অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শষ্যাশয়ী শিক্ষক : মেলেনি অবসর ভাতা

এফএনএস (বরিশাল প্রতিবেদক) :
| আপডেট: ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০১ পিএম | প্রকাশ: ১২ নভেম্বর, ২০২৫, ০১:০১ পিএম
অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শষ্যাশয়ী শিক্ষক : মেলেনি অবসর ভাতা

অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শষ্যাশয়ী একজন সৎ ও আদর্শবান শিক্ষক মিজানুল হক। অবসর গ্রহনের তিন বছর অতিবাহিত হলেও এখনও মেলেনি তার অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ।

বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলার সদরের ঐতিহ্যবাহী ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমির ইংরেজি শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক মো. মিজানুল হক ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর অবসরে যাওয়ার পর অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের অর্থ না পাওয়ায় দীর্ঘদিন থেকে চরম অর্থকস্টে দিনাতিপাত করছেন।

বর্তমানে ডায়বেটিক, হাই প্রেসার, কিডনী ড্যামেজসহ নানান জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শষ্যাশয়ী রয়েছেন। সৎ ও মেধাবী শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর মিজানুল হক তার দুই চোখে দেখতে পারছেন না। ফলে এখন অন্যের সাহায্য ছাড়া তিনি চলাচলও করতে পারছেন না। মেয়ে জামাতা ও শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় শিক্ষক মিজানুল হকের ওষুধের পাশাপাশি ডায়ালাইসিস চলছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন-শিক্ষকতা পেশায় দীর্ঘ ৩০ বছর সুনামের সাথে চাকরি করে অবসরে যাওয়ার তিন বছরের অধিক সময় পার হলেও অবসর ভাতা ও কল্যান ফান্ডের ৩০ লক্ষাধিক টাকা সময় মতো পেলে শিক্ষক মিজানুল হক সু-চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ স্বাভাবিক জীবন পেতো। অবসর ভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের প্রাপ্ত টাকা না পাওয়ায় এখন শষ্যাশয়ী হয়ে তিনি মৃত্যুর প্রহর গুনছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে-অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা গ্রহণ করতে না পারায় শিক্ষক মিজানুল হক তার একমাত্র বিবাহিতা মেয়ে সামিয়া আক্তারের ঢাকার পল্লবীর বাসায় শষ্যাশয়ী রয়েছেন।

মো. মিজানুল হক আগৈলঝাড়া ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছেন। তিনি একটানা ৩০ বছর বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। ২০১৯ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে তিনি একই বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর তিনি অবসরগ্রহণ করেন।

পরবর্তীতে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মহাপরিচালকের বরাবরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেন। অবসরকালীন সময় তিনি নবম গ্রেডপ্রাপ্ত ছিলেন। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে তিনি অষ্টম গ্রেড থেকে বঞ্চিত হয়েছেন।

সূত্রে আরও জানা গেছে-২০০৮ সালে শিক্ষক মিজানুল হকের একমাত্র ছেলে বরিশাল বিএম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ইমরান হোসেন আত্মহত্যা করেন। ছেলের শোকে তার স্ত্রী সাজেদা খানমও মানসিকভাবে ভেঙে পরেন।

আগৈলঝাড়ার ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমীর সিনিয়র শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন-শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘদিন মিজানুল হক স্যারের সাথে কাটিয়েছি। তিনি অত্যান্ত ভাল মনের মানুষ। তার এই দুর্দীনে অবসরভাতা ও কল্যান ফান্ডের টাকা প্রয়োজনের সময় যদি না পান, তাহলে মৃত্যুর পরে সেই টাকা পেয়ে কি লাভ।

শিক্ষক মিজানুল হকের মেয়ে সামিয়া আক্তার বলেন-আমার বাবা অবসরে যাওয়ার পর থেকে অসুস্থ অবস্থায় আমার কাছে ঢাকায় রয়েছেন। আমি সাধ্যমত চিকিৎসা করাচ্ছি। কিন্তু অর্থাভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছিনা। বাবার উন্নত চিকিৎসার জন্য তার অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা যেন দ্রুত পেতে পারি সেজন্য সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোরদাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে আগৈলঝাড়া উপজেলা শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফারহানা আক্তার বলেন, শিক্ষক মিজানুল হক স্যারেরপ্রাপ্ত অবসরভাতা ও কল্যাণ ফান্ডের টাকা যেন দ্রুত পেয়ে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেন সেজন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

উল্লেখ্য, মিজানুল হক ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর অবসরগ্রহণের পর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর অবসরকালীন ভাতা পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু এখন তিনি তার প্রাপ্ত ভাতার টাকা পায়নি।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে