মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনা হলো রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনকে

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৩ নভেম্বর, ২০২৫, ১১:৫৯ এএম
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালে আনা হলো রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি মামুনকে
ফাইল ছবি

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অন্যতম আসামি থেকে রাজসাক্ষী হওয়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আনা হয়েছে। এ মামলায় পলাতক রয়েছেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সকাল ৯টার পর কড়া নিরাপত্তায় কারাগার থেকে প্রিজনভ্যানে করে মামুনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ।

ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এদিন মামলার রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারণ করা হবে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, শেখ হাসিনা ও তার দুই সহযোগীর বিরুদ্ধে এ মামলাটি বর্তমানে রায়ের অপেক্ষার তালিকায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত।

বছরখানেক ধরে কারাগারে থাকা সাবেক আইজিপি মামুন সম্প্রতি রাজসাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালে তার সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনার পেছনের পরিকল্পনা, নির্দেশনা ও দমন-অভিযানের বিবরণ উঠে আসে। প্রসিকিউশন জানায়, রাজসাক্ষী হিসেবে মামুনের জবানবন্দির পর তার শাস্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান কামালের সর্বোচ্চ শাস্তি চাওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের পক্ষ থেকে।

গত ২৩ অক্টোবর ২৮ কার্যদিবসব্যাপী সাক্ষ্য-জেরা ও যুক্তিতর্ক শেষে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের সমাপনী বক্তব্য সম্পন্ন হয়। ওই দিন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের বৈশ্বিক উদাহরণ তুলে ধরে বলেন, “অতীতে অনেক প্রভাবশালী রাষ্ট্রনেতাকেও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে, বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়।” এরপর রাষ্ট্রনিযুক্ত ডিফেন্স আইনজীবীর যুক্তির জবাবে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম পাল্টা বক্তব্য দেন।

মামলার তদন্ত প্রতিবেদন গত ১২ মে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জমা দেয়। এরপর ১ জুন রাষ্ট্রপক্ষ শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে এবং ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু হয়। পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে গণহত্যা এবং আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনা।

মোট আট হাজার সাতশ সাতচল্লিশ পৃষ্ঠার মামলার অভিযোগপত্রে দালিলিক প্রমাণ, জব্দতালিকা ও শহীদদের নামসহ রয়েছে বিশদ বিবরণ। সাক্ষ্য দিয়েছেন মোট চুরাশি জন। ৩ আগস্ট প্রথম সাক্ষী খোকন চন্দ্র বর্মণ ট্রাইব্যুনালে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের সময়কার সহিংসতার ভয়াবহতা বর্ণনা করেন। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয় ৮ অক্টোবর তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরের জেরার মধ্য দিয়ে।

রায় ঘোষণার দিন সামনে রেখে আজ আদালতপাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। সকাল থেকেই বিজিবি, ডিএমপি ও এপিবিএন সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। আদালত এলাকায় অবস্থান করছে সাঁজোয়া যানও।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে