সবুজ সংকেত কোথায়, চারদিক লাল আলোয়

এফএনএস
| আপডেট: ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম | প্রকাশ: ৯ নভেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩৮ পিএম
সবুজ সংকেত কোথায়, চারদিক লাল আলোয়

রাজনীতিতে ‘সবুজ সংকেত’ শব্দটি এখন নতুন করে আলোচনায়। মনোনয়ন, পদ-পদবি কিংবা রাজনৈতিক আনুকূল্য-সব কিছুর মাপকাঠিতে এটি যেন নতুন মুদ্রা। কিন্তু রাজনৈতিক অঙ্গনের এই সবুজ বাতির ঝলকানি অর্থনীতিতে পৌঁছায়নি। সেখানে এখন সর্বত্র লাল আলো জ্বলছে-ব্যবসা-বিনিয়োগ, পুঁজিবাজার ও কর্মসংস্থানের প্রতিটি স্তরে। গত এক বছরে ২৫০টিরও বেশি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। বিনিয়োগ থমকে আছে শতাধিক প্রকল্পে। মানি লন্ডারিং, রাজস্ব ফাঁকি, ঋণ জালিয়াতি ইত্যাদি অভিযোগে ব্যবসায়ীদের ওপর চলেছে একতরফা অভিযানের ধারা। বিচারহীন এই সামাজিক ট্রায়াল বিনিয়োগবিরোধী পরিবেশ তৈরি করছে। কোনো অভিযোগের তদন্ত বা আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া সমাজে সম্মানহানি ঘটছে ব্যবসায়ী মহলে, যা দীর্ঘমেয়াদে অর্থনীতির শিরায় বিষ ঢালতে পারে। বিনিয়োগ-বান্ধব পরিবেশের অন্যতম শর্ত হলো ন্যায়বিচার, স্থিতিশীলতা ও আস্থার পরিবেশ। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় ব্যবসায়ী সমাজ আতঙ্কে, কর্মসংস্থান সংকুচিত, নতুন উদ্যোক্তা অনুৎসাহী। আন্তর্জাতিক ক্রেতারা গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে বাংলাদেশের অর্ডার সরিয়ে নিচ্ছেন। পুঁজিবাজারে ২১টি খাতেই স্থবিরতা। মাঝে মাঝে সামান্য উত্থান হলেও স্থায়িত্ব নেই। প্রায় ১৬ লাখ বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। রেমিট্যান্সের ধারায় কিছুটা স্বস্তি দেখা গেলেও শ্রমবাজারে পতন উদ্বেগজনক। নতুন বাজার খোলার উদ্যোগ থাকলেও বাস্তব অগ্রগতি নেই। দেশের ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগের ভবিষ্যৎকে আরও ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলছে। একই সঙ্গে সরকারের নীতিগত দ্বৈততা-একদিকে বিনিয়োগ আহ্বান, অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের ভিলেন বানানোর প্রবণতা-অর্থনৈতিক আস্থাকে নষ্ট করছে। কর ও তদন্তের নামে হয়রানি ব্যবসায়ীদের মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করছে। এই বাস্তবতায় দেশি বিনিয়োগ স্থবির, বিদেশি বিনিয়োগও অনিশ্চয়তায়। অথচ এই বিনিয়োগই অর্থনীতির রক্তসঞ্চালন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও বাজেট সহায়তার মূল উৎস। এ পরিস্থিতিতে সরকারের করণীয় হলো-ব্যবসায়ীদের প্রতি আস্থাশীল ও ন্যায়সংগত আচরণ নিশ্চিত করা, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা হ্রাসে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া এবং অর্থনীতির মেরুদণ্ড পুঁজিবাজারকে চাঙ্গা করতে নীতিগত প্রণোদনা দেওয়া। কঠোর আইন প্রয়োগ অবশ্যই জরুরি, তবে তা ন্যায়বিচার ও মর্যাদা রক্ষার সঙ্গে সমন্বিত হতে হবে। রাজনীতিতে সবুজ সংকেত দেখাতে গিয়ে অর্থনীতির সব আলো নিভে গেলে কোনো দিকই এগোবে না। রাজনীতি ও অর্থনীতির ভারসাম্যই এখন সবচেয়ে বড় সবুজ সংকেত-যা রাষ্ট্র ও জনগণ উভয়েরই স্বার্থে অপরিহার্য।