রাবারবাগানে টেন্ডার অনিয়ম: রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কড়া নজরদারি প্রয়োজন

এফএনএস | প্রকাশ: ৮ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:৩৭ এএম
রাবারবাগানে টেন্ডার অনিয়ম: রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় কড়া নজরদারি প্রয়োজন

হবিগঞ্জের শাহজীবাজারসহ সিলেট বিভাগের চারটি রাবারবাগানের ৫০ হাজার গাছ বিক্রির টেন্ডার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আবারও সরকারি সম্পদ ব্যবস্থাপনায় দুর্বলতার চিত্র সামনে এনেছে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য থেকে জানা যায়, পূর্বের তুলনায় প্রতিটি গাছের দর প্রায় ৮০০ টাকা কম নির্ধারণ করা হয়েছে-ফলে প্রায় তিন কোটি টাকার ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফআইডিসি)। এত বড় অঙ্কের অর্থের পার্থক্য কেবল বাজারমূল্যের ওঠানামায় ব্যাখ্যা করা যায় না; বরং এটি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতা ও প্রভাবের ইঙ্গিত দেয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনে এক ঠিকাদারকে করপোরেশনের ভবনে আটকে রাখা হয় এবং নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলে তাকে মুক্তি দেওয়া হয়। এই অভিযোগ যদি সত্য হয়, তবে তা শুধু প্রশাসনিক নয়, একটি অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। সরকারি সম্পদ বিক্রিতে স্বচ্ছতা ও প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করার বদলে যদি প্রভাবশালী গোষ্ঠী নিজেদের স্বার্থে দরপত্র প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে, তবে তা রাষ্ট্রের অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে। বাংলাদেশ বন শিল্প উন্নয়ন করপোরেশন দীর্ঘদিন ধরে দেশের বনজ সম্পদ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে টেন্ডার, বরাদ্দ ও বিক্রয় প্রক্রিয়ায় অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ নতুন নয়। গাছ কাটার পরিমাণ থেকে শুরু করে দর নির্ধারণ-সব পর্যায়েই যদি প্রভাবশালীরা হস্তক্ষেপ করে, তবে পরিবেশ সংরক্ষণ ও রাষ্ট্রীয় সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ে। এই ঘটনার তদন্তের ঘোষণা দিয়েছেন বিএফআইডিসির চেয়ারম্যান। কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা হয়ে গেলে জনগণের আস্থা আরও ক্ষুণ্ণ হবে। তাই প্রয়োজন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন করা, যাতে অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া যায়। দোষী প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ও শ্রমিক সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে-তা যত প্রভাবশালীই হোন না কেন। একই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে, সরকারি সম্পদের মূল্য নির্ধারণে মানদণ্ড কতটা হালনাগাদ ও বাস্তবসম্মত। বাজারমূল্য, পরিবহন ব্যয় ও কাঠের গুণমান বিবেচনায় একটি যুক্তিসঙ্গত দাম নির্ধারণের প্রক্রিয়া প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। নইলে প্রতি বছরই এমন অনিয়মের পুনরাবৃত্তি ঘটবে, এবং রাষ্ট্র হারাবে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। অবশেষে বলা যায়, রাবারবাগানের টেন্ডার অনিয়ম কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়-এটি সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়বদ্ধতার সংকটের প্রতিফলন। এখনই সময়, প্রশাসন ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে কঠোর অবস্থান নিতে হবে, যাতে বন ও প্রাকৃতিক সম্পদ কেবল অর্থনৈতিক নয়, নৈতিকভাবেও সুরক্ষিত থাকে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত না হলে “জাতীয় সম্পদ”কেবল কাগজে-কলমেই জাতীয় থেকে যাবে।