শেখ হাসিনার রায়ের তারিখ ঘিরে ট্রাইব্যুনালে সেনা-পুলিশ-বিজিবির সতর্ক পাহারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৪৭ এএম
শেখ হাসিনার রায়ের তারিখ ঘিরে ট্রাইব্যুনালে সেনা-পুলিশ-বিজিবির সতর্ক পাহারা

চব্বিশের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের রায়ের দিন নির্ধারণকে কেন্দ্র করে ঢাকায় নেওয়া হয়েছে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল থেকেই রাজধানীর হাইকোর্ট মাজারসংলগ্ন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এলাকায় মোতায়েন রয়েছে বিপুলসংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য।

ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় সেনাবাহিনী, র‍্যাব, পুলিশ, বিজিবি ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দাদের অবস্থান দেখা গেছে। সকাল থেকেই ট্রাইব্যুনালে প্রবেশের সময় তল্লাশি চালিয়ে সাংবাদিক ও দর্শনার্থীদের ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, সম্ভাব্য যেকোনো উসকানিমূলক কার্যকলাপ বা নাশকতা ঠেকাতে নেওয়া হয়েছে সর্বাত্মক প্রস্তুতি।

বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ আজ রায়ের তারিখ ঘোষণা করবে। ট্রাইব্যুনালের অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। গত ২৩ অক্টোবর মামলার যুক্তিতর্ক শেষে এই দিন ধার্য করা হয়।

অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করেন। তিনি বলেন, “বিশ্বের বিভিন্ন দেশে হেভিওয়েট নেতাদের মতো তারাও মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য জবাবদিহির বাইরে নন।” অন্যদিকে স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী আমির হোসেন আসামিদের নির্দোষ দাবি করে খালাস চান।

মামলায় পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে—উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুল হত্যাকাণ্ড এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানো। প্রসিকিউশনের আনুষ্ঠানিক অভিযোগনামা আট হাজারের বেশি পৃষ্ঠার। সাক্ষ্য দিয়েছেন ৮৪ জন, যাদের মধ্যে সাবেক আইজিপি আবদুল্লাহ আল-মামুন রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন।

রায়ের দিন ঘিরে নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এতে শহরের নানা স্থানে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণসহ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির আশঙ্কায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার জানিয়েছেন, রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। পাশাপাশি সেনাবাহিনী, বিজিবি ও এপিবিএনও টহলে রয়েছে।

রাজধানীর প্রধান সড়কগুলোয় সকাল থেকে টহল জোরদার করা হয়েছে। বাংলামোটর, শাহবাগ, ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড় ও হাইকোর্ট এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে অতিরিক্ত চেকপোস্ট। গণপরিবহনের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও সার্বিক পরিস্থিতি ছিল শান্ত।

ট্রাইব্যুনালের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, “রায় ঘোষণার দিন যেন কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না হয়, সেজন্য নিরাপত্তা এমনভাবে সাজানো হয়েছে যাতে আদালতের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়।”

রায়ের তারিখ ঘোষণার পর মামলার পরবর্তী ধাপ নির্ধারিত হবে। সবার চোখ এখন ট্রাইব্যুনালের দিকে—এই মামলায় শেখ হাসিনার পরিণতি কী হতে যাচ্ছে, সেটিই জানা যাবে আজ।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে