মাথার ঘাম পায়ে ফেলে তিল তিল করে জমাকৃত জীবনের শেষ সম্বল ১৬ লাখ টাকা দিয়ে নগরীতে মাত্র দুই শতক জমি কিনেছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু)। সেখানে একটি ছোট্র দোকান করে কোন রকমে সংসার চালাচ্ছিলেন। কিন্তু জমি বিক্রেতা সেলিম ও শামীম-এ দুই ভাইয়ের দ্বন্দ্বের জেরে বলি হন তিনি। বিক্রেতা সেলিম টাকা নিয়ে ঢাকায় পাড়ি জমালেও খুলনায় থাকা শামীম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কাউন্সিলর ডনকে দিয়ে ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবারকে কাউন্সিলর অফিসে নিয়ে আটকে রেখে সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে দোকান-ঘর ভাংচুর করে রাতারাতি নিজের ক্রয়কৃত জমি থেকে তাকে উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের পতনের পর নানা দেন-দরবার করেও নিজের জমির দখল না পেয়ে গত ৫ নভেম্বর থেকে ব্যবসায়ী কালু ও তার স্ত্রী তার ক্রয়কৃত জমিতে উঠেছেন। কিন্তু সেখানে কোন ঘর না থাকায় পরিবারটির রাত-দিন কাটছে খোলা আকাশের নিচে। দিনে প্রখর রোদ এবং রাতের ঠান্ডায় তারা ঝুঁকির মধ্যে সেখানে অবস্থান করছেন। এমনকি প্রতিনিয়ত জমিরদাতা সেলিমের ভাই ও স্থানীয় কতিপয় প্রভাবশালীর হুমকি-ধামকির কারণেও চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে পরিবারটি।
অভিযোগ উঠেছে, গণমাধ্যমকর্মীসহ পরিচিত কেউ এ বিষয়ে কালুর সঙ্গে কথা বলতে গেলেও শামীমের লোকজন তাদের সন্ত্রাসী আখ্যাদিয়ে ছবি তুলে এবং ভিডিও করে রাখছে। এমনকি দেশিয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়েও কালু ও তার পরিবারকে সেখান থেকে তুলে দিতে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। ফলে নিজের ক্রয়কৃত সম্পিত্তির দখল বুঝে পেতে এবং ন্যায় বিচার দাবিতে প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ব্যবসায়ী কালু ও তার পরিবার।
নিজাম উদ্দিন কালু খুলনা মহানগরীর দোলখোলার ৪৫/১ ইসলামপুর রোড এলাকার মৃত আব্দুর রশিদের ছেলে। বর্তমানে তিনি কাঁচামালের ব্যবসা করেন। তার স্ত্রী মেরি বেগম ও দুই সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। আর ছোট ছেলে পঞ্চম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
ভুক্তভোগী মো. নিজাম উদ্দিন (কালু) অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে নগরীর দোলখোলা শীতলাবাড়ি সংলগ্ন মসজিদের পাশে শেখ মো. সেলিমের নিকট থেকে ৩ বছরের চুক্তি করে দোকান ঘর ভাড়া নিয়ে গ্যাসের দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু চুক্তির দুই বছর হতে না হতেই সেলিম তার দোকানের জায়গা বিক্রির জন্য কালুকে
প্রস্তাব দেন। একপর্যায়ে সেলিমের নিকট থেকে ২০২০ সালের ১ নভেম্বর দু’ শতক জমি ১৬ লাখ টাকা দিয়ে ক্রয় করে কবলা দলিল করে নেন কালু (দলিল নং-৪২৯৫)। যা পরবর্তীতে নিজের নামে রেকর্ডও করেন তিনি। যথারীতি তিনি খাজনাও পরিশোধ করেছেন।
কালু জানান, তিনি জমি কেনার পর বিক্রেতা সেলিমের ভাই শামিম থানায় তার বিরুদ্ধে জিডি করেন। পরে পুলিশ এসে কালুর কাগজ সঠিক দেখে সেখান থেকে চলে যায়। তারপর ২০২১ সালে সেলিমের ভাই শামিম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর কেসিসির ২৪ নং ওয়ার্ডের তৎকালীন কাউন্সিলর জেড এ মাহমুদ ডনকে দিয়ে তার সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে কালুর দোকানঘর ও বসত বাড়ির ভাংচুর করে। পরে ওইদিন শামিমের কথামতো ডনের সন্ত্রাসী বাহিনী ভুক্তভোগী কালু ও তার পরিবারের সদস্যদের তুলে তার কাউন্সিলর অফিসে তুলে নিয়ে আটকে রাখে। সেখানে কালুকে ডন প্রশ্ন করে ‘কেন তুমি এ জমি কিনেছো- এ কথা বলে তাকে হুমকি-ধামকি দিয়ে শাসায়। এভাবে পরিবারটিকে জোর পূর্বক নিজস্ব জমি থেকে উচ্ছেদ করা হয়।
এদিকে, আওয়ামী লীগের পতনের পর গত ৫ নভেম্বর থেকে অসহায় কালুর পরিবারটি ওই জমিতে উঠে খোলা আকাশের নিচে মানবেতার জীবন-যাপন করছেন। খবর পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সাংবাদিকরা তথ্য জানতে গেলে অসহায় কালুর প্রতিপক্ষরা তাদের বাধা সৃষ্টি করে। এমনকি সাংবাদিকরা সেখান থেকে আসার কিছুক্ষণ পর প্রতিবেশী শামিম তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজানসহ একটি সংঘবদ্ধ দল দা হাতে নিয়ে গেটে তালা মেরে কালু'র ওপর হামলার চেষ্টা করে। ওই সময় তাদের বসবাসের তাবুও কেটে ফেলে দেয় এবং ওই জমি থেকে সবকিছু নিয়ে বের হয়ে যেতে বলে অভিযোগ করেন নিজাম উদ্দিন কালু।
এদিকে, রবিবার ৯ নভেম্বর মো. শামিম আহমেদসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে খুলনা সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। অভিযোগটি করেছেন ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দিন কালু।
ভুক্তভোগী নিজাম উদ্দীন কালু'র স্ত্রী মেরি বেগম বলেন, সাংবাদিকরা আমাদের কাছ থেকে ঘটনার বিবরণ শুনে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর শামিম, তার ছেলে ছানিম, ভাগ্নে সেতু ও মিজান সহ ৬-৭ জন একত্রিত হয়ে চাপাতি হাতে নিয়ে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টা করে এবং আমাদের মালামাল সবকিছু নিয়ে এখান থেকে চলে যেতে বলে। আমাদের এখন নিরাপত্তা দেবে কে- প্রশ্ন করেন তিনি। তিনি তাদের জমি বুঝে পেতে ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে জমি বিক্রেতা শেখ মো. সেলিমের ভাই মো. শামিম বলেন, নিজাম উদ্দিন কালু যে বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ করেছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি আদালতে মামলা করেছি। আদালতের মাধ্যমে ঘটনার বিষয়ে জবাব দেওয়া হবে। চাপাতি হাতে গেটে তালা দিয়ে হামলার চেষ্টার বিষয়ে জানতে চাইলে শামিম সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে বলেন, ওদের অত্যাচারে আমরাই নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি।
খুলনা সদর থানার এস আই মো. আশরাফ হোসেন বলেন, নিজাম উদ্দিন কালু থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তদন্তের জন্য আমাকে দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।