শ্রীনগরের কাছে নওগাম থানায় জব্দ করে রাখা বিপুল বিস্ফোরক পরীক্ষার সময় ভয়াবহ বিস্ফোরণে অন্তত ৯ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের বেশিরভাগই পুলিশ সদস্য ও ফরেনসিক দলের কর্মকর্তা, যারা বিস্ফোরকগুলো পরীক্ষা করছিলেন। শ্রীনগর প্রশাসনের দুই কর্মকর্তাও ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) গভীর রাতে।
নওগাম থানাটি সাম্প্রতিক সময়ে জইশ ই মোহাম্মদের পোস্টার চক্রের তদন্তে আলোচনায় ছিল। ওই পোস্টারগুলোর সূত্র ধরে কয়েক সপ্তাহ আগে জম্মু কাশ্মীর, দিল্লি ও হরিয়ানায় ব্যাপক অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। সেই অভিযানে উদ্ধার করা বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক হরিয়ানার ফরিদাবাদ থেকে এনে এই থানায় সংরক্ষণ করা হয়েছিল। শুক্রবার রাতে সেই বিস্ফোরক পরীক্ষা করতে গিয়েই ঘটে এই মর্মান্তিক বিস্ফোরণ।
ঘটনার পরপরই ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯২ বেস হাসপাতাল এবং শের ই কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে আহতদের নিয়ে যাওয়া হয়। বেশ কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এলাকায় পৌঁছে গেছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, পুরো থানা এলাকা ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
এই নওগাম থানা থেকেই প্রথম উন্মোচিত হয় জইশ ই মোহাম্মদের পোস্টার লাগানোর ঘটনা। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে গ্রেপ্তার করা হয় চিকিৎসক আদিল আহমদ রাঠেরকে, যিনি গত বছরের অক্টোবরে পর্যন্ত অনন্তনাগ সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। রাঠেরের গ্রেপ্তারের পর তদন্তে বেরিয়ে আসে উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীদের যুক্ত হয়ে গড়ে ওঠা একটি সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক, যারা পাকিস্তানসহ বিদেশি নির্দেশনাদাতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কার্যক্রম পরিচালনা করত।
রাঠেরকে জিজ্ঞাসাবাদের পর উঠে আসে আরও এক চিকিৎসক মুজাম্মিল শাকিলের নাম, যিনি হরিয়ানার আল ফালাহ মেডিকেল কলেজে কাজ করতেন। তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাড়িতে চালানো অভিযানে প্রায় তিন হাজার কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করা হয়। এরপর গ্রেপ্তার হন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক চিকিৎসক শাহীন সাঈদ।
এই নেটওয়ার্কের সূত্রেই উঠে আসে দিল্লির লালকেল্লার কাছে গাড়িবোমা বিস্ফোরণের ঘটনা, যেখানে প্রাণ হারান অন্তত ১৩ জন। সেদিনকার বিস্ফোরিত গাড়িটি চালাচ্ছিলেন চিকিৎসক উমর নবী। এনআইএ সূত্র জানায়, সহযোগীদের গ্রেপ্তারের পর আতঙ্কে নবী তৈরি করা আইইডিতে ভুল করেন এবং গাড়িতেই বিস্ফোরণ ঘটে।
বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক জব্দ, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক শনাক্ত ও ধারাবাহিক অভিযানের ঠিক মাঝখানে নওগাম থানার এই বিস্ফোরণ নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এখন তদন্তকারীরা খতিয়ে দেখছেন বিস্ফোরণের ধরন, পরীক্ষার সময় নিরাপত্তা প্রটোকল অনুসরণ করা হয়েছিল কি না এবং জব্দ বিস্ফোরকগুলো কীভাবে রাখা হয়েছিল। সূত্র: এনডিটিভি