ফুলবাড়িয়ায় দুর্বৃত্তদের নাশকতায় বাসে আগুন

এফএনএস (মোঃ আসাদুজ্জামান আসাদ; ফুলবাড়িয়া, ময়মনসিংহ) : | প্রকাশ: ১১ নভেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫০ পিএম
ফুলবাড়িয়ায় দুর্বৃত্তদের নাশকতায় বাসে আগুন

ফুলবাড়িয়ায় বাসে দুর্বৃত্তদের নাশকতায় আগুনে পুড়ে অঙ্গার গাড়ির চালক। আহত হয়েছে গাড়িতে থাকা দুইযাত্রী। সোমবার রাত প্রায় সাড়ে ৩ টার দিকে ভালুকজান ইসলাম ফিলিং স্টেশনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা আলম এশিয়া প্রাইভেট পরিবহন নামের একটি বাস গাড়িতে দুর্বৃত্তরা দাহ্য পদার্থ ছিটিয়ে আগুন জালিয়ে দেয়। মহুর্তেই গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পরে।

পরে ঘুমিয়ে থাকা অবস্থায় চালক জুলহাসউদ্দিন (৩৫) পুড়ে মারা যায়। এসময় গাড়িতে থাকা দুই যাত্রী শারমিন সুলতানা রুমকি (৩৮) ও তার ছেলে শাহিদ ইসলাম বাদশা (২০) গাড়ির জানালা ভেঙ্গে বের হতে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। বাসে আগুন দেওয়ার খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের একটি দল ঘটনাস্থলে এসে প্রায় ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনেন। পরে গাড়ির ভিতর থেকে একটি পুড়া লাশ উদ্ধার করে পুলিশের কাছে  হস্তান্তর করেন। পুড়ে অঙ্গার হয়ে যাওয়া লাশের পরিচয় নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। তবে ধারণা করছে পুড়ে যাওয়া লাশটি গাড়ি চালক জুলহাসউদ্দিনের। সকাল ৬ টার দিকে ময়মনসিংহ থেকে রেকার গাড়ি এনে পুড়ে যাওয়া বাসগাড়ি টি উদ্ধার করে ফুলবাড়িয়া থানায় নিয়ে আসে। লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করেছেন। দুর্বৃত্ততের আগুনে একজন মারা যাওয়ার খবর ছড়িয়ে পরলে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতংকের সৃষ্টি হয়।

ভালুকজান গ্রামের আঃ বারেকের একমাত্র ছেলে জুলহাসউদ্দিন। দেড় বছর যাবৎ গাড়ির চালক হিসেবে লাইসেন্স করে ফুলবাড়িয়া-ঢাকা সড়কে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। এর আগে তিনি প্রায় ১০ বছর গাড়ির হেলপাড় ছিলেন। গত এক মাস আগে আলম এশিয়া ঢাকা মে্েট্রা ব-১৪-১৪ ১৮ নম্বরে গাড়িটি চালাচ্ছিলেন। প্রতিদিনের ন্যায় সোমবার রাতে ঢাকা মহাখালি থেকে যাত্রী নিয়ে ফুলবাড়িয়া আসেন। বাস স্টেশনে সকল যাত্রী নামিয়ে দেয়। গাড়ি রাখার জায়গানা থাকায় দুই জনযাত্রী সহ ভালুকজান ইসলাম ফিলিং স্টেশন সামনে গাড়িটি রাখে। ঘটনাস্থল থেকে জুলহাসের বাড়ি প্রায় ৩শ মিটার দূরে। রাত সাড়ে তিনটার দিকে দুর্বৃত্তরা গাড়িতে আগুন দেয়। স্থানীয়দের ধারণা দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের আগামী ১৩ নভেম্বর ঢাকা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যে আতংক সৃষ্টি করতেই এঘটনা ঘটাতে পারে। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টারদিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছেন ময়মনসিংহ পুলিশ সুপার কাজী আখতারউল আলম, উপজেলা নির্বাহীকর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলামসহ আইনশৃঙ্খলা বাহীনর একাধিক দল। পুলিশ বলছে, মানুষের মাঝে আতংক ও নাশকতা সৃষ্টি করতেই গাড়িতে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। সিসিটিভির ফুটেজে দেখা গেছে মুখোশদারী তিনজন যুবক কয়েক সেকেন্ডরে মধ্যে গাড়িতে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন দিয়ে চলে যায়।

পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শ ও  স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, সোমবার রাতে ঢাকার মহাখালি থেকে ফুলবাড়িয়ার উদ্যোশে ছেড়ে আসে আলম এশিয়া বাসগাড়িটি। ফুলবাড়িয়া বাসস্টেশনে যাত্রী নামীয়ে গাড়িটি পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ড ভালুকজান ইসলাম ফিলিং স্টেশন সংলগ্নপূর্ব পাশে কেশরগঞ্জ-ফুলবাড়িয়া সড়কে পাকিং করে রাখে। গাড়িতে দুইজন যাত্রী সহ দরাজা জানালা বন্ধ করে গাড়ির সিটে ঘুমিয়ে পরে চালক। মঙ্গলবার সকালে ঢাকার উদ্যোশে যাবেন। দুই যাত্রীর বাড়ি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামের। গভীর রাত হওয়ায় দুই যাত্রী গাড়িতেই রাত্রীযাপন করেন। গাড়িতে আগুন দেওয়ার পর মা-ছেলে পিছনের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে গাড়ি থেকে লাফিয়ে পড়েন। মা শারমিন সুলতানা রুমকি গুরুতর আহত হয়। আহত নারীকে উদ্ধার করে প্রথমে ফুলবাড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালে পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে, তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা স্থানান্তর করা হয়।

তাদের বাড়ি উপজেলার চকরাধাকানাই গ্রামে। গভীর রাত হওয়ায় তারা গাড়ির পিছনের সিটেবসে থাকেন, চালক দরজা জানালা বন্ধ করে সামনে ঘুমিয়ে পরে। হঠাৎ করে দেখতে পায় গাড়ির সামনে জানালার পর্দায় ও ভিতরে আগুন জ্বলছে। লাথি দিয়ে জানালার কাঁচ ভেঙ্গে তারা নিচে লাফিয়ে পড়ে যায়।

পৌর বিএনপির আহব্বায়ক এ কে এম শমসের আলী বলেন, বাসে আগুন দিয়ে হত্যার ঘটনাটি অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক ঘটনা। কার্যক্রম নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে ফুলবাড়িয়ায়। আগামী ১৩ নভেম্বর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একটি মামলার রায় ঘোষনা হতেপারে, সে কারনে দেশ অস্থিতিশীল সৃষ্টি ও মানুষের মাঝে আতংক তৈরি করতে এই পরিকল্পিত ভাবে  এঘটনা ঘটানো হয়েছে।

উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ডাঃ আঃ রাজ্জাক বলেন, দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে এঘটনা ঘটিয়েছে। এরকম ঘটনা কোনভাবেই কাম্য না। এসব নাশকতা বন্ধ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও শতর্ক থাকতে হবে। তদন্ত করে দ্রুত জড়িতদের গ্রেপ্তার করে  শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

বাস মালিক সোহাগ বলেন, ঢাকা থেকে রাতে ফুলবাড়িয়া গাড়ি নিয়ে আসেন ড্রাইভার। ভোরসকালে স্থানীয় একজনের মাধ্যমে খবর পাই আমার বাসগাড়িতে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এরপর থেকে ড্রাইভার জুলহাসকে ফোনে পাচ্ছিলামনা। ইঞ্জিনের কাছ থেকে   যেহেতু পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া একটি লাশউদ্ধার করা হয়েছে, ধারণা করছি লাশটি আমার ড্রাইভারের হবে।

জুলহাসের মা  শাজেদা বেগম বলেন, প্রায় ২৫ বছর আগে আমার স্বামী ছেলেকে রেখে চলে যায়, মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে ছেলেকে বড় করেছি। দুনিয়াতে আমাকে দেখার মতো আর কেউ নেই, একমাত্র ছেলেই আমাকে দেখাশোনা করতো। সংসারের একমাত্র উপার্জন সক্ষম ব্যক্তি জুলহাস। এক বছর হলো জুলহাস বিয়ে করেছে। । কেন আমার ছেলেকে এভাবে পুড়িয়ে মারলো ? আমার ছেলের হত্যার বিচার চাই।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেছি, খুবই মর্মন্তিক একটি ঘটনা। পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে। দেখে বুঝার উপায় নেই লাশটি কার, নিশ্চিত হতে পারলে নিহতের পরিবারকে অর্থনৈতিক সহযোগীতা করা হবে।

ফুলবাড়ীয়া থানার ওসি রুকনুজ্জামান বলেন, রাত সাড়ে তিন টার দিকে খবর পাই ভালুকজান বাজারে বাসে আগুন লেগেছে, ফায়ারসার্ভিস একটি দল এসে আগুন নিয়ন্ত্রণ করার পর ভিতর থেকে একটি পুড়া লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট তদন্ত করছে এ ঘটনার সাথে জরিতদের দ্রুত গ্রেফতারে মাধ্যমে আইনের আওতায় আনা হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে