রাজশাহীর পুঠিয়ায় ১৬টি আশ্রয়ণের ৫৯৮টি ঘরের মানুষরা নানা সমস্যার ভিতর দিয়ে বসবাস করার অভিযোগ উঠেছে। উপজেলায় অনেক ছিন্নমূল অসহায় মানুষ শতচেষ্টা করেও একটি ঘর পাচ্ছেন না। আবার যারা ঘর বরাদ্দ পেয়েছে তারা আশ্রয়ণের বসবাস করছে না।
জানা গেছে,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে ৫শত ৯৮টি ঘর উপজেলার মুসা খাঁ, তালুকদারপাড়া, নকুলবাড়িয়া, ডাঙ্গাপাড়া, কাদ্রা গুচ্ছোগ্রাম,কৌড়জোড়া, সাতবাড়িয়া, কার্তিকপাড়া, সাধনপুর, ধোকড়াকুল-১ এবং ধোকড়াকুল-২ বেলনাতলা,বানেশ্বর, হাতিনাদা, ভরুয়াপাড়া ও কাজিপাড়ায় নির্মণ করা হয়েছে। বিভিন্ন আশ্রয়ণে একাধিক স্বচ্ছল পরিবার ঘর পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলার ভিতরে সবচেয়ে বেশি ঘর নির্মাণ করার হয়েছে,মুসা খাঁ ও তালুকদারপাড়ায়। মুসা খাঁ আশ্রয়ণে ১১৭টি ছিন্নমূল মানুষের ঘর রয়েছে। এ আশ্রয়ণে তত্ত্বাবধানকারী আসরাফুল ইসলাম বলেন,সাবেক ইউএনও নুরুল হাই মোহাম্মদ আনাছ এবং সাবেক উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার স্বেচ্ছাচারিতা ও স্বার্থপরতার কারণে আশ্রয়ণে বিভিন্ন এলাকার মানুষ ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন। কিন্তু যাদের প্রকৃতপক্ষে ঘর পাওয়ার যোগ্য বা প্রয়োজন রয়েছে তারা আবার ঘর পায়নি। মুসা খাঁয় যারা ঘর বরাদ্দ নিয়ে বসবাস করছেন না তারা হলেন,শিলা রানী, লুৎফর, শারমিন, জুলেখা, উকিল, রোজিনা, সাত্তার, সাঈদ ৮ জন আশ্রয়ণে বসবাস করছেন না। আশ্রয়ণে এমন ব্যক্তিদের ঘর দেওয়া হয়েছে। তারা বরাদ্দ নেওয়ার পর একদিনও ঘরে বসবাস করিনি। বরাদ্দকৃত ঘর তালা দিয়ে রাখা হয়েছে। জিয়ারুল ইসলাম বলেন, মুসা খাঁর মসজিদের বরাদ্দের টাকা পর্যন্ত নয়ছয় করা হয়েছে। অপরদিকে উপজেলার অনেক ছিন্নমূল অসহায় মানুষ রয়েছেন। তারা আবার শতচেষ্টা করেও একটি ঘর পাচ্ছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক জনপ্রতিনিধি বলেন, ঘর নির্মাণের সময়ে আমাদের সুপারিশে বেশিভাগ ঘর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ইউএনও এবং উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তার ইচ্ছামতো ঘর বরাদ্দ হয়েছে। আশ্রয়ণ নির্মাণ করার সময়ে অনেক অনিয়ম করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের তখন হাত পা বাধা ছিল। কোনো কিছু করার উপায় ছিল না। কারণ দুইজন কর্মকর্তার ওপর সবকিছু দেখভালের দায়িত্ব সরকার দিয়ে ছিল। উপজেলার আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে কোটি কোটি টাকা নয়ছয় হয়ে তা এখন পরিস্কার বোঝা যাচ্ছে। সবগুলি আশ্রয়ণের ঘর নির্মাণে অনিয়ম মাধ্যমে করা হয়েছে। আশ্রয়ণের কয়েকটিতে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ উঠেছে। মুসা খাঁ আশ্রয়ণের প্রবেশদারে মায়া রানী বয়স ৭০ বছর। তার স্বামী নেই। দুই সন্তান ঢাকা থাকেন। দুই সন্তান মুসলিম হয়ে যাওয়ায় মায়ের সঙ্গে তারা কোনো রকম যোগাযোগ রাখেন না। তার ভিক্ষা করে জীবন চলে। সে আশ্রয়ণে ঘর পায়নি। সে শতচেষ্টা করেও একটি ঘর পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে আশ্রয়ণের পার্শ্বে নিজে একটি ছোট্র কুঁড়েঘর ওঠায়ে কষ্টে বসবাস করছেন। তার ঘর না থাকায় ভিক্ষা করতে গেলে কুঁড়েঘরটিতে কয়েক দিন আগে সবকিছু চুরি হয়ে গেছে। তাও আশায় রয়েছেন কবে একটি ঘর বরাদ্দ পাবে। মায়া রানাী মতো মুসা খাঁয় জিয়া, ফুলি, শহিদা, ফুলঝুড়ি, ইব্রাহিমরা ঘর সংকটের কারণে উপযুক্ত ছেলে ও ছেলের বউয়ের সঙ্গে বাধ্য হয়ে ছোট ঘরের ভিতরে বসবাস করতে হচ্ছে। আবার কেউ বা বাহিরে বারান্দায় স্বামী-স্ত্রীদের থাকতে হচ্ছে। মায়ার মতো অনেক মানুষের ঘরের প্রয়োজন আছে কিন্তু নতুনভাবে ঘর আর বরাদ্দ হচ্ছে না। ধোকড়াকুল আশ্রয়ণের আরশেদা বেগম বলেন, এ আশ্রয়ণে এত নিম্নমানের কাঠ দিয়ে টিনের ছাউনি এবং ইট দিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। শক্ত বাতাস উঠলে,যে কোনো সময়ে টিনের চালা উঠে যাবে। পান্না বেগম বলেন, ঘর নির্মাণের এক সপ্তহের ভেতর আমার ঘরের জানালা ভেঙে পড়ে ছিল। ঘরের কাঁচা গাছের গুড়ি ফাড়ায় করে তাড়াতাড়ি টিনের ছাউনি ও ঘরের ভেতর তীর দিয়ে ছিল। কয়েকদিন যাওয়ার পর কাঠে ঘুনপোকায় ধরে ছিল। রাতে ঘুমাতে পারচ্ছি না। আমরা বাধ্য হয়ে টিনের নীচে কাপড় লাগায়ে ঘরে বসবাস করছি। নকুলবাড়িয়া আশ্রয়ণের ৯টি ঘরের ভিতরে ৫টি আশ্রয়ণে বরাদ্দকৃত মালিক অন্য জনের নিকটে ঘর বিক্রি করে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রকল্প বাস্তুবায়ন কর্মকর্তা মাহবুবা আক্তার বলেন, আমি এখানে আসার পর বিভিন্ন আশ্রয়ণ পরিদর্শন করেছি। ঘর বরাদ্দ নেওয়ার পর অনেকে আশ্রয়ণে বসবাস করছে না। অনেক ছিন্নমূল মানুষ ঘর পাওয়ার আশায় আমার অফিসে প্রতিনিয়ত আসছেন। আশ্রয়ণে যারা ঘর পেয়েছে তাদের নামে দলিল হয়ে গিয়েছে। আমরা ইচ্ছা করলে ঘরের দলিল বাতিল করতে পাড়ব না। সরকারিভাবে দলিল বাতিলের আদের্শ আসলে ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা সম্ভব হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিয়াকত সালমান বলেন,আশ্রয়ণের ঘর যদি কেনাবেচা হয়ে থাকে তাহলে তা বন্ধ করতে হবে। আর কেউ ঘরে বসবাস না করলে তাদের ঘরের বরাদ্দ বাতিল করা হবে।