আধুনিক নির্মাণ স্থাপত্যের চাকচিক্যতার আড়ালে ভয়াবহ অনিয়ম দুর্নীতি। কাজের শুরুতেই কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। দৃষ্টিনন্দন এই মসজিদ শুধু মসজিদই নয়, এটি ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র। এই কমপ্লেক্স ভবনের প্রতিটি ইটের গাঁথনিতে রয়েছে অবহেলা-অনিয়মের ছাপ। ওপেন স্পেস থেকে ছাদ ফেটে নিচে পানি পড়া থেকে শুরু করে নিন্ম মানের নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে মন্থরগতিতে চলা কাজে ব্যাপক অসঙ্গতি দৃশ্যমান।’
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির লংগদু উপজেলা মডেল মসজিদ নির্মাণকাজে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠলেও ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ নীরব। সরকারের গণপূর্ত বিভাগের প্রকৌশল শাখার নির্লিপ্ততায় কাজের গুণগত মান খারাপ হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। যাদের সংশ্লিষ্টতার অভাবে কাজের মান খারাপ হয়েছে, তাদেরকে চিহ্নিত করে শাস্তির আওতায় আনার দাবি উঠেছে। ইতোমধ্যে মডেল মসজিদকে ঘিরে মুসল্লিদের মাঝে হতাশার সুর ধ্বনিত হচ্ছে। মসজিদ নির্মাণে দৃশ্যত প্রতিটি কাজে ভয়াবহ ত্রুটিপূর্ণতা রয়েছে। ১৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মডেল মসজিদটিতে নিম্নমানের কাজ হয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা। যার ফলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা করছেন। এরই মধ্যে মসজিদের ছাদে ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি উচু-নিচুর কাজে ভয়াবহ দুর্নীতির প্রমাণ দিচ্ছে। ছাদের একটি অংশে কংক্রিট খসে পড়ে ভেতরের ইটের গাঁথুনি বেরিয়ে এসেছে, এ নিয়ে অভিযোগ ওঠার পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জোড়াতালি দিয়ে দুর্নীতির ক্ষত আড়াল করার চেষ্টা করেন। মসজিদের ছাদ ঢালাইয়ে ডিজাইন অনুযায়ী পুরুত্ব কতটা ঠিক আছে-জনমনে সে প্রশ্নটিও এখন জেগেছে। মসজিদের নির্মাণকাজে শুরু থেকে ধীরগতি একটি বড় সমস্যা ছিল। ফলশ্রুতিতে স্থানীয়ভাবে কাজের মনিটরিং তেমন একটা হয়নি।
স্থানীয় মুসল্লিরা জানান, একটি নিরপেক্ষ প্রকৌশল বিভাগ দ্বারা সরেজমিন তদন্ত করানো হলে মডেল মসজিদ নির্মাণে অনিয়মের ভয়াবহতা ধরা পড়বে। তারা মনে করেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জনগণের স্বপ্নের এই উন্নয়ন প্রকল্পটিকে যেন ‘দুর্নীতির দুঃস্বপ্ন হিসেবেই দেখানোর চেষ্টা করছে'। নির্মাণশৈলীর নান্দনিক স্থাপত্য এই মডেল মসজিদ ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রও বটে।
স্থানীয় যুবক রহমান জানান, কাজে ছোট বড় অনেকগুলো ত্রুটি রয়েছে। এসব ত্রুটিগুলো কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
অনিয়মে বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক পলাশ বলেন, ফাউন্ডেশন হতে দ্বিতীয় তলা আমি আসার আগে হয়েছে তাই এব্যাপারে আমি জানিনা। তবে তৃতীয় তলা উপরের অংশ আমি করতেছি যদি ওখানো কোন সমস্যা হয়ে থাকে সেটা আমি দায় নিব। তবে সরজমিনে তৃতীয় তলার কাজ পরিদর্শন করলে সেখানেও অনিয়মের ছাপ উঠে আসে। সেবিষয়ে তিনি মিস্ত্রিদের উপর দায় চাপিয়ে দেন।
এসব অনিয়মের বিষয়ে গণপূর্ত বিভাগ রাঙামাটির সহকারী প্রকৌশলী শর্মী চাকমা জানান, ‘প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো অনিয়ম হলে কাজ বুঝে নেব না। ছোটখাটো কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে। সেগুলো সমাধানের চেষ্টা চলছে।’ তিনি আরও জানান, বিদ্যমান ত্রুটিগুলো নোট করে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে, তিনি সেটা ধরে কাজ করিয়ে নেবেন।
তবে এসব অনিয়মের ব্যাপারে ঠিকাদার মো. সেলিম বললেন উল্টো কথা। তিনি জানান, এলাকাবাসীর বারবার অভিযোগের কারণে কাজে ধীর গতি হয়েছে। এছাড়া সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন তিনি।
এদিকে ইসলামিক ফাউন্ডেশন দায়িত্বপ্রাপ্ত একজন জানান, উপজেলা মডেল মসজিদের যাবতীয় সমস্যা এবং নির্মাণকাজে নানা ত্রুটি-অনিয়মের বিষয়ে জানার বা বুঝে নেওয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা নিয়মিত মনিটরিং করছি।
লংগদু উপজেলা প্রকৌশলী শামসুল আলম জানান, এ ধরনের অনিয়ম হওয়ার কথা না। তবে ত্রুটি থাকলে তা সুষ্ঠুভাবে করে দিতে ঠিকাদারের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসাইন জানান, এখনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান পূর্ণাঙ্গ কাজ করে আমাদেরকে বুঝিয়ে দেননি। তিনি আরও বলেন, অসম্পন্ন কিংবা ত্রুটিপূর্ণ কাজ আমরা বুঝে নেব না। ত্রুটিগুলো কী, কেমন-সে দিকগুলো তালিকা করে তাঁকে দেয়া হবে। সুতরাং কাজের অনিয়ম থাকলে সেটি ঠিক মতো আদায় করে নেব।