সৈয়দপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে মানসম্মত নয় এমন রেস্টুরেন্ট

এফএনএস (ওবায়দুল ইসলাম; সৈয়দপুর, নীলফামারী) : | প্রকাশ: ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৪:৪০ পিএম
সৈয়দপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে মানসম্মত নয় এমন রেস্টুরেন্ট

নীলফামারীর সৈয়দপুরে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে প্রায় অর্ধ শতাধিক মানসম্মত নয় এমন রেস্টুরেন্ট। অনেকটা প্রতিযোগিতামুলকভাবে এ সকল মানহীন রেস্টুরেন্ট খুলে বসেছেন কতিপয় ব্যক্তি। এ সকল রেস্টুরেন্টে খাবারের মান অত্যন্ত নিম্নমানের।

শিক্ষার্থী মমিনুর রহমান জানান,যারা এ হোটেলগুলোতে কাজ করে তাদের মধ্যে অনেকেই পরিচ্ছন্ন নন। পোষাক থেকে শুরু করে শরীর পর্যন্ত তেমন পরিস্কার নয়। আর এরাই হোটেলে খাবার পরিবেশন করে। কেউ পানি দেয়, কেউ পানির গ্লাস পরিস্কার করে, কেউ পরোটা তৈরি করে,ভাত রান্না করে। অনেকের হাত ও পায়ের আঙ্গুলে চর্মরোগ দেখা যায়।

হাকিম নামে একজন বলেন, হোটেলের পরোটা খাবেন না। এ পরোটা তৈরির জন্য আটা গুলিয়ে জমাটবদ্ধ করে একটি পাত্রে সারারাত রাখা হয়। ওই গুলানো আটার সাথে অনেকে মিশায় সোয়াবিন তেল। পরিচ্ছন্ন স্থানে ওই পরোটা তৈরির আটার গোলা না রাখায় সেখানে মশা,মাছি পড়ে। সকাল বেলা ওই আটার গোলা নিয়ে এসে তৈরি করা হয় পরোটা। যিনি পরোটা তৈরি করেন দেখবেন তার হাতে কোন গ্রাভ নেই। খোলা দুই হাতে তৈরি করছেন পরোটা। অনেক সময় এরা ধুমপান করেন। হাত পরিস্কার না করেই আবার তৈরি করে থাকেন পরোটা।

তমাল নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন,অনেকের হোটেলে দেখা গেছে পানির জগের মুখ খোলা। ঢাকনা ছাড়াই পানির জগ। আর ওই মুখ খোলা জগের পানিতে পড়ছে হোটেলের ধুলাবালি। ওই পানি আমরা সহসায় পান করছি। যা দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

একই প্লেট, গ্লাস বা কাপে আমরা খাচ্ছি। যে থালা বাটিতে খাবার দেয়া হচ্ছে তাও নিম্ন মানের। তারপরও হিন্দু, বৌদ্দ,মুসলিম সবাই একই থানায় খাচ্ছি। হোটেল মালিক সকল ধর্মের লোককে একই প্লেটে খাবার খাওয়াচ্ছে। যা গুরুতর অপরাধ। তবুও আমরা কোন প্রতিবাদ করি না।

এ সকল রেস্টুরেন্টে বয়লার মুরগি হল খাবার তৈরির প্রধান উপকরণ। বয়লার মুরগির দাম কম হলেও এ সকল রেস্টুরেন্টে বয়লার মুরগির মাংসে তৈরি বিভিন্ন প্রকার খাবারের দাম নেয়া হয় অস্বাভাবিক। প্রশাসনের সঠিক তদারকির অভাবে মানহীন রেস্টুরেন্টের কারণে প্রতিনিয়ত ভোক্তারা মানসম্মত খাবার না পেয়ে প্রতারিত হচ্ছেন। 

পাশাপাশি এসব মানহীন অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে অতিরিক্ত দাম,পুরাতন তেল আর সস দিয়ে বাঁসি মাংস ও চিংড়ি মাছ দিয়ে মানহীন চাইনিজ খাবার পরিবেশন করার বিস্তার অভিযোগ থাকলেও বিষয়গুলো যেন দেখার কেউ নেই। 

সৈয়দপুর প্লাজাসহ শহরের অলি গলিতে বেশ কিছু রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। এদের বসার আসনগুলোও রহস্যময়। তাছাড়া অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে অসামাজিক কাজের।ওই সকল রেস্টুরেন্টে উঠতি বয়সী ছেলে মেয়েদের আড্ডা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। বিশেষ কোন সুযোগ থাকায় তারা সেখানে জটলা করে। ইতিপূর্বে বেশ কিছু রেস্টুরেন্টে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করে অনেক ছেলে মেয়েকে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে জেল হাজতে পাঠায়।

আশরাফুল আলম নামের এক ক্রেতা বলেন, রেস্টুরেন্টে খাবারের দাম বেশী। তাছাড়া অনেক রেস্টুরেন্টে ক্রেতা নেই বললে চলে। ক্রেতা কম থাকায় তারা এক পিচ মাংস কেটে তা দিয়ে দুই তিন আইটেমের খাবার তৈরি করে। যা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার সামিল। চিকেন ফ্রাইয়ের জন্য কেটে রাখা লেগ পিছ বা বুকের মাংস থেকে সলিড মাংস কেটে তা সুফে ব্যবহার করে নুডুলসের চিকেন স্লাইস, স্লাইস, ক্যাসিনো সালাতের চিকেন হিসেবে ব্যবহার করা হয়। ফলে চিকেন ফ্রাই আকারে ছোট হয়ে যায় এবং মাংস কম থাকে। তিনি আরও বলেন ক্যাসিনাট সালাতে কাজু বাদামসহ বেশ কিছু উপাদান দেয়ার কথা থাকলেও সেখানে চিনা বাদাম,শসা,আর গাজরসহ সামান্য চিকেন দিয়ে কাস্টমারদের সাথে প্রতারণা করা হচ্ছে। 

বিমানবন্দরের পাশে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে এক ভোক্তা বলেন,অন্যান্য রেস্টুরেন্টগুলোর তুলনায় এখানে প্রায় দ্বিগুণ দাম রাখা হয়। খাবারের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। রাইস, চিকেন ফ্রাই,থাই স্যুফসহ কাবাব আইটেম মানের তুলনায় দাম অনেক বেশি। ক্যামিক্যাল যুক্ত এসব খাবার প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য চরম ঝুঁকিপূর্ণ। 

এ ব্যাপারে নীলফামারী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ  আব্দুর  রাজ্জাক বলেন,স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে ঘরের বিকল্প নেই। অতিরিক্ত বা পুরনো তেল,মশলা ব্যবহার করে যে খাবারই রান্না করা হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। প্রোটিনজনিত খাবার ফ্রিজে রাখলে তা ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকে আক্রমণ করে। তাছাড়া রেস্টুরেন্টে মাছ কিংবা মাংস ফ্রিজে অনেকদিন থাকার ফলে তা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে। 

আনোয়ার হোসেন নামের নামের এক ভোক্তা জানান, হোটেলগুলোর জুসবারেও একই অবস্থা।  জুসের নামে কেমিক্যালযুক্ত লেযুক্ত ফ্লেভার খাচ্ছেন ক্রেতারা।

সাদেক হোসেন নামে আরেক ভোক্তা বলেন, রেস্টুরেন্টগুলোর কাগজপত্র নবায়ন করা আছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্র,স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা বিষয়ক লাইসেন্স, নিবন্ধন,ভ্যাট, ট্রেড লাইসেন্স,স্যানিটারী ফায়ার লাইসেন্স নবায়ন করা আছে কি না তাও সন্দেহ। এমনকি অনেক রেস্টুরেন্টের কোন লাইসেন্সই নেই। 

এ ব্যাপারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর নীলফামারীর সহকারী পরিচালক শামসুল আলম বলেন, কোন ভোক্তা যদি প্রতারিত হয়ে থাকেন। সে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে যদি অভিযোগ করেন। তার দেয়া অভিযোগ প্রমাণিত হলে রেস্টুরেন্ট মালিককে জরিমানা এবং জেল দেয়ার বিধান রয়েছে। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে