নয়া দিল্লিতে বিষাক্ত বাতাসে হাঁসফাঁস, ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভে ডজনের বেশি আটক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১০ নভেম্বর, ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
নয়া দিল্লিতে বিষাক্ত বাতাসে হাঁসফাঁস, ইন্ডিয়া গেইটে দূষণবিরোধী বিক্ষোভে ডজনের বেশি আটক

ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে ভয়াবহ বায়ুদূষণের প্রতিবাদে ইন্ডিয়া গেইটে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ মানুষ। রোববার (৯ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যার দিকে অনুষ্ঠিত এ বিক্ষোভ থেকে ডজনের বেশি মানুষকে আটক করেছে পুলিশ। অংশগ্রহণকারীরা দূষণ রোধে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিভিন্ন বয়সী মানুষদের হাতে ছিল ‘বিশুদ্ধ বাতাস আমাদের অধিকার’ ও ‘নিঃশ্বাসে বিষ’ লেখা ব্যানার। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরাতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বেশ কয়েকজনকে বাসে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, মুখে মাস্ক পরা অংশগ্রহণকারীরা শান্তিপূর্ণভাবে স্লোগান দিচ্ছেন। তাদেরই একজন নেহা সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেন, “আমাদের একটাই সমস্যা, আর তা হচ্ছে বিশুদ্ধ বাতাসের অভাব। বহু বছর ধরে আমরা একই সমস্যায় ভুগছি, কিন্তু কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”

ভারতের কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার সকালে নয়া দিল্লির বায়ু মান সূচক (এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স) ছিল ৩৪৫, যা ‘খুবই খারাপ’ স্তরে পড়ে। সংস্থাটির মানদণ্ডে ০ থেকে ৫০ স্কোর ‘নিরাপদ’, আর ৪০১ থেকে ৫০০ স্কোর ‘অত্যন্ত বিপজ্জনক’ হিসেবে বিবেচিত হয়।

পুলিশ জানায়, ইন্ডিয়া গেইট অনুমোদিত বিক্ষোভস্থল নয়। বিক্ষোভকারীদের বারবার যন্তরমন্তরে যাওয়ার অনুরোধ জানানো হলেও তারা তা মানেননি। ফলে যারা রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করছিলেন, শুধু তাদেরই আটক করা হয়। পরে আটক সবাইকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে টাইমস অব ইন্ডিয়া জানিয়েছে।

বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশের এই আচরণের সমালোচনা করেছেন বিরোধী দল কংগ্রেসের নেতা রাহুল গান্ধী। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে তিনি লেখেন, “বিশুদ্ধ বাতাস পাওয়া একটি মৌলিক মানবাধিকার। শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সংবিধানেই নিশ্চিত। তাহলে নাগরিকরা বিশুদ্ধ বাতাসের দাবিতে রাস্তায় নামলে তাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করা হচ্ছে কেন?”

দিল্লির পরিবেশমন্ত্রী মানজিন্দার সিং সিরসা বলেন, সরকার দূষণ কমাতে সব ধরনের প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। “দূষণমুক্ত দিল্লির জন্য সম্ভাব্য সব ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এটা আমাদের সরকারের প্রতিশ্রুতি,” এক বিবৃতিতে তিনি জানান।

প্রতি বছর শীত এলেই দিল্লি ও আশপাশের অঞ্চলে দূষণের মাত্রা ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়। ঠাণ্ডা, ভারি বাতাসে যানবাহনের ধোঁয়া, নির্মাণকাজের ধুলা, পোড়ানো ফসলের ধোঁয়া একত্রে জমে ঘন ধোঁয়াশার সৃষ্টি করে। এতে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ছড়িয়ে পড়ে শহরজুড়ে। গত মাসে কর্তৃপক্ষ ‘ক্লাউড সিডিংয়ের’ মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে বৃষ্টি ঘটিয়ে দূষণ কমানোর চেষ্টা করেছিল, তবে তা ব্যর্থ হয়।

বিশ্বব্যাপী বায়ু মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউএয়ারের তথ্যমতে, বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত রাজধানীগুলোর তালিকায় নয়া দিল্লি শীর্ষে।