব মিলিয়ে সড়কটি এখন জনজীবনের জন্য এক বিপজ্জনক এলাকা। সরকারের বৃহৎ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সাফল্য নির্ভর করে শুধু কাজের পরিধির ওপর নয়, কাজের মান ও সময়সীমা মেনে চলার ওপরও। এই সড়ক প্রকল্পটি যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এবং মান বজায় রেখে সম্পন্ন করা যায়, তবে এটি মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা জেলার যোগাযোগে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে। কিন্তু যতদিন কাজ অসম্পূর্ণ থাকবে, ততদিন এই উন্নয়ন প্রকল্পই হয়ে থাকবে জনদুর্ভোগের আরেক নাম। উন্নয়ন মানে শুধু নতুন অবকাঠামো নয়-এর সঙ্গে যুক্ত মানুষের জীবনযাত্রার নিরাপত্তা ও স্বাচ্ছন্দ্যও। পঞ্চবটি-মুক্তারপুর সড়কের চলমান পরিস্থিতি সে প্রত্যাশার সঙ্গে যায় না। এখনই প্রয়োজন নির্মাণকাজের গতি বাড়ানো, বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা তৈরি করা এবং নিয়মিত তদারকি জোরদার করা। উন্নয়ন যদি নাগরিক ভোগান্তির কারণ হয়, তবে তা প্রকৃত অর্থে উন্নয়ন নয়-বরং ব্যর্থ পরিকল্পনার প্রতিচ্ছবি।