ঝিকরগাছায় গাছ টেন্ডারে, বিএনপি'র নাম ভাঙিয়ে ১৯ লাখ টাকা হাপিস

এফএনএস (মোঃ ইলিয়াস উদ্দিন; ঝিকরগাছা, যশোর) : | প্রকাশ: ৫ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:১০ পিএম
ঝিকরগাছায় গাছ টেন্ডারে, বিএনপি'র নাম ভাঙিয়ে ১৯ লাখ টাকা হাপিস

যশোরের ঝিকরগাছায় শতবর্ষী শিশু গাছ টেন্ডারে ২১ লাখ ৭০ হাজার টাকা (আয়কর ভ্যাট সহ) সরকারি কোষাগারে জমা পড়েছে। অতিরিক্ত ১৯ লাখ টাকা বিএনপি নেতাদের পকেটে চলে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ৩০ নভেম্বর বৃহস্পতিবার ঝিকরগাছার ডাক বাংলোয় ৩১ জন টেন্ডারে অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতিতে এ ঘটনা ঘটে। টেন্ডার কমিটির আহবায়ক সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং পৌর প্রশাসক নাভিদ সারওয়ার ভূমিকায় সরকারের হাতছাড়া হলো অনেকগুলো টাকা। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) রাতেই সকল ধরনের লেনদেন সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে।

টেন্ডারে অংশগ্রহণকারী একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ঝিকরগাছা প্রেসক্লাবের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক তরিকুল ইসলাম (স্থানীয় একটি প্রভাবশালী পত্রিকার সাংবাদিক) এবং সদ্য বিএনপিতে যোগদানকারী পৌর বিএনপি'র মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক এমরান রেজা খোকন শতবর্ষী শিশুগাছ টেন্ডারবাজিতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন।

ঝিকরগাছার ডাকবাংলায় আগত ৩১ জন গাছক্রয়ে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকেই টেন্ডারস্থলে ৮৬ হাজার টাকা জমা দেন। খুলনা, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, যশোর এবং ঝিকরগাছার ৩১ জন ব্যক্তি এ টেন্ডারে অংশগ্রহণ করেন। দূর দূরান্ত থেকে আগত ব্যক্তিদেরকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেন টেন্ডারবাজি চক্রের এই ৩ সদস্য।

শতবর্ষী শিশুগাছ  ক্রয়ে অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশ্যে ওই ৩ জন ছাফ জানিয়ে দেন গাছের টাকা স্থানীয় বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের ভাগ দিতে হবে। টেন্ডারের অংশগ্রহণকারীরা আরো জানান, শতবর্ষী শিশুগাছ গুলো টেন্ডার চক্রের ৩ সদস্য ১৭ লাখ টাকায় কিনে নেন। এরপর ওই কাজগুলো রফিক এবং সাচ্চুর নিকট ১৯ লাখ টাকা লাভে বিক্রি করে দেন। শতবর্ষী শিশু গাছ ক্রয়কারী সাচ্চু একথা স্বীকার করেছেন।

প্রেসক্লাবের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম এবং ও পৌরসভা বিএনপির মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ইমরান রেজা খোকনের বিরুদ্ধে প্রেসক্লাবে বসেই পৌরসভার ১৫ লাখ টাকার টেন্ডারের কাজ ভাগাভাগি করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। পৌর সদরের কাটাখাল এলাকার চাউল ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম খোকনের অভিযোগ - অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে এ দুই সাংবাদিক আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিয়ে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছে। আবু তালেবের অভিযোগ - বিএম স্কুলের কাছ থেকে লীজ নেয়া পুকুরটি আমার কাছ থেকে জোর করে নিয়ে নেয়া হয়েছে।

বি এম হাই স্কুলের পাশের জমির মালিক লাইলা ইয়াসমিন লীলা অভিযোগ করেন - সাংবাদিক তরিকুল ইসলাম আমার জমির কাজে ম্যাজিস্ট্রেটকে দিয়ে বাধা দিচ্ছেন।

উপজেলা বিএনপি'র সিনিয়র সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম জানান, উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দরিদ্র বালু উত্তোলনকারীদেরকে প্রশাসনকে দিয়ে ধরিয়ে জরিমানা আদায় করে। এরপর নিজেরাই আবার সেই বালু ক্রয় করছেন। আমাদের কাছে একাধিক ভুক্তভোগীরা এমন অভিযোগ করেন। ঝিকরগাছা বিএনপি'র সুনাম ক্ষুন্ন করেই চলেছে অথচ এদের বিরুদ্ধে রহস্যজনক কারনে কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।

পৌর সদরের শফি হোটেলের মালিক শফি অভিযোগ - এ দুই সাংবাদিক ম্যাজিস্ট্রেট নাভিদ সারোয়ারকে দিয়ে আমার টিনের চালা ভেঙ্গে দিয়েছেন। অথচ আওয়ামী লীগ আমল থেকে রাস্তা দখল করে থাকা নীরব স্নাকস হোটেল রাস্তা দখল করে আছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ার এ ব্যাপারে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় তার ভূমিকা রহস্যজনক।

শতবর্ষী শিশু গাছ টেন্ডারের টাকা ভাগাভাগির বিষয়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান সামাদ জানান, এ ধরনের ঘটনা আমার জানা নাই। কেউ বিএনপির নামে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকেন তার দায়ভার তাকেই বহন করতে হবে। টেন্ডার কমিটির আহবায়ক সহকারি কমিশনার (ভূমি) এবং পৌর প্রশাসক নাভিদ সারওয়ারকে ফোন করেও পাওয়া যায়নি।

ঝিকরগাছার ভুক্তভোগীদের দাবি - সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাভিদ সারওয়ারকে বদলি করা সহ বিএনপি'র সুনাম রক্ষার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে