অগ্নিনির্বাপন সরঞ্জামের অপ্রতুলতায় ঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের গুদাম। বেনাপোল স্থলবন্দরের গুদাম বা পণ্যাগারে বিগত এক দশকে আটবার আগুন লেগেছে। আর আগুন লাগার পরপরই প্রতিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোলের অধিকাংশ গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ডে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ সরঞ্জাম। কিন্তু বন্দরে স্থান সংকটের কারণে আমদানীকৃত অতি দাহ্যপণ্য সাধারণ পণ্যের সঙ্গে রাখা হয়। তাতে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ছে। সমপ্রতি স্থলবন্দরের গুদামগুলো বেনাপোল ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি প্রতিনিধি দল পরিদর্শন করেছে জানিয়েছে, বন্দরের অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা অপ্রতুল। দাহ্য পদার্থ কীভাবে রাখতে হয় তার সঠিক দিকনির্দেশনা ও প্রয়োজনীয় অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতের সুপারিশ করা হয়েছে। বেনাপোল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং বন্দর ব্যবহারকারীদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বেনাপোল স্থলবন্দরের গুদামে বিগত ১০ বছরে আটবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম না থাকায় বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই আগুন নেভাতে ব্যর্থ হয়েছে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে। তবে তার আগেই আমদানি করা মূল্যবান পণ্য পুড়ে যায়। আর আগুনে পণ্য পুড়লেও আমদানিকারকরা ক্ষতিপূরণ পাননি। বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে ৩৮টি গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ড রয়েছে। সেগুলোর মোট ধারণক্ষমতা ৪৭ হাজার ৪৪০ টন পণ্য। কিন্তুপ্রায় দেড় লাখ টন পণ্য রাখা হচ্ছে। আর গাদাগাদি করে পণ্য রাখার কারণে অগ্নিঝুঁকি আরো প্রকট হয়েছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে বেনাপোল স্থলবন্দরে আমদানিকৃত অতি দাহ্য ও সাধারণ পণ্য কাছাকাছি রাখা হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে ড্রামভর্তি ডাইস বা রঙ, বস্তা ভরা রেইজিং পাউডার ও ছাপাখানার কালিসহ বিভিন্ন পণ্য। তাছাড়া মোটরগাড়ির ইঞ্জিন তেলসহ (লুব্রিক্যান্ট) বিভিন্ন দাহ্যপণ্যও এলোমেলোভাবে রাখা হয়েছে। একই অবস্থা ২৯ নম্বর গুদাম ও খালি ট্রাক টার্মিনাল এলাকায়ও। ওসব জায়গায় আগুন নেভানোর কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। যদিও গুদামের পাশেই রয়েছে বহনযোগ্য অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র (এক্সটিংগুইশার)। বিগত ২০১৬ সালের অক্টোবর বেনাপোল বন্দরের ২৩ নম্বর গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটে। তাতে গুদামে রাখা তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন শিল্পের আমদানি করা কাপড়, ডাইস (রঙ), বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক, শিল্পের যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ, মোটরগাড়ির যন্ত্রাংশ, ফাইবার, মশা তাড়ানো স্প্রে, তুলা, কাগজসহ কোটি কোটি টাকা বিভিন্ন ধরনের পণ্য পুড়ে যায়। তখন তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও ব্যবসায়ীরা কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি।
সূত্র আরো জানায়, বেনাপোল স্থলবন্দরের প্রতিটি গুদাম ও ওপেন ইয়ার্ড অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিতে রয়েছে। সেজন্য নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো জরুরি। এমনকি বন্দরে যেকোনো ধরনের নাশকতার আশঙ্কা উড়িয়ে দেয়া যায় না। পাশাপাশি বন্দরে পণ্য রাখার জায়গা বাড়াতে হবে। অতি দাহ্যপণ্য নিরাপদ স্থানে রাখতে প্রয়োজন। তাছাড়া বন্দরে আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থা থাকাও জরুরি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, গত কয়েক বছরের অগ্নিকাণ্ডে অনেক ব্যবসায়ী সর্বস্বান্ত হয়েছে। বারবার বলার পরও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। এমনকি রহস্যজনক কারণে গুদামে থাকা পণ্যের বীমাও করা হয় না। যদিও ব্যবসায়ীরা সরকারকে রাজস্ব দিচ্ছে, বন্দরের ভাড়া দিচ্ছে অথচ তাদের আমদানি করা পণ্যের নিরাপত্তা মিলছে না। বন্দর এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা ও পুরো বন্দর সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা জরুরি।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক শামিম হোসেন রেজা জানান, বন্দরের প্রতিটি গুদামেই ফায়ার হাইডেন পয়েন্ট ও ফায়ার পাম্প রয়েছে। তার পরও অগ্নিঝুঁকি নেই এ কথা বলা যাবে না। তবে যেকোনো ধরনের নাশকতার চেষ্টা ঠেকাতে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।