ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা-সমন্বয়হীনতার চক্রে বন্দী উদ্যোগ

এফএনএস | প্রকাশ: ৬ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:৪৩ পিএম
ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা-সমন্বয়হীনতার চক্রে বন্দী উদ্যোগ

ঢাকার গণপরিবহন খাতকে শৃঙ্খলায় ফেরাতে সরকারের একের পর এক উদ্যোগ নেওয়া হলেও দৃশ্যমান পরিবর্তন আসছে না। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন, গোলাপি বাস সার্ভিস কিংবা ই-টিকেটিং-প্রত্যেকটি উদ্যোগই প্রথমে প্রত্যাশা জাগালেও শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতার তালিকায় যোগ হয়েছে। কারণ হিসেবে উঠে আসছে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও অংশীদারদের মধ্যে সমন্বয়ের ঘাটতি, কাঠামোগত দুর্বলতা এবং মালিকপক্ষের অসহযোগিতা। বাস রুট র‌্যাশনালাইজেশন প্রকল্পে ডিটিসিএ ও সিটি করপোরেশন নীতিগতভাবে একমত হলেও মাঠপর্যায়ে মালিকদের মধ্যে রুট ভাগাভাগি ও প্রতিযোগিতার দ্বন্দ্বে প্রকল্প থমকে যায়। গোলাপি বাস সার্ভিসও টেকেনি-শ্রমিকদের অনীহা, পর্যাপ্ত বাস না থাকা ও রক্ষণাবেক্ষণ জটিলতায় তা সীমিত রুটেই শেষ হয়ে গেছে। এবার আবার আলোচনায় এসেছে কাউন্টারভিত্তিক ই-টিকেটিং ব্যবস্থা। ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি, ডিএমপি, সিটি করপোরেশন ও সহজ লিমিটেডের যৌথ উদ্যোগে ‘ইন্ট্রাসিটি মেগা ই-টিকেটিং’ প্রকল্প চালুর পরিকল্পনা চলছে। সংশ্লিষ্টদের আশা, এটি চালু হলে সড়কে শৃঙ্খলা আসবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, পরিকল্পনা থাকলেও কার্যকর করার মতো অবকাঠামো ও প্রশাসনিক সমন্বয় এখনো অনুপস্থিত। বাসস্টপেজ নির্ধারণ, কাউন্টার স্থাপন, রাজস্ব ভাগাভাগি-সব বিষয়েই জটিলতা থেকে যাচ্ছে। সহজ লিমিটেড কর্মী নিয়োগ ও প্রযুক্তিগত প্রস্তুতির কাজ এগিয়ে নিলেও কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও সহায়তা না থাকলে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন অনিশ্চিত। পূর্বের অভিজ্ঞতা বলছে, পরিকল্পনা যতই আধুনিক হোক, মাঠপর্যায়ের বাস্তবতা ও সংশ্লিষ্ট পক্ষের দায়বদ্ধতা ছাড়া তা সফল হবে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রয়োজন কোম্পানিভিত্তিক পরিচালনা ব্যবস্থা, নির্দিষ্ট স্টপেজ ও রুটব্যবস্থাপনা, এবং সর্বোপরি রাজনৈতিক সদিচ্ছা। ২০০৪ সালের পরিবহন পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বর্তমান পর্যন্ত প্রায় দুই দশক ধরে বারবার দিকনির্দেশনা এসেছে, কিন্তু কার্যকর প্রয়োগ হয়নি। এক রুটে বহু কোম্পানির বাস চলা, অননুমোদিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের আধিক্য, এবং পর্যাপ্ত টার্মিনাল না থাকা-সব মিলিয়ে বিশৃঙ্খলার বৃত্ত ভাঙা যাচ্ছে না। ঢাকার গণপরিবহন শুধু সড়কের নয়, নাগরিক জীবনেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। প্রতিটি নতুন উদ্যোগ ব্যর্থ হলে মানুষ হারায় আস্থা, রাষ্ট্র হারায় বিশ্বাসযোগ্যতা। তাই এখন প্রয়োজন আরেকটি বৈঠক নয়, কার্যকর বাস্তবায়ন কাঠামো ও জবাবদিহিমূলক সমন্বয়। নগরবাসীর প্রত্যাশা-ঢাকার সড়ক একদিন সত্যিই ‘ওয়ার্ল্ড ক্লাস’ শৃঙ্খলায় ফিরবে, অন্তত পরিকল্পনার কাগজে নয়, বাস্তবের রাস্তায়।