বাংলাদেশের ডাক বিভাগ-এক সময়ের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য সরকারি প্রতিষ্ঠান। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ থেকে শুরু করে শহুরে নাগরিক-সবাই এক সময় নির্ভর করত এই বিভাগের ওপর। একটি চিঠি, একটি মানি অর্ডার বা একটি পার্সেল-এই ছোট ছোট সেবাগুলোই ছিল মানুষের দৈনন্দিন জীবনের অপরিহার্য অংশ। সেই ডাক বিভাগ আজ যেন হারিয়ে গেছে আস্থার মানচিত্র থেকে। প্রযুক্তির যুগে এসে যেখানে সেবার মান হওয়া উচিত ছিল দ্রুত, নির্ভরযোগ্য ও সময়োপযোগী, সেখানে এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটি এখন প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে অবহেলা, দুর্নীতি ও অদক্ষতার। সত্যিই, ডাক বিভাগের সেবার মান নষ্ট করেছে এই প্রতিষ্ঠানেরই কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা-যাদের দায়িত্ব ছিল সেবা দেওয়া, তারাই এখন হয়ে উঠেছে এই পতনের মূল কারণ। এক সময় ডাক বিভাগের প্রতিটি ডাকপিওন ছিল সমাজে এক বিশেষ সম্মানের প্রতীক। তিনি ছিলেন গ্রামের খবরবাহক, প্রিয়জনের বার্তাবাহক, এমনকি কখনো কখনো মানুষের আশা-ভরসার প্রতীক। গ্রামের মানুষেরা অপেক্ষা করত তার সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনির জন্য। সেই চিঠির দিনগুলোতে মানুষ জানত-ডাক বিভাগ মানে নির্ভরতা। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বিশ্বাস ভেঙে গেছে। আজ ডাক বিভাগ মানে বিলম্ব, অব্যবস্থাপনা আর দুর্নীতি। এখন আর মানুষ ডাক বিভাগে ভরসা রাখে না, বরং বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসকে বেছে নেয়। কারণ, তারা জানে, বেসরকারি কুরিয়ারে পাঠানো চিঠি ২৪ ঘণ্টায় গন্তব্যে পৌঁছে যায়, আর সরকারি ডাক বিভাগের চিঠি পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ থেকে ১০ দিন, কখনো আরও বেশি। এই বৈষম্যের মূল কারণ হলো-অলসতা ও দায়িত্বহীনতা। ডাক বিভাগের অনেক কর্মকর্তা ও কর্মচারী এখন আর সেবার মনোভাব নিয়ে কাজ করেন না। তারা সরকারি চাকরিকে নিজের ব্যক্তিগত আরাম ও ক্ষমতার উৎস হিসেবে দেখেন। অফিসে দেরিতে আসা, সময়মতো কাজ না করা, গ্রাহকের প্রতি রূঢ় আচরণ, কিংবা ঘুষ ছাড়া কাজ না করা-এসব এখন অনেক ডাকঘরে নিয়মিত চিত্র। সেবার মান কোথায়, সেটা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজেদের সুবিধা, ভাতা ও পদোন্নতি। এর ফলে সেবার মান কমে গেছে ভয়াবহভাবে, আর জনগণ হারিয়েছে আস্থা। সরকার প্রতি বছর ডাক বিভাগে কোটি কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে, কিন্তু সেই বিনিয়োগের কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। প্রতিষ্ঠানটির অবকাঠামো পুরোনো, যন্ত্রপাতি নষ্ট, প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত। কিন্তু আরও বড়ো সমস্যা হলো-মানুষের মানসিকতা। ডাক বিভাগের ভেতরে এমন এক সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে, যেখানে দায়বদ্ধতা নয়, বরং উদাসীনতা স্বাভাবিক হয়ে গেছে। কেউ কাজ না করলেও তেমন শাস্তি নেই, কেউ দুর্নীতিতে জড়ালেও খুব বেশি ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের ডাক বিভাগ এখন আর কেবল ডাক বিতরণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; এটি এখন বিভিন্ন আর্থিক সেবা, ই-কমার্স, পেমেন্ট সার্ভিস, এমনকি আন্তর্জাতিক ডাক পরিবহনের কাজও করে। কিন্তু এসব জায়গায়ও দেখা যায় একই দুরবস্থা। মানি অর্ডার পাঠাতে হয়তো সময় লাগে তিন থেকে পাঁচ দিন, আবার অনেক সময় তা হারিয়ে যায় মাঝপথে। গ্রাহক অভিযোগ করলে কোনো সাড়া মেলে না। এই অবস্থা চলতে থাকলে মানুষের আস্থা ফেরানো অসম্ভব হয়ে পড়বে।
এখন প্রশ্ন আসে-এর দায়ভার কার? নিঃসন্দেহে, এর দায়ভার বহন করতে হবে ডাক বিভাগের ভেতরেরই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। কারণ, কোনো প্রতিষ্ঠান ভালো বা খারাপ হয় তার নেতৃত্ব ও কর্মীদের আচরণের ওপর। যদি কর্মীরা আন্তরিক ও দায়িত্বশীল হন, তাহলে পুরোনো কাঠামো দিয়েও সেবা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু ডাক বিভাগে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। কর্মকর্তারা দায়িত্ব নিচ্ছেন না, বরং দোষ চাপাচ্ছেন যুগের পরিবর্তনের ওপর। তারা বলে-“এখন তো ইন্টারনেটের যুগ, মানুষ আর চিঠি পাঠায় না।” কিন্তু প্রশ্ন হলো-চিঠি না পাঠালেও পার্সেল, পেমেন্ট, ই-কমার্স ডেলিভারি-এসব সেবায় তো ডাক বিভাগ বিশাল ভূমিকা রাখতে পারত।
বেসরকারি কুরিয়ার সার্ভিসগুলো এই জায়গাগুলো দখল করেছে কারণ তারা সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়েছে। তারা প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে, অনলাইন ট্র্যাকিং দিয়েছে, গ্রাহকের ফিডব্যাক নিয়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগ সেখানে দাঁড়িয়ে থেকেও এগোয়নি। বরং নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে নানা অজুহাত তৈরি করেছে। এর পেছনে রয়েছে জবাবদিহির অভাব। বাংলাদেশের বেশিরভাগ সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই ডাক বিভাগেও জবাবদিহির কোনো সংস্কৃতি নেই। কে কাজ করছে না, কে দুর্নীতি করছে, কে জনগণকে হয়রানি করছে-তার কোনো প্রতিবেদন নেই, কোনো পরিণতি নেই। দুর্নীতি এখন যেন প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ হয়ে গেছে। পোস্ট অফিসের কিছু কর্মকর্তা অবৈধভাবে কমিশন নেয়, পার্সেল বা মানি অর্ডারের টাকা আটকে রাখে, গ্রাহককে ঘুরিয়ে ফেরায়। আবার কেউ কেউ বাইরে থেকে চুক্তিভিত্তিক কাজ নিয়ে নিজেদের ব্যক্তিগত লাভ বাড়ায়। এইসব অনিয়মের ফলে সাধারণ মানুষ শুধু ভোগান্তিতে পড়ে না, বরং পুরো প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস হয়ে যায়। আর একবার কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট হলে তা পুনরুদ্ধার করা খুবই কঠিন।
ডাক বিভাগের বর্তমান দুরবস্থা আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার এক গভীর প্রতিচ্ছবি। এখানে আমরা দেখি কীভাবে সরকারি সেবা মানে হয়ে দাঁড়িয়েছে “অবহেলা ও বিলম্ব”। মানুষের মনে এখন ধারণা তৈরি হয়েছে-সরকারি অফিসে গেলে কাজ হবে না, সেবার মান ভালো হবে না। এই ধারণা শুধু ডাক বিভাগের নয়, বরং পুরো প্রশাসনিক কাঠামোর ব্যর্থতার চিত্র তুলে ধরে। অথচ সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোই হওয়া উচিত জনগণের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। ডাক বিভাগকে আবারও ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে হলে প্রয়োজন একটি সামগ্রিক সংস্কার। প্রথমত, ডাক বিভাগকে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর সেবায় রূপান্তর করতে হবে। প্রতিটি সেবাকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে আনতে হবে। অনলাইন ট্র্যাকিং, মোবাইল অ্যাপ, ডিজিটাল পেমেন্ট-এসব সেবা চালু করা জরুরি। দ্বিতীয়ত, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে, তারা কেবল বেতনভোগী নয়-তারা জনগণের সেবক। প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনার ব্যবস্থা বাড়াতে হবে। ভালো কাজ করলে পুরস্কার দিতে হবে, আর দায়িত্বে গাফিলতি করলে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি চাকরিতে “চাকরি হারানোর ভয় নেই”এই মানসিকতা বদলাতে হবে। যখন কর্মীরা বুঝবে যে তারা জবাবদিহির মধ্যে আছে, তখন তারা নিজের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করবে। ডাক বিভাগের জন্য একটি স্বাধীন পর্যবেক্ষণ সংস্থা গঠন করা যেতে পারে, যারা সেবার মান, সময়মতো ডেলিভারি ও গ্রাহক সন্তুষ্টির ওপর নিয়মিত প্রতিবেদন তৈরি করবে। এই প্রতিবেদনগুলো প্রকাশ্যে দেওয়া হলে জনগণও জানতে পারবে, কোন এলাকায় সেবা ভালো, কোন এলাকায় খারাপ। স্বচ্ছতা বাড়লেই দুর্নীতি কমবে। এছাড়া ডাক বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়নও প্রয়োজন। অনেক ডাকঘর এখনো পুরোনো ভবনে চলছে, যেখানে বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট বা নিরাপত্তার ব্যবস্থা দুর্বল। আধুনিক সেবা দিতে হলে এই অবকাঠামোকে নবায়ন করতে হবে। প্রতিটি পোস্ট অফিসে অনলাইন সংযোগ, ট্র্যাকিং সিস্টেম, গ্রাহক সেবা ডেস্ক ও অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু করা উচিত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নেতৃত্ব। ডাক বিভাগের নেতৃত্বে এমন মানুষ থাকতে হবে, যিনি এই প্রতিষ্ঠানকে ব্যাবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে পারেন, একই সঙ্গে সরকারি নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে পরিচালনা করতে পারেন। এখন প্রয়োজন পেশাদার ম্যানেজমেন্ট-যারা জানে কীভাবে সেবা উন্নয়ন করতে হয়, গ্রাহককে সন্তুষ্ট রাখতে হয়, আর কীভাবে প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করতে হয়। তবে শুধু সরকার বা কর্মকর্তারাই নয়, জনগণেরও ভূমিকা আছে। জনগণকে তাদের অধিকার দাবি করতে হবে। ডাক বিভাগ যদি কোনো সেবা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে অভিযোগ জানাতে হবে, গণমাধ্যমে তুলতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়ায় আলোচনায় আনতে হবে। যখন জনগণ সক্রিয় হয়, তখনই সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ববান হয়। ডাক বিভাগ আমাদের জাতীয় ইতিহাসের অংশ। এটি কেবল একটি প্রতিষ্ঠান নয়, বরং একটি ঐতিহ্য। এই ঐতিহ্যকে টিকিয়ে রাখতে হলে প্রয়োজন আধুনিক চিন্তা, সৎ নেতৃত্ব, এবং কর্মীদের মধ্যে দায়বদ্ধতার বোধ। যদি এখনই এই পরিবর্তন না আনা হয়, তাহলে একদিন “ডাক বিভাগ”নামটি শুধু পাঠ্যবইয়ের ইতিহাসে থাকবে, বাস্তব জীবনে নয়। প্রযুক্তির এই যুগে ডাক বিভাগকে আর পিছিয়ে থাকা যায় না। ই-কমার্স, অনলাইন ট্রান্সেকশন, ডিজিটাল পেমেন্ট-এসব ক্ষেত্রেই ডাক বিভাগের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হলে পুরোনো ধ্যানধারণা বদলাতে হবে। সরকারি অফিস মানেই যে ধীরগতি ও অবহেলা-এই ধারণা ভেঙে দিতে হবে বাস্তব কাজের মাধ্যমে।
দিনের শেষে, ডাক বিভাগের পতনের দায় কোনো বাইরের শক্তির নয়; এটি সম্পূর্ণ ভেতরের ব্যর্থতা। যারা দায়িত্বে আছেন, তারাই যদি দায়িত্ব না নেন, তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠান বাঁচে না। তাই আজ সময় এসেছে আত্মসমালোচনার। সরকারের উচিত ডাক বিভাগের অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি ও অদক্ষতার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করা। যারা সেবা দিতে ব্যর্থ, তাদের সরিয়ে নতুন উদ্যমী ও প্রশিক্ষিত জনবল নিয়োগ দিতে হবে। ডাক বিভাগকে আধুনিক ব্যাবসায়িক প্রতিযোগিতায় টিকিয়ে রাখতে হলে তাদের দক্ষ, প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ ও সৎ হতে হবে। শেষ পর্যন্ত, ডাক বিভাগের পুনর্জাগরণ কেবল সরকারের নীতি বা প্রযুক্তি নয়-এটি নির্ভর করছে সেই কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ওপর, যারা প্রতিদিন অফিসে যান, টেবিলে বসেন, কিন্তু ভুলে যান যে তাদের কাজ মানুষের সেবা করা। যেদিন তারা নিজের দায়িত্বকে বোঝবেন, যেদিন তারা বুঝবেন যে এই প্রতিষ্ঠানের ব্যর্থতা মানে রাষ্ট্রের ব্যর্থতা, সেদিনই শুরু হবে ডাক বিভাগের নতুন অধ্যায়। ডাক বিভাগকে বাঁচাতে হলে এখনই পদক্ষেপ নিতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানকে আবারও মানুষের আস্থার জায়গায় ফিরিয়ে আনতে হলে দুর্নীতি রোধ, স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও প্রযুক্তি ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের উচিত ডাক বিভাগকে “ডিজিটাল ডাক সার্ভিস”হিসেবে পুনর্গঠন করা-যেখানে প্রতিটি চিঠি, প্রতিটি পার্সেল, প্রতিটি লেনদেন ট্র্যাকযোগ্য, নিরাপদ ও দ্রুত। মানুষ এখনো চায় রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে আস্থা রাখতে। তাই ডাক বিভাগ যদি চায়, তারা আবারও সেই বিশ্বাস অর্জন করতে পারে। কিন্তু তার জন্য দরকার সততা, কর্মনিষ্ঠা ও সাহস। যারা আজ এই প্রতিষ্ঠানে আছেন, তারা যদি নিজেদের দায়িত্ব বুঝে কাজ শুরু করেন, তবে আবারও হয়ত আমরা শুনতে পাব সেই সাইকেলের ঘণ্টাধ্বনি-যে ঘণ্টাধ্বনি একসময় ছিল মানুষের আনন্দের প্রতীক, ভালোবাসার বাহক, আর আজও মানুষের মনে হড়ংঃধষমরধ জাগায়। ডাক বিভাগকে বাঁচাতে হলে এখনই জেগে উঠতে হবে-কর্মচারীদের, কর্মকর্তাদের, এবং রাষ্ট্রের। কারণ, ইতিহাস তাদেরই মনে রাখে, যারা পতনের সময় দায়িত্ব নেয়, যারা ধ্বংসস্তূপের মধ্য থেকেও নতুন শুরুর সাহস দেখায়। আজ সেই সাহস দেখানোর সময় এসেছে-বাংলাদেশের ডাক বিভাগের জন্য, জনগণের আস্থার জন্য, এবং রাষ্ট্রের মর্যাদার জন্য।
লেখক: মো: শামীম মিয়া; কলামিস্ট