কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ঘোষিত ‘ঢাকা লকডাউন’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সারা দেশে সহিংসতা, আগুন দেওয়া, অবরোধ ও নাশকতার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) সকাল পর্যন্ত রাজধানীসহ অন্তত সাতটি স্থানে গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়, রেললাইনে গাছ ফেলে ট্রেন চলাচল ব্যাহত করার চেষ্টা হয়, পাশাপাশি সড়ক অবরোধের মাধ্যমে যান চলাচলে বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়।
ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ জানিয়েছে, বুধবার রাত ১২টার পর থেকে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সাত ঘণ্টায় ঢাকাসহ টাঙ্গাইল, মুন্সিগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরে সাতটি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। আগুন লাগার ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে কমলাপুর রেলস্টেশনের সামনে লেগুনা, মিরপুরে ট্রাস্ট পরিবহনের বাস, টাঙ্গাইলের বারইখোলা এলাকায় যাত্রীবাহী বাস, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, গোপালগঞ্জ ও শরীয়তপুরের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক ও পিকআপে আগুন দেওয়া। এসব ঘটনায় হতাহতের কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।
টাঙ্গাইলের বাসাইল উপজেলার বাঐখোলা এলাকায় রাত সাড়ে ১২টার দিকে পাবনাগামী ‘বাংলা স্টার’ বাসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়দের বরাতে পুলিশ জানিয়েছে, যাত্রীরা নিরাপদে বের হয়ে এলেও বাসটি পুরোপুরি পুড়ে যায়। টাঙ্গাইল ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
একই রাতে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলায় দুর্বৃত্তরা একটি চিনি বোঝাই ট্রাকে আগুন দেয় এবং পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করে। এ সময় ঝটিকা মিছিল নিয়ে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধের চেষ্টা করে কার্যক্রম নিষিদ্ধ দলটির নেতাকর্মীরা। পরে হাইওয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার শুয়াদী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভোর ৬টার দিকে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে দুই পাশে দীর্ঘ যানজট তৈরি হয় এবং যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সমর্থিত কয়েকজন লকডাউনের সমর্থনে সড়কে অবস্থান নেয়, পরে আরও অনেকে যোগ দিলে পুরো সড়ক অবরুদ্ধ হয়ে যায়।
রেল যোগাযোগেও নাশকতার চেষ্টা চালানো হয়। ফেনীর মহেশপুর এলাকায় রাতে দুর্বৃত্তরা গাছ কেটে রেললাইনে ফেলে দেয়। তবে রেলওয়ের টহল দল তাৎক্ষণিকভাবে গাছের গুঁড়ি সরিয়ে নেওয়ায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ জানিয়েছে, বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রাজধানী ঢাকায়ও উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বুধবার সন্ধ্যার পর ট্রেন ও বাসে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে, পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় হাতবোমা বিস্ফোরণ হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জানিয়েছে, ঢাকাজুড়ে ১৭ হাজার পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে। পাশাপাশি বিজিবি ও সেনাবাহিনীও নিরাপত্তা দায়িত্বে আছে।
নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে রাজধানী ঢাকাসহ আশপাশের জেলায় ১৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। বিজিবির গণসংযোগ কর্মকর্তা শরিফুল ইসলাম বলেন, “রাজধানী ও আশপাশের এলাকায় সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিজিবি সদস্যরা সকাল থেকেই দায়িত্ব পালন করছেন।”
বৃহস্পতিবারের এই কর্মসূচি ঘিরে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্র জানিয়েছে, দেশের সব বিমানবন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দপ্তর এবং ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসও সর্বোচ্চ প্রস্তুত রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত সারাদেশে কোনো প্রাণহানির খবর পাওয়া যায়নি।